শিরোনাম
ড. কামাল মানুষকে পথ দেখাচ্ছেন: ফখরুল
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:২৭
ড. কামাল মানুষকে পথ দেখাচ্ছেন: ফখরুল
ছবি: আবুল বাশার
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষকে নতুন পথ দেখাচ্ছেন ড. কামাল। তিনি তাঁর ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতির এই চরম দুর্দিনে তিনি মুক্তির একটি পথ দেখিয়ে জনগণকে সামনে নিয়ে আসলেন।


শনিবার বিকালে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসাবে তিনি এসব কথা বলেন।


মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া কারাগার থেকে আমাদের খবর পাঠিয়েছেন- 'যে কোনো মূল্যে আজকে ঐক্য তৈরি করে এই সরকারকে সরাতে হবে। আমার কী হবে, না হবে সেটার একটা ব্যবস্থা হবে।'


বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারকে যদি আমরা সরিয়ে দিতে না পারি। জনগণের সরকার যদি প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি, জনগণের ঐক্যের সরকার যদি প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি তাহলে এই দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।


ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে আন্দোলন শুরু করার আহবান জানিয়ে ফখরুল বলেনৈ, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায়ে একটা আন্দোলন শুরু করি। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে বাধ্য করব দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে এবং একই সঙ্গে সব রাজবন্দি যারা আছেন তাদের মুক্তি দিতে এবং এ দেশে একটি নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য করতে হবে। সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।


মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সভার মধ্য দিয়ে ঐক্যের পথে আমরা ইতিমধ্যেই একধাপ এগিয়ে গেছি। আমরা আশা করি, দ্রুত সেই ঐক্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।


গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বিকাল ৩টায় নাগরিক সমাবেশ শুরু হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির শীর্ষ চার শীর্ষ নেতা সমাবেশে যোগ দেন। পরে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপস্থিত হন সমাবেশের প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।


হাতে হাত রেখে ঐক্যের ঘোষণা দেন বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার শীর্ষ নেতারা। সমাবেশ শুরুর আগে ঐক্য প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হলে নাগরিক সমাবেশ কার্যত জনসভায় পরিণত হয়।


সমাবেশে অংশ নেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের- জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, গণফোরাম নেতা সাইদুর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান নূর হোসেন কাশেমী প্রমুখ।


''জিতলে আমরা মেনে নেব''


সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি সংসদ ভেঙে দিন। নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে আমাদের ঐক্যে চলে আসুন। আপনি জিতলে আমরা মেনে নেব।


আবদুর রব বলেন, দেশ থেকে স্বৈরাচার হটাতে আমরা মাঠে নামবো। এ জন্য জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। রাজনৈতিক নেতাদের কারাগারে বন্দি করে রাখা হচ্ছে। আমরা রাজপথে নামলে কাউকে বন্দি রাখা যাবে না। নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবে। উই ওয়ান্ট জাস্টিস।



''সংবিধানের বাইরের কোনও প্রসেসে বিশ্বাস করি না''


সমাবেশে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ''আগামী দিনে যেন বর্তমান সরকারের মতো সরকার না আসে, তার জন্য রক্ষাকবচ তৈরি করতে হবে। অনেকে আমাদের কাজে গন্ধ পান। তারাই গন্ধ পান, যাদের নাক পচা। আমরা সংবিধানের বাইরের কোনও প্রসেসে বিশ্বাস করি না।''


ইভিএম প্রসঙ্গে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ''ইভিএম ছুড়ে ফেলে দেবো। পারলে সিসি ক্যামেরা লাগান। প্রত্যেক কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগান, ভোটাররা বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করবে। অধিকার আদায়ের সময় এখনই। দাবি আদায়ের সময় এখন। আমরা যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি। ড. কামাল ও আমি সাইন করেছি।''



''ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই''


সমাবেশের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়াই আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই।


তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশে উন্নয়নের নামে অবাধে লুটপাট চলছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের নামে জনগণের টাকা অপচয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা ও স্বর্ণ গচ্ছিত রাখাও নিরাপদ নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধনীর সংখ্যা বাড়ার যে প্রবণতা তাতে বাংলাদেশের নাম সবার আগে- এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। এ থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটা ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে।



প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, এখানে ধনী আরও ধনী হচ্ছে, গরিব আরও গরিব হচ্ছে, মধ্যবিত্তরা টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে। তাই জনশক্তি রফতানিতে ধস নেমেছে। প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছেন না। কতিপয় ধনিক শ্রেণি দেশের সম্পদ লুট করে বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছে।


জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক বলেন, কেউ কেউ আমাদের এ জাতীয় ঐক্যের প্রচেষ্টাকে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। আমরা প্রকাশ্য সভা করছি। কোনো গোপন বৈঠক করছি না। যারা জনগণের শক্তিকে ভয় পায়, তারা জনগণের সংগঠিত হওয়ার প্রচেষ্টাকে ষড়যন্ত্র বলে জনগণকেই অপমান করছে।



তিনি বলেন, আমরা জনগণের ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে- বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। জনগণ তাতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। মৌলিক বিষয়ে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে। এখন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার সময় এসেছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবে, ইনশাআল্লাহ।


সভা পরিচালনা করেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব ও ফরোয়ার্ড পার্টির সভাপতি আবম মোস্তফা আমিন। আলোচনা শেষে সমাবেশের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তেল গ্যাস খনিজসম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।



সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আহবান


আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে থেকে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান দশম সংসদ ভেঙে দিতে হবে।


এছাড়া, আগামী ১ অক্টোবর থেকে সারাদেশে সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়।


বিবার্তা/হাসান/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com