শিরোনাম
বিবর্তনের ধারায় যেভাবে আজকের আওয়ামী লীগ
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০১৯, ০০:০৩
বিবর্তনের ধারায় যেভাবে আজকের আওয়ামী লীগ
আকরাম হোসেন
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ। এদেশের যত রাজনৈতিক অর্জন, আন্দোলন সংগ্রাম আর ইতিহাসের আনাচে-কানাচে জড়িয়ে আছে এ দলটির নাম।


দলটির সূচনালগ্নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের বদৌলতে পরিপূর্ণতা পায় আওয়ামী লীগ। যার ফলস্বরূপ স্বাধীন বাংলাদেশ নামে একটি দেশের জন্ম হয়। আজ ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আর এ ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।


দলটির পেছনের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রাজধানী ঢাকার টিকাটুলির রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগের জন্ম। তখন এর নাম দেয়া হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। দলটির নতুন নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। জন্মেরে মাত্র দুই যুগের আগেই দলটির নেতৃত্বে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।


মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক আর শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দলটির প্রতিষ্ঠালগ্নে মূল নেতা। মওলানা ভাসানী দলটির সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দী শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।


১৯৫২ সালের শামসুল হক জেলে থাকায় শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার মুকুল প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব।



বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় এই দলটি পাকিস্তানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।


নির্বাচনের পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা আরম্ভ করেন। পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। কারাবন্দী বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।


১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হন সপরিবারে। ভাগ্যের ফলে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান তারা। এর মাত্র ১৮ দিন পর ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর সামরিক শাসনের নির্যাতন আর নিপীড়নের মধ্যে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি। নেতাদের মধ্যেও দেখা দেয় বিভেদ।


১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসেবে দেশে ফিরেন। কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে।


১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর শাসনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। পরবর্তীতে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে পুনরায় সরকার গঠন করে। আর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলটি ক্ষমতায় এসে দেশ পরিচালনা করছে।


গত বছর আওয়ামী লীগের জন্য ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা সৃষ্টি হয়। অবশেষে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।


কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি নির্বাচনে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তুলেন এবং ধানের শীষে যেসব প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন তাদের শপথ গ্রহণ না করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে ঐক্যফ্রন্টের এমন অভিযোগ তোয়াক্কা না করেই আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। শুধু তাই নয়, শক্তিশালী মন্ত্রীসভা গঠন করে দেশের উন্নয়ন আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।


এদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ না নেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সুকৌশলে একে একে মোট ছয়জন শপথ নিয়েছেন। এর ফলে আওয়ামী লীগের সামনে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ কোনো ধরনের চাপই নেই।


বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইতিহাসের সেরা সময় অতিবাহিত করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পর পর তিনবার সরকার গঠন করে রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। আওয়ামী লীগ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে সেটা ইতোমধ্যে স্বীকার করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারাও।


সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বিবার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগ এখন তৃণমূল, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত সংগঠিত এবং শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। আওয়ামী লীগ শুধু দেশে সফল নয়, দেশের পাশাপাশি সারাবিশ্বে আওয়ামী লীগ সরকার এখন সফল। যা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। তিনি বিশ্বের সেরা প্রধানমন্ত্রীদের একজন।


রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের অর্জন পাকিস্তান আমলের গণতান্ত্রিক মানুষের অর্জন, এই দলের অর্জন বাংলাদেশের অর্জন। জাতির জন্য যখন যা প্রয়োজন মনে করেছে, সেটি বাস্তবায়ন করেছে এ দলটি।


বিবার্তা/আকরাম/উজ্জ্বল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com