বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ এনে নয়টি সংস্থার নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি বাতিলের দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিডিয়া সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এই দাবি জানান।
সংস্থাগুলো হলো- ডেমোক্রেসি ওয়াচ, খান ফাউন্ডেশন, লাইট হাউজ, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, নবলোক, কোস্ট ট্রাস্ট, শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি এবং নোয়াখালী রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি।
এইচ টি ইমাম বলেন, ''বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত অথবা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি সমর্থনকারী ও অনুভূতিশীল ৯টি স্থানীয় সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব সংস্থা মোট ১৪০টি সংসদীয় আসনে প্রায় ৬ হাজার ৫৮৫ জন পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে। এদের প্রায় সবাই বিএনপি-জামায়াতের সক্রিয় কর্মী।’ নির্বাচনকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এটা করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১ অনুচ্ছেদের বিধানের আলোকে এই ৯ সংস্থার অনুমতি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।''
তিনি বলেন, ''শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রহমান পরিচালনা করেন ডেমোক্রেসি ওয়াচ, মইন খানের স্ত্রী পরিচালনা করেন খান ফাউন্ডেশন, তারেক রহমান লাইট হাউজের প্রতিষ্ঠাতা, আদিলুর রহমান বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষেদের সঙ্গে যুক্ত আছেন। আমারা দুই বার লিখিতভাবে ইসিকে (নির্বাচন কমিশন) জানিয়েছি আমাদের আপত্তির কথা। তবে আমরা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অভিযুক্ত করে বিব্রত করব না।''
বিদেশি পর্যবেক্ষক প্রসেঙ্গে এইচ টি ইমাম বলেন, ''বিদেশে পর্যবেক্ষক নিয়েও নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে। সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের আইন মেনেই বিদেশি পর্যবেক্ষকরা এদেশে আসবেন। বিদেশি সংস্থা অ্যানফ্রিল আরপিও'র ৯১সি অনুযায়ী অনুমতি পাওয়ার যোগ্য নয়। কারণ আদিলুর রহমান শুভ্র, যিনি বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, তার প্রতিষ্ঠান ‘অধিকার’ এই অ্যানফ্রিলের বাংলাদেশ প্রতিনিধি। একই সঙ্গে আদিলুর রহমান অ্যানফ্রিলের পরিচালক পর্যায়ের একজন সদস্য। এরপরও অ্যানফ্রিলের ছয়জনকে নির্বাচন কমিশন পর্যক্ষবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছে। বাকি ১৫ জনকে আরপিও'র ৯১সি প্রতিপালন না করায় অনুমতি দেওয়া হয়নি।''
নির্বাচনের সময় যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বিধিনিষেধ শিথিল করার অনুরোধও জানান এইচ টি ইমাম। বলেন, জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে, এমন কোনও বিধিনিষেধ আমরা সমর্থন করি না। আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রের ১০০ গজ দূরত্বে যানবাহন চলাফেরা ও অবস্থান করতে পারে, এমন নির্দেশনা জারি করা প্রয়োজন। সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল যেন স্টিকারসহ চলাফেরা করতে পারে, সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইসির সঙ্গে বৈঠক ছেড়ে উঠে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এইচ টি ইমাম বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ করতে করতে এক পর্যায়ে ড. কামাল হোসেন ক্ষেপে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের কোনো এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) ‘জানোয়ার’ বলেছেন। সিইসি তাৎক্ষণিকভাবে তার এমন ভাষা ব্যবহারে প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, আপনি (ড. কামাল) এই শব্দ কেন এ রকমভাবে ব্যবহার করলেন? এমন ভাষা আপনার মুখে শোভা পায় না।
তার ভাষ্যমতে- ড. কামালকে সিইসি বলেন, এখানে যে একজন পুলিশ সদস্যকে জানোয়ার বললেন, এটি কী শোভনীয়? এটি কী আশা করা যায়? এরপর যা ঘটেছে তা হলো- ড. কামাল হোসেন জোরে জোরে টেবিল চাপড়িয়েছেন। এর আগেও তো তিনি সাংবাদিকদের ‘খামোশ’ বলেছেন। তখন সিইসি ও অন্যান্যরা বলেন, আমরা অপমানিত বোধ করছি। আপনারা না থাকলেই ভালো। কাজেই এই ইসির সঙ্গে বৈঠক জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বয়কট করেননি বরং তারা বৈঠকে তারা এক রকম মাস্তানি করেছেন।
ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে এইচ টি ইমাম বলেন, ''ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেন আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেটি যথেষ্ট আপত্তিজনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের পরের সময়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষাসহ যেকোনও বড় ধরনের নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের জন্য আামাদের সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী মোতায়েন করা হয়েছে। ড. কামাল যে লিখিত অনুশাসনমূলক বিবৃতি দিয়েছেন, সেটি সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী।''
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক এই উপদেষ্টা বলেন, ''জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র চার দিন বাকি। এ নির্বাচন ভণ্ডুল বা প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র ছিল, এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টের সন্ত্রাসীদের হাতে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন, ৩৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। প্রতি মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডারদের মাধ্যমে আমাদের প্রার্থী আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ আমরা পাচ্ছি।''
নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত বড় ধরনের নাশকাতার পরকিল্পনা করছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ''আমরা জানতে পেরেছি এবং সার্বিক কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনের আগে দেশে বড় ধরনের নাশকতামূলক হামলার পরিকল্পনা করছে। এসব নাশকতামূলক পদক্ষেপ প্রতিহত ও নস্যাৎ করার জন্য আমি দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।''
বিবার্তা/হাসান/কামরুল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]