শিরোনাম
নববর্ষ ১৪২৭: মঙ্গল শোভাযাত্রার নতুন ভাবনা
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২০, ২৩:২৫
নববর্ষ ১৪২৭: মঙ্গল শোভাযাত্রার নতুন ভাবনা
ড. সিদ্ধার্থ দে
প্রিন্ট অ-অ+

পহেলা বৈশাখ এমন একটি দিন যা আমাদের বাঙালি জাতিকে এক বিন্দুতে মিলিত করে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সকলেই মিলিত হই এই উৎসবে। বুঝতে শেখার পর থেকেই নববর্ষ উদযাপনে সবসময়ই আনন্দ-উল্লাস, নতুন জামা-কাপড়, ভালো খাবার পরিবার থেকে পেয়ে এসেছি। গ্রাম-গঞ্জের বৈশাখী মেলা এই আনন্দে যোগ করে এক নতুন মাত্রা। মেলায় গিয়ে নানা রকম খেলনা কেনা, নাগরদোলায় চড়া, বায়োস্কোপ দেখা, হাওয়াই মিঠাই খাওয়া, হরেক রকম মিষ্টি, পিঠা-পুলি এ নিয়েই আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই সম্মিলিতভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপন করেছি পহেলা বৈশাখ। চারুকলার ছাত্র হওয়ায় উপলব্ধি করতে পেরেছি খুব কাছ থেকেই। দেখে আসছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী বর্ণিল আয়োজন করে থাকে।


পেশাজীবনে এসেও এতদিন পর্যন্ত সেই বর্ণিল পহেলা বৈশাখ উদযাপনের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। হল প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকায়, হলের সকল ছাত্রদের জন্য নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করতাম নিয়মিত।


করোনা নিয়ে আমরা আজ শঙ্কিত আতঙ্কিত এবং স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী আছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিধায় মাসিক বেতনে হয়তো আমার পরিবার কোনোরকম খেয়ে পড়ে দিন চলে যাবে। তেমনি আমরা যারা বিভিন্ন পেশায় সরকারি চাকরিজীবী তারাও হয়তোবা কোনো না কোনোভাবে জনগণের টাকায় পাওয়া বেতনে কিছু না কিছু খেয়ে পরে বাঁচতে পারব। কিন্তু আপামর জনসাধারণ কি আমার মত নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে? যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আমি মাসোহারা পাই, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রদের মধ্যে কি এমন কেউ নেই যে খুব কষ্ট করে তার লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে কিংবা তার পিতা খুব কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করে তাকে সেখানে পড়াচ্ছে! নিশ্চয়ই আছে। আসলে এমন চিত্র বাংলাদেশের সর্বত্রই বিরাজ করছে। আর সেজন্যই বৈশাখ নিয়ে নতুন ভাবনা উদিত হয়েছে আমার মনেও।


কম বেশি সকল প্রতিষ্ঠানেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য আলাদা বাজেট থাকে। এমনটাও তো হতে পারে সেই খাত থেকে আমরা দাঁড়াতে পারি সে সকল মানুষদের কল্যাণার্থে। যে পিতা দুবেলা দুমুঠো ভাতের চিন্তায় বসে আছে ঘরে, যে ছাত্র অনেক কষ্ট করে তার শিক্ষার ব্যয় নির্বাহ করে দুবেলা গৃহশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে, কিছু টাকা যদি তাদের হাতেও আমরা দিয়ে দিতে পারি সেটাও আমাদের গর্বের বিষয়। যে মা শ্রমিকের কাজ করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে সে মায়ের ভার যদি লাঘব করতে পারি সেটা হবে এই নিরানন্দের ভেতরে একটু আনন্দ।


বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি এমন উদ্যোগ নিতে পারে তাহলেই আমরা ভাবতে পারি 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' থেমে নেই; সময়ের প্রয়োজনে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপিত হচ্ছে আমাদের দেশে। আমি বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের উদ্দেশ্যে এই আবেদন জানাচ্ছি। যদি নিয়মের মধ্যে থেকেই এই প্রতীকী শোভাযাত্রায় আমরা অংশগ্রহণ করতে পারি, তবে মন্দ কি? বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় সবই সম্ভব, শুধু আমাদের ইচ্ছাটুকুই যথেষ্ট।


(বি.দ্র. ছোট বোন বাণী ইয়াসমিন হাসির ফেসবুক পোস্ট থেকে অনুপ্রাণিত)


লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com