শিরোনাম
দাবি না মানলে আপসহীন আন্দোলন: ঐক্যফ্রন্ট
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৪৭
দাবি না মানলে আপসহীন আন্দোলন: ঐক্যফ্রন্ট
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সরকার দাবি পূরণ না করলে ঐক্যবদ্ধভাবে আপসহীন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট'র আহবায়ক ড. কামাল হোসেন। মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ তিনি বলেছেন, আমরা সবাই এ দেশের মালিক। তাই একটি সুন্দর, গণতান্ত্রিক দেশ আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা আমাদের সেই দাবি আদায় করেই ছাড়ব।


মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


সমাবেশ উপলক্ষে সরকার যোগাযোগব্যবস্থা সীমিত করেছে অভিযোগ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, 'রাস্তা বন্ধ করে, বাস বন্ধ করে জনগণকে দমানো যাবে না। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার বাস, লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে। এর নাম কি গণতন্ত্র? আপনারা যেভাবে এসেছেন, এমন অদম্যভাবে, আপসহীনভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিতে হবে।'


সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার দেশটাকে জিম্মি করে রেখেছে। এই ভয়াবহ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এ জন্য বসে থাকার সুযোগ নেই। জনগণের কাছে যেতে হবে। তাদের জাগাতে হবে। পরিবর্তনের যে জাগরণ উঠেছে, তাকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। দেশে আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।


জনগণকে ভোটাধিকার পাহারা দেওয়া আহবান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, ভোটাধিকার পাহারা দেয়া মানে স্বাধীনতাকে পাহারা দেওয়া। সুষ্ঠু নির্বাচন মানে গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখা, দেশকে বাঁচিয়ে রাখা। ড. কামাল হোসেন এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাগারে আটক সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন।


তিনি বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই। যেনতেনভাবে বিরোধীদের সবাইকে গ্রেফতার ও হয়রানি করা চলবে না। আইন বিরোধী দলের জন্য একরকম আর সরকারি দলের জন্য একরকম, এটা চলতে পারে না। একটা অনির্বাচিত সরকার এটা করতে পারে না। আমি অবশ্যই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, সাথে অন্যান্য রাজবন্দিদেরও মুক্তি চাই।’


গণফোলাম সভাপতি বলেন, ‘আমি কোনো দলের সদস্য হিসেবে বলছি না। দেশের মালিক হিসেবে আপনারা দাঁড়িয়ে যান। যেভাবে দেশ চলছে তা হতে পারে না। সুষ্ঠু ভোটের জন্য শপথ নিন। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন কারো সঙ্গে আপস করবেন না।’



সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দেন, ‘এই সরকার যদি আগামীকালের (৭ নভেম্বর) সংলাপে আমাদের দাবিদাওয়া মেনে না নেয় তাহলে ৮ নভেম্বর রাজশাহীতে আমরা রোডমার্চ করব। রাজশাহীতে ৯ নভেম্বর জনসভা হবে। এরপর খুলনা, ময়মনসিংহ ও বরিশালে জনসভা হবে। নির্বাচন কমিশন যদি একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণা করতে চায় তাহলে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা হবে। তারপর আবারও বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’


তিনি বলেন, 'আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন হয়েছে। এখনও হচ্ছে। আমাদের ছেলে, আমাদের ভাইদেরকে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে। এখনও চলছে তথাকথিত প্রহসনের সংলাপ। সংলাপে বলা হলো, আর আমাদের গ্রেফতার করা হবে না। মামলা তুলে নেওয়া হবে। কিচ্ছু করা হয় নাই। প্রতিদিন গ্রেফতার চলছে। এই সমাবেশ থেকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।’



বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৭১টি মামলা হয়েছে। ২৫ লাখ আসামি। যারা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তাদের তুলে নেয়া হয়েছে। আমাদের চার ভাইকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এখন পর্যন্ত তাদের খবর পাওয়া যায়নি।'


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আর গ্রেফতার হতে চাই না। আমরা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে চাই। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সাত দফা আমরা সফল করতে চাই। এটাই হচ্ছে আমদের শপথ। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সর্বপ্রথম মুক্তি দিতে হবে। তারপরই সব কিছু হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় যে সাজা দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।



সমাবেশে, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কারাগারে থাকা সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে প্রথমবারের মত যোগ দেন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপি নয়, ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছি। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু চান, লড়াইয়ে জিততে চান, তাহলে বিএনপি আপাতত ভুলে যান। আমি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। আমরা চাই শেখ হাসিনার মুক্তি কবে হবে।


প্যারোলে নয়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তির কথা বলা হচ্ছে। নেত্রী আগেও প্যারোলে মুক্তি চাননি, এখনো চাইবেন না। বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি যত দিন না হবে, তত দিন আমাদের এই আন্দোলন চলবে।



ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, একদিকে সংলাপ, অন্যদিকে গ্রেপ্তার, একদিকে নির্যাতন, অন্যদিকে তফসিল ঘোষণা। এই অবস্থা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। যত দিন আমাদের দাবি মানা না হবে তত দিন তফসিল ঘোষণা করতে পারবেন না।


নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে যত নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচনে চুরি করেছে সরকার। কোনো নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোট দিতে পারেনি। ৫ জানুয়ারি মার্কা আর কোনো ফোরটুয়েন্টি চলবে না। আমরা গণতন্ত্র চাই বলে, এখানে সব দল এক হয়েছি। তাই আর কোনো ফোরটুয়েন্টি চলবে না জনগণের সাথে।’



মান্না বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এক সাথে দুই সংসদ চলতে পারে না। সংসদ ভেঙে দিতে হবে।’


বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে সরকার মেরে ফেলতে চায়৷ খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না। নিজের জীবন দিব, তাও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবই।’



জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন। এছাড়া আরও বক্তব্য দেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন, সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদীন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, ড. সুকোমল বড়ুয়া, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স ও শামা ওবায়েদ প্রমুখ।


বিবার্তা/হাসান/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com