শিরোনাম
যুক্তফ্রন্ট-গণফোরামের ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে’র ঘোষণা
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:২৯
যুক্তফ্রন্ট-গণফোরামের ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে’র ঘোষণা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে’র ঘোষণা দিয়েছে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাঁচটি দাবি ও নয়টি লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য এ ঐক্যের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।


শনিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের নেতারা এ ঘোষণা দেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘোষণার জন্য সমাবেশ করার কথা থাকলেও অনুমতি না পাওয়ায় তা হয়নি বলে জানান নেতারা। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব একটি মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের বাইরে কয়েক কদম এগিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের অনুমতি দেয়নি। পরে প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।


সংবাদ সম্মেলনে দাবি ও লক্ষ্য পড়ে শোনান নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। সেখানে বলা হয়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সব স্বাধীনতাবিরোধী দল ও ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি, নাগরিক সমাজসহ জনগণকে সুসংগঠিত করে পাঁচ দফা দাবি ও নয়টি লক্ষ্য বাস্তবায়নে অহিংস গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ঘোষণা দেয়া হয়।


পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো-


১. জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে তফসিল ঘোষণার আগেই বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।


২. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।


৩. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা যাবে না।


৪. নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত মোট ৪০ দিন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।


৫. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর যুগোপযোগী সংশোধন করতে হবে।


জাতীয় ঐক্য নয়টি লক্ষ্যের কথাও জানিয়েছে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে তারা কী করবে, এই লক্ষ্যে তা বলা হয়েছে। তাদের লক্ষ্য হলো:


১. এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানের জন্য সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, ন্যায়পাল নিয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকর করা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও সৎ যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠন করা।


২. দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন ও দুর্নীতির দায়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা।


৩. বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতা ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা।


৪. কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা।


৫. জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতি ও দলীয়করণ থেকে মুক্ত করা।


৬. বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা আনা, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।


৭. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা।


৮. ‘সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’-এই নীতির আলোকে পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা।


৯. প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমরসম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।


এ ঐক্যের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে জানানো হয়, ১৮ সেপ্টেম্বর খুলনায় এবং ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশ করা হবে।


মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্যের পর আজকের সংবাদ সম্মেলন যে সংক্ষিপ্ত হবে তার ঘোষণা দেন আ স ম রব। এর কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁদের শহীদ মিনারে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। সে জন্য ছোট পরিসরেই তাঁরা সংবাদ সম্মেলন সারছেন। আর বেশ গরম থাকাকেও সংবাদ সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।


সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশে হত্যা, গুম চলছে। এসব থেকে রাষ্ট্র ও সমাজকে মুক্ত করতে হবে। সেই মুক্তির জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। যাঁরা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন, তাঁরাই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবেন।


জনগণের উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, কালোটাকা ও সাম্প্রদায়িকতার প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে। এ ছাড়া পাড়ায় ও ঘরে ঘরে ঐক্য গড়ে তোলার জন্য বলেন। কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ ঐক্য কাজ করবে বলে তিনি জানান।


সম্প্রতি কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের প্রশংসা করে গণফোরামের সভাপতি জানান, যেকোনো ন্যায্য দাবির আন্দোলনে তাঁদের সমর্থন আছে। এ ছাড়া আজ থেকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য শুরু বলে ঘোষণা দেন।


সংবাদ সম্মেলনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রমুখ।


বিবার্তা/রোকন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com