শিরোনাম
পুলিশকে ঘুষখোর গালি দিতে একবার ভাবুন তাদের মানবিক পুলিশিংকে
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০৯:১৬
পুলিশকে ঘুষখোর গালি দিতে একবার ভাবুন তাদের মানবিক পুলিশিংকে
হাসিনা আকতার নিগার
প্রিন্ট অ-অ+

যদি করোনাভাইরাসের এসময়ে মৃত্যু ছোবল মারে; তবে আপন জন দূরে সরে যাবে হয়ত। কিন্তু মানবিক পুলিশ নিয়ম মত দাফন করবে এ আস্থাটুকু অর্জন করেছে পুলিশ বাহিনী। মানব সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করা এ পেশার মানুষদের সমাজ ভালো চোখে দেখে না। কিন্তু সে ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করছে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন পুলিশ।


চারদিকে ‘করোনাভাইরাস, করোনা 'একটাই শব্দ। এ ভাইরাসকে নিয়ে তটস্থ সারা বিশ্ব৷ চীনের উহান শহরের খবর জানার পরেও আশা করেনি এর প্রভাবে মরবে হাজার হাজার মানুষ। অপ্রত্যাশিত এক বিপদ মানুষের সম্মুখে৷ রোগ প্রতিরোধের একটাই পথ পরিষ্কার পরিছন্নতা আর মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘরে থাকা। কিন্তু এর জন্য সচেতন থাকা জরুরি মনে করে না বাংলাদেশের মানুষ। বিধাতার হাতে নিয়তিকে ছেড়ে দিয়ে চলাফেরা করা স্বভাবজাত অভ্যাস।


চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ দেশের সংকট আসন্ন আঁচ করতে পেরেছেন। তাই কাল ক্ষেপণ না করে এ শহরকে বাঁচাতে নিয়মিত দায়িত্বের পাশাপাশি মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। স্কুল ছুটির পর মানুষ বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আমেজে ছুটে যায় সমুদ্র সৈকত সহ নানা স্থানে। কোন ধরনের বাধা নিষেধ শুনতে নারাজ জনগণ। বিয়ে সহ অন্য উৎসব আয়োজন চলে বিভিন্ন স্থানে। এ পরিস্থিতিকে রুখতে মানবিক ভাবনা থেকে সিএমপি নিজস্ব উদ্যোগে সকল কিছু বন্ধ করে। মানুষকে হাত ধুয়ে পরিষ্কার থাকার সচেতন থাকার প্রচারণা চালাতে থাকার সাথে মাস্ক ও জীবাণুনাশক সাবান সহ অন্য দ্রব্যাদির বাজার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।


এখানেই থেমে থাকেনি সিএমপি পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান ও তার বাহিনী। একটি মোমের আলো থেকে যেমন হাজার আলো জ্বলে, ঠিক তেমন ভাবেই চট্টগ্রামের পুলিশ বাহিনী এ শহরে আশার আলো জ্বালাচ্ছে ক্রমশ । তাই করোনা ভাইরাস নিয়ে বিপদ গ্রস্থ হলেই ফোন করে সিএমপি হট লাইনে। কারণ বিশ্বাস করে সাহায্য আসবেই।


সরকার ছুটি ঘোষণার পর ঘর বন্দি মানুষদের পাশে থাকতে চট্টগ্রামের পুলিশ রাত দিন কাজ করে যাচ্ছে। শহরকে পরিষ্কার, চিকিৎসকদের হাসপাতাল পৌঁছানো, রোগীদের ব্যবস্থা করছে। প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইন ও তালিকা তৈরি করেছে।


সবচেয়ে যে বিষয়টি সারা দেশের নজর কেড়েছে তা হলো নিম্নবিত্তের মানুষদের খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তায় করা। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সাথে নিয়ে সিএমপি গরীব মানুষদের হাতে তুলে দিচ্ছে চাল ডাল তেল আলু। আবার কোতোয়ালি সহ কিছু থানায় রান্না করা খাবার বিতরণ করছে। মানুষকে ঘরে থাকে উৎসাহিত করতে তাদের প্রয়োজনী দ্রব্য ঘরে পৌঁছে দিতে হোক সার্ভিস দিচ্ছে।


হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীদের খোঁজ রেখেছে প্রতিনিয়ত। ফল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে মানসিক সাহস যুগিয়েছে।


পুলিশ মানে ঘুষখোর। থানার দরজাও টাকা খায়। এসব কারণে পুলিশ এ সমাজে যেন আলাদা জীব। তবে ভালো মন্দ সব পেশাতেই আছে। কিছু মন্দলোকের জন্য সবাইকে গালি দেয়া ভুল। তাই পুলিশ নাম শুনলেই গালি দেয়ার আগে এখন ভাবতে হবে। কারণ দিন বদলে গেছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু এ মানসিকতা যেমন পুলিশের মাঝে পরিবর্তন আনছে তেমন সাধারণ মানুষের মনেও আসছে।


সামাজিক মাধ্যমে একটা ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন পুলিশ নিম্ন আয়ের মানুষ সাথে এবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মধ্যবিত্তদের দিকে। এ শ্রেণির লোকরা লজ্জার ভয়ে নিজের অভাবের কথা বলতে পারে না।সরাসরি সাহায্য নিতে যেতে পারে না। তাই নিজের ঘরের জিনিস বিক্রি করে বা ধার করে সংসার চালাচ্ছে। সচেতন হয়ে ঘরে থাকা এ মানুষদের প্রতি সম্মান জানিয়ে সিএমপি বিশেষ উদ্যোগটি নিয়েছে। তাদের সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে গোপনীয়তা রক্ষা করে ঘরে পৌঁছে দিবে সাহায্য। এমন মানবিক ভাবনার মানুষগুলোকে বাস্তবতার নিরিখে গালি দেবার আগে ভাবুন একবার-


'সত্যিকারের দেশ প্রেম আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই সিএমপি এখন মানবিক পুলিশ।' আর সে কারণে সমাজকে করোনা ভাইরাস মুক্ত করতে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম ও অভাবের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ হাতে লড়াই করছে মাহবুবর রহমান আর তার কর্মী বাহিনী।


আসুন অন্তত একবার মুক্ত মনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও তার বাহিনীকে জানাই অভিবাদন। আর প্রত্যাশা হোক মানবতার কাছে পরাভূত হবে করোনা ভাইরাস।


লেখক : কলাম লেখক।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com