শিরোনাম
আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন, সিলেটের জনসভায় ড. কামাল
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:১১
আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন, সিলেটের জনসভায় ড. কামাল
সিলেট ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম জনসভা সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকালে আয়োজিত জনসভায়, গণতন্ত্র ‘পুনরুদ্ধারে’ আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন ড. কামাল হোসেন।


প্রধান অতিথি হিসাবে জনসভায় ড. কামাল বলেন, স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হতে হলে, স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হতে হলে, ক্ষমতার মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকলকে মাঠে নামতে হবে।


তিনি বলেন, 'আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, ঐক্যফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধ হন, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। বাংলাদেশের জনগণের জয় হবেই। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা আবার দেশে মালিক হব, এই রাষ্ট্র আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনব।'


জনসভায় প্রধান বক্তা হিসাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সিলেটবাসী অনেক ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন। আজ আরেকটি ইতিহাসের জন্ম দিচ্ছেন। এই ইতিহাস হচ্ছে গণতন্ত্র মুক্তির ইতিহাস।


বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ থেকে নতুন লড়াই শুরু হলো। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের অধিকার। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। ইভিএম দেয়া চলবে না। ডিজিটাল চুরি করতে দেয়া হবে না। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।


জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আজ দেশ ডাকাতের হাতে পড়েছে, তাই দেশকে বাঁচাতে হবে। এর থেকে বাঁচতে হলে শুধু নিজেরা মাঠে নামলে হবে না। জনগণকে মাঠে নামাতে হবে।’


আবদুর রব বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলতে চাই, শত বাধা সত্ত্বেও জনতা রাস্তায় নেমে আসছে। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, ভোটের লড়াই, গণতন্ত্রের লড়াই। এ লড়াইয়ে জিততে হবে আমাদের। আজকের এই মাঠে ৬০ এর দশকে অনেক জনসভা করেছি। আজকে বক্তব্য দেব না। দেশ ডাকাতের হাতে পড়েছে। এদের পরাজিত করে বিজয়ের জনসভা করব এখানে।’


নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'সরকার চোরের মত, ডাকাতের মত ভোট ডাকাতি করছে। সিলেটের মানুষ সাহস দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী করেছে। আজ আমাদের শপথ নেয়ার সময়, সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। গত বছর নির্বাচনের সময় ঘরে ছিলেন। এবার কোটি কোটি মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে।'


মান্না বলেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন জেলে। তিনি নানা রোগে আক্রান্ত। ৭৩ বছর বয়সে তার জেল খাটার কথা না। দেশে কোটি কোটি টাকার লুটপাট হয়েছে। বিচার হয়নি। আমরা সবাই বলছি, তার (খালেদা) মুক্তি চাই। আমরা শপথ নেই, কীভাবে বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারি।


মান্না আরও বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আমাদের সঙ্গে কথা বলুন। সিলেটের জনসভা সারা দেশে মানুষের জন্য একটি সিগন্যাল। আমরা বাঁচার অধিকার চাই, সুন্দর দেশের অধিকার চাই। সারা দেশের মানুষ একদিকে, অন্যদিকে শেখ হাসিনার সরকার একা থাকবে। আমরা লড়াই করব।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা যে সাত দফা দিয়েছি, তার যাত্রা শুরু করব পবিত্র শহর হযরত শাহজালাল ও হযরত শাহপরাণের পুণ্যভূমি সিলেট থেকে।


তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীসহ শত শত ব্যক্তিকে গুম করেছে। তার জবাব দিতে হবে। সব লুটপাটের জবাব দিতে হবে। এ জন্য তারা (সরকার) ভয় পায়। খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগেই তাকে মুক্তি দিতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। পূণ্যভুমি সিলেট থেকে আন্দোলন শুরু হলো।



বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করা হবে। তাদেরকে সমঝোতায় আসতে হবে। যদি সমঝোতায় না আসেন, তবে বুঝতে হবে দেশে গণতন্ত্র চান না। মানুষ এর উপযুক্ত জবাব দেবে।


মওদুদ বলেন, ঘুষ ও দুর্নীতি ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে। এগুলোর বিচার করতে হবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে পাই পাই করে হিসাব নেব। তারা ক্ষমতায় এসে বিদেশে সম্পত্তি করেছে। তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।



বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়বলেন, কাঁঠাল দিয়ে আমসত্ব হয় না। শেখ হাসিনার আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। শেখ হাসিনার আমলে ভোট ডাকাতি হয়।


তিনি বলেন, দেশের মানুষ মুক্তি চায়। ইলিয়াস আলীসহ সকল নেতাকর্মীকে ফিরে পেতে চায়। দেশের জনগণ কখনো পরাজিত হয় না। বক্তব্যের একপর্যায়ে গয়েশ্বর সমাবেশের সভাপতি ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ‘খুলনার গণমানুষের মেয়র’ বলে সম্বোধন করেন।



জনসভায়, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি সিলেটে কর্ণেল এম এ জি ওসমানীকে স্মরণ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের জোয়ারে নৌকা টালমাটাল, ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। আমরা যদি বিজয়ী হই, আপনারা যদি সমর্থন করেন, তবে তিন মাসের মধ্যে দেখবেন দেশে ওষুধের দাম অর্ধেক হয়ে গেছে, চিকিৎসা খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে।



বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা তার বক্তব্যে বলেন, ইলিয়াস আলীকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। ইলিয়াস আলী গেল কয়েক বছর ধরে ‘নিখোঁজ’। ঢাকার বনানী থেকে তিনি ‘নিখোঁজ’ হন। তার অপেক্ষায় রয়েছে পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীরা।


জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট সিটি করেপারেশনের মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী।


জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে হজরত শাহজালাল ও শাহ পরানের মাজার জিয়ারত করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।


বিবার্তা/হাসান/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com