শিরোনাম
‌‘গণমাধ্যম ও রাষ্ট্রের প্রতি ব্যাংকারদের দৃষ্টি আকর্ষণ’
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২০, ১৩:১৫
‌‘গণমাধ্যম ও রাষ্ট্রের প্রতি ব্যাংকারদের দৃষ্টি আকর্ষণ’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

COVID-19 ; এক অদৃশ্য বিষ!!! নভেল করোনাভাইরাসের এই ভীতিকর পরিস্থিতিতে যে গুটি কয়েকটি মহান পেশার পেশাজীবীগণ জাতীয় স্বার্থের দিকে তাকিয়ে জনসেবায় কর্মরত, আমরা-ব্যাংকার হিসেবে প্রতিদিন আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছি তন্মধ্যে।


এবছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনা সনাক্ত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ, চায়না ও ইতালির তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সামনে চলে আসে এর সম্ভাব্য প্রতিরোধের বিকল্পগুলো হতে উত্তম পন্থা খুঁজে বের করার চ্যালেঞ্জ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী , দেশরত্ন শেখ হাসিনা অতিদ্রুত সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের সব অফিস আদালত দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ করার। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল প্রথম পর্যায়ে, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৭ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল এবং সর্বশেষ ১১ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন তিনি। আহ্বান করেন সঙ্গরোধের। বলা হয় হোম কোয়ারেন্টিন এ থাকার জন্য।


সরকারি অফিস আদালত খোলা থাকলেও চিকিৎসা সেবায় দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বপালনকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যগন এবং জনগণের দৈনন্দিন অর্থের চাহিদা মেটাতে ও অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে ব্যাংকগুলো সীমিত পরিসরে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । সংশ্লিষ্ট সেক্টরের প্রত্যেকেই কাজ করছেন জনসেবাকে পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে স্বীকার করে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ।


বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ১০৫৮৩ শাখায় কয়েক লাখ কর্মকর্তা ও কর্মচারী জাতির এই ক্রান্তিকালে নিরলসভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ।সহস্র হতাশার মাঝে এতোটুকু স্বস্তির বিষয় হল বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণের হার এখনো পর্যন্ত বেশ সন্তোষজনক কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি বিগত ২ এপ্রিল থেকে হঠাৎ করে আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলছে ।এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, অনেকেই মানছেন না সরকার ঘোষিত সঙ্গরোধের পরামর্শ। ভিড় করছেন রাস্তায়, চায়ের দোকানে , পাড়ার গলিতে ,বাসে, ফেরিতে এমনকি ত্রাণ কর্মসূচীতেও ।


এ সময়গুলোতে যেসব স্থানে অধিক জনসমাগম হচ্ছে ব্যাংক তার মধ্যে প্রধানতম। সরকারের লক্ষ্য ছিল ব্যাংকে ভিড় কমিয়ে সেবা নিশ্চিত করা। তাই খোলা রাখার সময় ‘সীমিত পরিসর’ বলা হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন ব্যাংকের পরিসর বিস্তৃত করা হচ্ছে। প্রতিদিন ব্যাংক গ্রাউন্ডে শতশত লোক জমা হচ্ছেন সেবা নিতে। এরা কেউই মানছেন না সামাজিক দূরত্বের নিয়মাবলী । মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন কয়েক কোটি সাধারণ গ্রাহক ও আমাদের কয়েকলাখ ব্যাংককর্মী । আমাদের সহকর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের কিছু প্রার্থনা ও পরামর্শ আছে যা আপনাদের সদয় বিবেচনার জন্য তুলে ধরা হল !


১. ব্যাংকে লেনদেন করতে আসা কেউই কার্যত সামাজিক দূরত্বের পরামর্শ মানছেন না। ব্যাংকারদের অনুরোধ তারা শুনছেন না। যেহেতু ব্যাংকাররা পুলিশ নন, তারা কাউকে সামাজিক দূরত্ব মানতে বাধ্যও করতে পারছেন না। আমরা চাই, সামাজিক দূরত্ব যথাযথভাবে মেনে চলতে ব্যাংকগুলোতে জরুরী ভিত্তিতে পুলিশ ও সেনাসদস্য নিয়োজিত করা হউক।


২. শুরুতে ‘সীমিত পরিসর’ বলা হলেও ব্যাংকের সকল সেবাই ইতিমধ্যে চালু করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতি তে প্রতিনিয়ত বাড়ছে লোকসমাগম। সীমিত পরিসর বলতে শুধুমাত্র নগদ টাকা উত্তোলন, জমা ও বৈদেশিক রেমিটেন্স এর মধ্যেই সীমিত রাখা উচিত। সঞ্চয়পত্র, ডিডি, পে-অর্ডার, চালান, ভাতাপ্রদান, আরটিজিএস ইত্যাদি সেবা আবারো সীমিত করা হউক। উল্লেখ্য, সাধারণ ছুটির দুইদিন পরেই ক্লিয়ারিং (ব্যাচ) খোলা রাখায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সবশাখা খোলা রাখতে হচ্ছে।


৩. ইতালি ও আমেরিকার ব্যাংকারদের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে সেবা নিতে আসার আগে টেলিফোনে গ্রাহকদের সময় বুকিং নেয়ার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। একইভাবে সেবা নিতে আসা অপেক্ষাধীন গ্রাহকদের শাখার ভিতরে অযথা ঘুরাফেরা/অপেক্ষা না করে শাখার বাইরে অপেক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণ ব্যাংকমুখী হয়ে সমাগম এড়ানোর লক্ষ্যে এক মাসে একবারের বেশী টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেয়া আপাতত রদ করা যেতে পারে।


৪. এটিএম কার্ডধারী গ্রাহকদের চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের সুযোগ বন্ধ করে দিয়ে অনলাইনমুখী সেবার প্রতি উৎসাহিত করা যেতে পারে ।ব্যাংকসমূহ কে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের ই-ব্যাংকিং সুবিধার বাধা সমূহ দূর করে এসকল সেবা আরো জনপ্রিয় করতে প্রচার প্রচারণা চালানোর প্রতি মনোযোগী করা হউক ।একইভাবে ওয়ালেট ব্যাংকিং, এপস নির্ভর ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে এটিএম বুথ হতে নগদ অর্থ উত্তোলনের সুবিধা যুক্ত করা যেতে পারে।


৫. লকডাউন করা এলাকায় (যেমন; মিরপুর, বাসাবো, আজিমপুর, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ) ব্যাংক শাখাগুলোকে তাদের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ করে রাখার নির্দেশ দেয়া হোক এবং এসকল এলাকায় বসবাসরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের অফিসে আসার উপর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাদের বাসায় থাকা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. আগেই উল্লেখ করা হয়েছে সকল শাখা ইতিমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা এর পরিবর্তে দূরত্ব বিবেচনায় নির্দিষ্ট সংখ্যক শাখা খোলা রেখে অন্য সব শাখার কার্যক্রম বন্ধ করা হউক। দূরবর্তী শাখার কর্মকর্তা - কর্মচারীদের জন্য যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক। এর লক্ষ্যে ব্যাংকসমূহ পরিবহনের ব্যবস্থা করতে পারে।


৭. সাপ্তাহিক ব্যাংকিং কর্মদিবসের সংখ্যা কমিয়ে আনা হউক। ব্যাংকারগণ ২৬শে মার্চ হতে অদ্যাবধি সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতীত একটানা কাজ করছেন। তাদের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তির দরকার। বিধায় আগামী ১২ ও ১৩ এপ্রিল (রবিবার ও সোমবার) সারা বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেক্টরে পূর্ণদিবস বন্ধ ঘোষণা করার অনুরোধ করছি।
৮. করোনার এই সাধারণ ছুটিকালীন সময়ে কর্মরতদের জন্য কোনরূপ ঝুঁকিভাতা/সম্মানীর ঘোষণা নেই ব্যাংকগুলোর নির্দেশনার মধ্যে । ছুটির দিনে কাজ করার জন্য উপযুক্ত প্রণোদন প্রদান করা হউক।


৯. করোনা ভাইরাসে কোন ব্যাংক কর্মকর্তা আক্রান্ত হলে তার জন্য ব্যাংকের পক্ষ হতে চিকিৎসা সেবাসহ আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করার জোর দাবী রাখছি । এর জন্য বীমা সুবিধাও ঘোষণা করা যায়।


১০. সরকারি বা বেসরকারি কোন পর্যায়ে ব্যাংকারদের কোন পেনশন সুবিধা নেই। এই তথ্যটি হয়তো অনেকের জন্য নতুন। কিন্তু ২০০৮ সালে প্রধান চারটি সরকারী ব্যাংক কোম্পানিতে রূপান্তর করার পর পরবর্তীতে নিয়োগকৃতদের জন্য এই সুবিধা বাতিল করা হয়। তাই দায়িত্বপালনকারী কোন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার দায়, ক্ষতিপূরণ, মৃতের পরিবারের দায়িত্ব কে নিবে ব্যাংক কর্তৃক তা এখুনি নির্ধারণ করা জরুরী। কেউ মারা গেলে তার পরিবারের একজনকে চাকুরীর প্রতিশ্রুতি দেয়া হউক।


১১. সর্বোপরি, ব্যাংকারদের প্রতি সরকারকে মানবিক বিষয়সমূহ চলমান রাখার প্রার্থনা করছি।


তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নাই সরকার করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে জয়ের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং এযুদ্ধে চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, জরুরী সেবায় কর্মরত ব্যক্তিগণ ও ব্যাংককর্মীরা এ ক্রান্তিকালে রণাঙ্গনের প্রকৃত যোদ্ধা। তারা সম্মুখ সমরে আছেন । জনসেবায় আছেন। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার জন্য তাদের এই অব্যাহত প্রচেষ্টা । ইনশাল্লাহ আমাদের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সরকার গৃহীত পদক্ষেপ পরিপালনের মধ্য দিয়ে আমরা এ যুদ্ধে জয়ী হবোই । আবার আমরা গড়ে তুলব আমাদের কাঙ্ক্ষিত বসুন্ধরা। বাসযোগ্য পৃথিবী রূপায়নে আমরাও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম প্রজন্মের কাছে আরো সুদৃঢ় হোক সে বিশ্বাস!


মোজাম্মেল হক লেনিন
সাধারণ সম্পাদক
স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ, সোনালী ব্যাংক প্রাতিষ্ঠানিক কমিটি ও প্রিন্সিপাল অফিসার সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com