শিরোনাম
নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকিতে বিএনপি
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০১৮, ২০:০৭
নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকিতে বিএনপি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

‘দুর্নীতিপরায়ণ’ ব্যক্তি দলের নেতৃত্ব দেয়ার অযোগ্য হবেন’— দলীয় গঠনতন্ত্রের এমন গুরুত্বপূর্ণ ৭ নম্বর ধারাটি বাদ দিয়ে নানামুখী বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বিএনপি। একটি অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে গিয়ে পুরো ধারাই বাতিল করেছে দলটি।


বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে যে কোনো সময় দলটিকে তলব করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমনকি নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকিও রয়েছে।


অন্যদিকে কাউন্সিলের প্রায় দুই বছর পর নির্বাচন কমিশনে দলীয় ‘গঠনতন্ত্র’ জমা দিলেও এখনো তা প্রকাশ করেনি বিএনপি। অথচ এ ইস্যুতে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা কোনো মন্তব্য করছেন না।


বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারায় ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শিরোনামে বলা ছিল, ‘নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যে কোনো পর্যায়ের যে কোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে ‘অযোগ্য’ বলে বিবেচিত হবেন। তাঁরা হলেন : (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি; (খ) দেউলিয়া; (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি; (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।’


এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী এটা দলীয় কাউন্সিলে অনুমোদন করাতে হবে। কিন্তু বিএনপি তা করেনি। বিএনপির চেয়ারপারসনের একক সিদ্ধান্তে দলীয় ফোরামে আলোচনা ছাড়াই এই সংশোধনী আনা হয়েছে। এ ছাড়া এটা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এ কারণে বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকি রয়েছে।


এ ব্যাপারে বিএনপির একাধিক শীর্ষনেতার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দলটির সাবেক এক সংসদ সদস্য বলেছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৪২ থেকে ৭৮ ধারায় ক্রিমিনাল অফেন্স অংশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি দুই বা ততোধিক বছর দণ্ডিত হলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। বিএনপি যেটা করেছে তা মোটেও ঠিক হয়নি। তারা ৭ (ক) অনুচ্ছেদ বাদ দিয়ে বাকিগুলো রাখতে পারত। কিন্তু তা করেনি। তাহলে কি বিএনপিতে উন্মাদ, দেউলিয়া, কুখ্যাত বা সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা সদস্য হতে পারবে? আরপিওর সঙ্গে সাংঘর্ষিক—এই অজুহাত ধরে নির্বাচন কমিশন চাইলে বিএনপির নিবন্ধনও বাতিল করতে পারে।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার আগে আনা এই সংশোধনী কেবল বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব কুক্ষিগত করে রাখার ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। এই সংশোধনীর মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও বিএনপির নেতৃত্বে থাকার পথ সুগম করা হয়েছে। কার্যত শীর্ষ নেতাদের পদে রাখতেই ৭ ধারা বিলোপ করা হয়েছে। এই বিতর্কের মধ্যেই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে।


২৮ জানুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে দেখা করে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেন। এর পর থেকে সংশোধিত গঠনতন্ত্র থেকে ৭ নম্বর ধারা বাতিল করা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। মূলত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে বহাল রাখার জন্য ওই ৭ নম্বর ধারাটি বাতিল করা হয়েছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। কেননা ইতিমধ্যে আদালতের রায়ে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দণ্ডপ্রাপ্ত।


ওই সময় নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মূলত বিএনপির গঠনতন্ত্রসহ সাংগঠনিক বিষয়ক কিছু নথি জমা দিতে তারা নির্বাচন কমিশনে এসেছিলেন। বিএনপির যে কাউন্সিল হয়েছে সেখানে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং গঠনতন্ত্র সংশোধন ছাড়াও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত আছে। সেই জিনিসগুলোর কপি নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছেন তারা।


বিএনপি নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে এসব সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়। দলীয় চেয়ারপারসন ও কাউন্সিল অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে খালেদা জিয়া ইসিতে পাঠানো চিঠিতে লিখেছিলেন, সংশোধনীগুলো কাউন্সিলের অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হলে সর্বসম্মতিক্রমে তা অনুমোদিত হয়।


গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ইসিতে নিবন্ধিত হওয়ার সময় দলীয় গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়। পরবর্তী সময়ে তা সংশোধন করা হলে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিল হলেও সেখানে আনা সংশোধনী দীর্ঘদিন ইসিতে জমা দেয়নি দলটি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপিকে চিঠিও দেয়া হয়। অবশেষে কাউন্সিলের ১ বছর ১০ মাস পরে চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি তা ইসিতে জমা দেয় বিএনপি।


বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির এই সংশোধনীর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন দলটির কাছে ব্যাখ্যা চাইতে পারে। একই সঙ্গে ষষ্ঠ কাউন্সিল অধিবেশনে সংশোধনীর মূল তালিকাও তলব করতে পারে ইসি। এ ছাড়া ৭ নম্বর ধারা বিলুপ্তি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সঙ্গে সাংঘর্ষিক এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হতে পারে।


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com