শিরোনাম
অবৈধ ক্ষমতা দখলের দিনে এরশাদের ‘নতুন বার্তা’
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০১৮, ২০:৪২
অবৈধ ক্ষমতা দখলের দিনে এরশাদের ‘নতুন বার্তা’
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

উচ্চকিত কণ্ঠে ‘নতুন বার্তা’ দেয়ার কথা বলেছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটির মহাসমাবেশে তার সেই ‘নতুন বার্তা’ হলো আগামী নির্বাচনে জিতে তিনি ফের ক্ষমতায় আসবেন। কারণ জনগণ তার প্রতীক্ষায়।


তবে অনেকেই হয়তো খেয়াল করেননি, এরশাদ যখন গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলছেন এবং নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে বিভোর, ৩৬ বছর আগে ঠিক এই দিনটিতেই তিনি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। সেই অর্থে বলা যায়, জাপার এই মহাসমাবেশ ছিলো এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখলের বার্ষিকী উদযাপন।


যদিও দলীয়ভাবে বা এরশাদ নিজে সমাবেশের জন্য আজকের দিনটি বেছে নেয়ার ব্যাপারে কিছু বলেননি। তবে মহাসমাবেশ করে এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখল উদযাপনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন জাতীয় পার্টির ঢাকা দক্ষিণ মহানগর শাখার সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।


বাবলা বলেন, স্যার (তিনি) জাতির কাছে বার্তা দেবেন- এ লক্ষ্যে প্রথমে আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৫ ফেব্রুয়ারিতে সমাবেশ করার অনুমতি চাই। কিন্তু তখন বইমেলা চলার কারণে সিদ্ধান্ত বদলে ২৪ মার্চ আমাদের স্যারের ক্ষমতায় আসার দিনটিকেই উদযাপনের জন্য বেছে নেই। তবে এই সমাবেশ ছাড়া এরশাদের ক্ষমতায় আসার দিনটি উদযাপনে আর কোনো আয়োজন রাখা হয়নি বলেও জানান জাপার এই সংসদ সদস্য।


জাপার এই সমাবেশে সারাদেশ থেকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এসেছেন। এরশাদের ভাষায়- এত বড় সমাবেশ জীবনে তিনি দেখেননি।


১৯৮৪ সালের আজকের দিনটিতে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে প্যারেডের মহড়া চলছিল সেনাবাহিনীর। কিন্তু এরশাদের সামরিক শাসন জারি হলে মহড়া থামিয়ে শত শত সেনা সদস্য নগরীতে অবস্থান নেন। সেদিন দুপুরের দিকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন এরশাদ। একমাত্র টিভি চ্যানেল বিটিভি এবং রেডিও চ্যানেল রেডিও বাংলাদেশে (সে সময় এই নাম ছিল) প্রচার করা হয় এই ভাষণ।


সেদিন এরশাদ বলেন, ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ বুধবার থেকে আমি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করছি। আমি যে কোনো ব্যক্তিকে দেশের প্রেসিডেন্ট মনোনীত করতে পারি। যিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি অথবা আমার মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের যেকোনো বিচারপতির কাছে শপথ গ্রহণ করে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। আমি সময় সময়ে এ মনোনয়ন বাতিল বা রদ করতে পারি এবং আর এক ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হবেন এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রূপে আমার উপদেশ অনুসারে কাজ করবেন এবং আমি তাকে যেসব কাজের দায়িত্ব দেব তা পালন করবেন।


সংবিধান স্থগিত করে সেদিন তিনি জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। সামরিক আইন জারির সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার কেউই তাদের পদে বহাল ছিলেন না।


এরশাদ সেদিন সামরিক শাসন জারির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন অনেক আশা নিয়ে জনগণ একটি সরকার নির্বাচিত করেছিলো, কিন্তু অল্প কিছুকাল পরেই তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধুলিসাৎ হয়ে যায়। আমি এই মুহূর্তে ক্ষমতা গ্রহণ না করলে দেশ এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তো। আপনার ইতিমধ্যেই পত্রিকা মারফৎ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনাহারে মৃত্যুর সংবাদ পাচ্ছিলেন।


পরদিন ২৫ মার্চ থেকেই জারি করা হয় সান্ধ্য আইন। ৯ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা ৪২ থেকে নামিয়ে আনা হয় ১৭-তে। ১১ এপ্রিল ঢাকা জেলা ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, আমি এমন এক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব, যা ইতিহাস হয়ে থাকবে।



নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন


অবশ্য বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠানে এরশাদ ইদানীং তার ক্ষমতা দখলের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। গত ১ জানুয়ারি রাজধানীতে দলীয় এক অনুষ্ঠানে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখলকারী এরশাদ সে সময় ক্ষমতা গ্রহণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে দাবি করেন, দেশের পরিস্থিতিতে তিনি সেদিন বাধ্য হয়েছিলেন, তার জায়গায় অন্য কেউ সেনাপ্রধান হলে তিনিও বাধ্য হতেন।


‘সুখ তো নাই-ই, দুঃখের কথা বলি’- এই বলে সেই ইতিহাস বর্ণনা করেন। বলেন, জাস্টিস সাত্তার (জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি) আমার কাছে এসে বললেন, তার মন্ত্রীরা দুর্নীতিবাজ, তাই তিনি ক্ষমতা সেনাবাহিনীর কাছে ছাড়তে চান। আমি ছিলাম সেনাবাহিনীর প্রধান, আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও ক্ষমতা নিতে হতো। তাই ১৯৮২ সালে বাধ্য হয়ে আমি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেই।


এরশাদের দাবি, তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। বলেন, আমি ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছি, তাই ১৯৮৪ নির্বাচন দিয়েছিলাম, তখন জাতীয় পার্টি ছিল না। কোনো দল আসেনি।


পরে ১৯৮৬ সালে এরশাদ জাতীয় নির্বাচন দেন। তবে বিএনপি সেই নির্বাচনে না আসায় এবং ভোটে কারচুপি করে জাতীয় পার্টির জয়ের অভিযোগ ওঠার পর রাজনৈতিক সংকট বজায় থাকে।


১৯৮৮ সালে আবার নির্বাচন হলে তা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-দুই প্রধান দলই বর্জন করে। পরে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণআন্দোলনের মুখে এরশাদের পতন হয়।


বিবার্তা/রোকন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com