শিরোনাম
৭ প্রস্তাব দিয়ে সংবিধান সংশোধনের আহবান ড. কামালের
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:৫৯
৭ প্রস্তাব দিয়ে সংবিধান সংশোধনের আহবান ড. কামালের
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদ সংক্রান্ত বিষয়ে দুটি প্রস্তাব দিয়ে সংবিধান সংশোধনের আহবান জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। শনিবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি প্রস্তাব দেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক দলের সদস্যপদ ত্যাগ করবেন এবং একই ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।


এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আনয়ন এবং নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানমূহের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বর্তমান সংবিধানের সময়োপযোগী সংশোধনের জন্য একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাবও দেন তিনি।


এসব বিষয়সহ মোট সাত দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন তিনি। জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত গণফোরামের বর্ধিত সভায় এসব প্রস্তাবনা গৃহীত হয়।


বর্ধিত সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, এক ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার বিধান উপমহাদেশের বহু দেশেই রয়েছে। আগামীতে সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে যারা সরকার গঠন করবে তারা যেন সংবিধানে এসব বিধান যুক্ত করেন সেলক্ষ্যেই প্রস্তাবগুলো দেয়া হয়েছে।


এক প্রশ্নের জবাবে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে- সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করা উচিত হবে না। কারণ সংসদ বহাল রাখাটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে কিনা তা সবাই জানে। ৪৬ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সংসদ বহাল রাখা উচিত নয়। তাছাড়া পরিস্থিতির আলোকে নির্বাচনে প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন করতে পারার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের থাকা উচিত। যারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না তারাই বলবে- সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে, কে ভোটে এলো কী এলো না তাতে কিছু যায় না, সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন হবে, ইত্যাদি। কিন্তু দেশের মানুষ অনেক সচেতন। জনগণ সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। নির্বাচন হতে হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। বলা হচ্ছে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন; আলহামদুলিল্লাহ, সংবিধানের মূল কথাই হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন।’


তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনেকেই সরকারের সদিচ্ছা দেখছে না। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি তৎকালীন বিএনপি সরকার একটি একতরফা নির্বাচন করতে চেয়েছিল। সেদিন সেটির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী, আমরা সবাই ওনার শুভাকাক্সক্ষী, ওনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি- ওনার সেসময়ের বক্তব্যগুলো আজ আবার মিডিয়ায় ছাপানো দরকার।’ এসময় ড. কামাল বলেন, ‘ক্ষমতার স্বাদ এমন এক স্বাদ যা পেলে কেউ আর ছাড়তে চায় না, কিন্তু ক্ষমতার স্বাদ যতোই হোক সেটিকে আঁকড়ে রাখা উচিত নয়। যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা কায়দা করে এমন নির্বাচন করতে চান যেন ক্ষমতাটা তাদের হাতেই থেকে যায়, এমন নির্বাচন আমরা স্বৈরাচারের আমলেও দেখেছি।’


বিএনপির সঙ্গে জোটে যাওয়া প্রসঙ্গে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা জোট নিয়ে শুরু করছি না। জনগণকে নিয়ে শুরু করতে চাই। কার সঙ্গে জোটে যাব কী যাব না তা নির্বাচন আসলে দেখা যাবে। জনগণের জোটের লক্ষ্য একটাই- দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য দরকার সুস্থ রাজনীতি, রুগ্ন রাজনীতির ফল হলো সন্ত্রাস। এই লক্ষ্যে দলীয় রাজনীতিরও সংস্কার প্রয়োজন।


সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলন, এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটা বাতিলের ঘোষণা এবং এ ইস্যুতে চলমান ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে ড. কামাল বলেন, ‘সমাজে যারা অনগ্রসর, মুক্তিযোদ্ধা- এরকম যারা আছেন তাদের জন্য বিশেষ কারণে কোটা বিবেচনাযোগ্য। কিন্তু এই বিশেষ সুবিধা চিরদিন চলতে পারে না। এটা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। অনগ্রসরদের সমান পর্যায়ে এনে সমাজে বৈষম্য না রাখার কথাই বলা আছে সংবিধানে।’


ড. কামাল হোসেন বলেন, আমাদের আজকের বর্ধিত সভায় সারাদেশ থেকে নেতারা এসেছেন। তারা সবাই বলেছেন- দেশের মানুষ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এখানে সমস্যা আছে, তবে হতাশা নেই। সবাই বলছে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে হবে। এজন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দরকার। সংবিধান অনুযায়ী জনগণ যেন দেশের মালিকানা ফিরে পেতে পারে সেজন্য জাতীয় ঐক্য দরকার।


সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/বিপ্লব/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com