শিরোনাম
ইতিবাচক রাজনীতির দৃষ্টান্ত গড়তে চায় জবি ছাত্রলীগ
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০১৮, ২২:৫৫
ইতিবাচক রাজনীতির দৃষ্টান্ত গড়তে চায় জবি ছাত্রলীগ
আদনান সৌখিন, জবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম (জবি) দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের সাথে জড়িয়ে আছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনেও রয়েছে এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের বিশেষ অবদান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পথচলা শুরু সেই প্রথম থেকেই। ৪ জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে পথচলা শুরু ছাত্রলীগের।


তখন থেকেই জবি ছাত্রলীগ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অন্যতম একটি সুপার ইউনিট হিসেবে পরিচিত। জবির বর্তমান কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের দক্ষ নেতৃত্বে একটি নতুন ধারার ছাত্রবান্ধব ও ইতিবাচক রাজনীতি উপহার দেবে এমনটাই প্রত্যাশা জবির ২০ হাজার শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে জবি ছাত্রলীগের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বহুগুণ।


জবি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে নেই কোনো গ্রুপিং। আগের কমিটিগুলোতে বিশেষ অঞ্চল বা নেতৃত্বভেদে বেশ কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে যেত জবি ছাত্রলীগ। ফলে গ্রুপে গ্রুপে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকত। বর্তমান কমিটির একটি বিশেষ সফলতাই হচ্ছে এই গ্রুপিং দূর করা। ফলে তুলনামূলকভাবে অনেক সংগঠিত বর্তমান জবি ছাত্রলীগ।


বর্তমানে জবি ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মী নিজেদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মী সর্বোপরি জবি ছাত্রলীগের কর্মী বলে পরিচয় দিতেই সাচ্ছন্দ বোধ করেন।


পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস ও জবির সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় সভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা এ অভিযানে অংশ নেন। পরিচ্ছন্ন অভিযানে প্রতিটি অনুষদের বিভিন্ন জায়গার আগাছা, ফেস্টুন ও ড্রেনের ময়লাসহ গাছের বর্ধিত ডালপালা কেটে পরিষ্কার করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এতে তারা কয়েক মাসের জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেন। এতে জবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন।



মানবিকতা ও দায়বদ্ধতার খাতিরে ট্রেনে কাটাপড়া দুই পা হারানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্রী রুবিনার সেই শুরু থেকেই চিকিৎসার দেখভাল করে আসছিল জবি ছাত্রলীগ। কৃত্রিম পা লাগানোসহ বাংলাদেশ রেলওয়েতে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে রুবিনার। এছাড়া তাকে ও তার পরিবারকে আর্থিকভাবেও সহায়তা করা হয়েছে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে।


শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড এই মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী জবি ছাত্রলীগ শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চায় প্রতিটি জায়গায়। এরই লক্ষ্যে সভাপতি মো. তরিকুল ইসলাম শুরু করেছেন ফ্রি কোচিং সেবা। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদে পড়ার জন্য ফ্রি কোচিংয়ে ব্যবস্থা করেছেন।


এদিকে সাধারণ সম্পাদক রাসেল প্রতিষ্ঠা করেছেন পথশিশুদের জন্য ‘শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য (শিবিখা)’ কর্মসূচী। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিদিন বিকেলে জবির টিএসসিতে পথশিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এখানে পাঠদান করেন জবি ছাত্রলীগের কর্মীরা।


দুরারোগ্যে কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে কিংবা রাজনৈতিকভাবে আহত হয়ে ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীকে যাতে চিকিৎসার অভাবে বিছানায় পড়ে থাকতে না হয় এজন্য চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় ছাত্রলীগ ফান্ড। এছাড়া রাজনৈতিক কোনো ইস্যুতে কেউ মারা গেলে তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে এ তহবিল গঠন করা হয়। তবে অর্থ প্রদানের সময় অবশ্যই রোগী ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কিনা এবং তার রোগ বা রাজনৈতিক ইস্যু আহতের সার্টিফিকেট দেখাতে হবে বলে ফান্ডের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।


ছাত্রলীগের এই কমিটি গঠনের পরপরই তাদের শিক্ষার্থীবান্ধব ১১ দফা দাবি ছিল প্রশাসনের কাছে। সেসব দাবির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উন্মুক্ত পাঠাগারের ব্যবস্থা করা। যার ফলশ্রুতিতে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল জবিতে প্রথমবারের মতো ‘উন্মুক্ত পাঠাগার’ উদ্বোধন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সংস্থা, সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ার কাজে উন্মুক্ত পাঠাগারটি ব্যবহার করতে পারবেন। বিভাগীয় পরীক্ষার দিন ব্যতীত প্রতিদিন দুপুর ১টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঠাগার খোলা থাকবে। বিভাগীয় পরীক্ষার দিন বিকাল ৪টা হতে তা উন্মুক্ত থাকবে।


পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে নানান উদ্যোগের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণের উদ্যোগও নিয়েছে জবি ছাত্রলীগ। জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বৃক্ষরোপণ করেছে শাখা ছাত্রলীগ। চলতি বছরের ১৯ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবন, শান্ত চত্বর, নতুন ভবনের সামনে জলপাই, হরতকী, বহেরা, অর্জুন, লেবু গাছসহ বিভিন্ন ফলদ ও ওষুধি গাছ লাগানো হয়।



সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি ছিল সমাবর্তন। প্রতিষ্ঠার পরে থেকে আজ পর্যন্ত সমাবর্তন হয়নি জবিতে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে জবি ছাত্রলীগ। জবি উপাচার্যের কাছে এই দাবি তুলে ধরেন জবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। ফলে উপাচার্য খুব শিগগিরই সমাবর্তনের আশ্বাস দেন ও এই লক্ষ্যে সমাবর্তন কমিটি গঠন করেন। সমাবর্তন কমিটি জবির প্রস্তাবিত নতুন ক্যাম্পাসে সমাবর্তন আয়োজন করার লক্ষ্যে কাজ করছেন।


একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হিসেবে জবি ছাত্রলীগের প্রধান কাজ বর্তায় ক্যাম্পাস স্থিতিশীল রাখা। এই লক্ষ্যে সদা সচেতন ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী। বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে নাশকতা সৃষ্টির তৎপরতা প্রতিহত, ক্যাম্পাসে রাতে বহিরাগতদের অবাধ চলাচলে বাধা, মাদকমুক্ত ক্যাম্পাসের ব্যাপারে সর্বদা সচেষ্ট ছাত্রলীগের এই ইউনিট। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে ঢাকার বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ ও বিভিন্ন গুজবের সৃষ্টি হলেও জবি ছিল এর ব্যতিক্রম। শাখা ছাত্রলীগের সজাগ তৎপরতা সেসব গুজব ও আন্দোলনের নামে দেশবিরোধী কার্যক্রমের দিকে রুপ নিতে দেয়নি।


এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতীয় দিবসগুলোতে দুস্থ ও অসহায় ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করে ছাত্রলীগ। ভর্তি পরীক্ষার সময় অভিবাভকদের মধ্যে পানি বিতরণ, তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্র এবং ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীদের সব ধরনের সহায়তা করে জবি ছাত্রলীগ।


এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের সফলতার মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো ক্যাম্পাসকে স্থিতিশীল রাখা। আর এর পরেই আছে ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে মুজিবীয় আদর্শের কর্মীদের রক্ষা করা। আমাদের দেখে কেন্দ্রও কমিটিরও এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে যাতে কেউ কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা তৎপর। ফলে কেউ এ ধরনের সুযোগই পায়নি।



জবি ছাত্রলীগের সার্বিক অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন, আমাদের কমিটি গঠনের পরে থেকেই ইতিবাচক রাজনীতির ধারা ঠিক রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সর্বোপরি ক্যাম্পাসে ছাত্রবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও পড়াশুনার পরিবেশ যাতে ক্ষুন্ন না হয় সে ব্যাপারে আমাদের সজাগ দৃষ্টি আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ছাত্রলীগের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখে। সর্বোপরি দেশরত্ন শেখ হাসিনার দেয়া দায়িত্ব পালনে আমরা নিবেদিতপ্রাণ। জবি ছাত্রলীগকে ইতিবাচক রাজনীতির ব্র্যান্ডে পরিণিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।


বিবার্তা/আদনান/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com