শিরোনাম
বিএনপিকে ভোট দেয়ার হাজারো কারণ আছে : সোহেল
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:১০
বিএনপিকে ভোট দেয়ার হাজারো কারণ আছে : সোহেল
জাহিদ বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি'র সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলের রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক অতীত। তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে শুরু করে আজকের এ পর্যায়ে এসেছেন। ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলেরও। বর্তমান সরকারের আমলে ছয় বার কারাবরণ করেছেন তিনি। মাথার ওপর ঝুলছে অনেক মামলা। এমন অবস্থায়ও আত্মবিশ্বাস হারাননি তিনি। বিবার্তা'র সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে মানুষ বিএনপিকেই ভোট দেবে। কারণ, বিএনপিকে ভোট দেয়ার হাজারটা কারণ আছে।


সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তা'র জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহিদ বিপ্লব


প্রশ্ন : দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী ?


সোহেল : বর্তমানে যে দলটি ক্ষমতাসীন রয়েছেন তারা জনপ্রতিনিধিত্বশীল নয়। যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি, স্বাভাবিকভাবেই তারা জনমতের তোয়াক্কা করে না। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনগণ। হচ্ছেও তাই। আজ দেখুন, চাল-পেয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব দ্রব্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার উর্দ্ধে। দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে জনগণ হাঁপিয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নানান অপকর্মে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেমন ভেঙ্গে পড়েছে, মানুষও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।


প্রশ্ন : আপনারা অনেকদিন যাবত ক্ষমতায় নেই, রাজপথের আন্দোলনেও দেখা যাচ্ছে না। কারণটা কী?


সোহেল : রাজপথে নেই, কথাটি ঠিক নয়। বিরোধীদের মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার যে পন্থা অবলম্বন করছে, দেখলে হিটলার-মুসোলিনীও লজ্জা পেতেন। সভা-সমাবেশে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা বললে ঠিক হবে না, কার্ফু চলছে। অতীতে আমরা যেসব জায়গায় সভা-সমাবেশ করতাম, যেমন পল্টন ময়দান, প্রেসক্লাব, মুক্তাঙ্গনসহ সারাদেশের জনসমাবেশের সমস্ত স্থানে, আজ সেসব স্থানে সব ধরনের সমাবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাজপথে মিছিল বের হওয়ামাত্র সরাসরি গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে, যা পাকিস্তান আমলেও হয়নি। এমন একটি পরিস্থিতিতে বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় দল, যারা সুষ্ঠু স্বাভাবিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু সকল পরিস্থিতিকে সামনে রেখে আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।


প্রশ্ন : সরকারি দলের নেতারা বলছেন বিএনপি শেষ হয়ে গেছে। আপনি কী বলেন ?


সোহেল : আসলে তারা যে স্বপ্ন রাতে দেখেন, তা দিনে প্রকাশ করেন। বিএনপিকে ধ্বংস করার শক্তি আওয়ামী লীগ কেন, পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া কারো নেই। উপরন্তু, আমরাই বলতে পারি, যারা বাংলাদেশকে রাজনীতিশূন্য করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদেরই ধ্বংস হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। এদেশের ১৬ কোটি মানুষ সময়ের অপেক্ষায় আছেন। সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগকে তারা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে। জনগণ বিশ্বাস করে, যারা তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয় তাদের রাজনীতি করার অধিকার এদেশে নেই।


প্রশ্ন : সরকার বা সরকারি দল বলে থাকে আপনারা সন্ত্রাসী ও রাজাকারের সহযোগী। এ অভিযোগ কী সঠিক?


সোহেল : ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছিলো তাদের সাথে নিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগও বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলো। যে অপরাধে আমরা অপরাধী সে সমান অপরাধে আওয়ামী লীগও অপরাধী। সুতরাং তাদের মুখে এ অভিযোগ মানায় না। আরা তাছাড়া ১৯৭১ সালে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে তারা যেমন রাজাকার, আজকে ক্ষমতায় থাকার জন্য যারা বাংলাদেশের স্বার্থ ও স্বাধীনতা বিকিয়ে দিচ্ছে, তারাও এক ধরনের রাজাকার।


প্রশ্ন : পেট্রোল বোমা হামলার জন্য আপনাদের দায়ী করা হয়, কিন্তু আপনাদের দিক থেকে এর কোনো জবাব আসে না। তাহলে আপনারা কী এর দায়ভার নিচ্ছেন?


সোহেল : আমরা এধরণের অভিযোগের প্রতিবাদ সবসময়ই জানিয়েছি। কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যে তা যাচাই করার মালিক উপরে আল্লাহ আর নিচে জনগণ। জনগণ বিশ্বাস করে, অতীতে যারা শেরাটনের সামনে বোমা মেরে, গান পাউডার দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, তাদের দ্বারাই সম্ভব পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা। এই আওয়ামী লীগ ১৯৭২-৭৫ সালে ৪০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিলো। এই দলই এখন বিরোধীদের আন্দোলনের সময় পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে তার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে ফাঁসানোর জন্যই এগুলো করা হচ্ছে।


এদেশের জনগণই বিএনপির শক্তি। কোনো বিদেশী শক্তির সহযোগিতায় বিএনপি ক্ষমতায় আসে না। জনগণই ভোট দিয়ে আমাদের ক্ষমতায় বসায়। সুতরাং সেই জনগণের ক্ষতি করার মতো বোকামি বিএনপি কখনই করবে না।


প্রশ্ন : জনগণের কাছে আপনাদের প্রতিশ্রুতি কী? জনগণ আগামী কেনো আপনাদের ভোট দেবে ?


সোহেল : সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, একমাত্র বিএনপিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থ রক্ষা করতে পারে, যা আমরা বারবার প্রমাণ করেছি। বিএনপি কখনই ক্ষমতাকে বড় করে দেখেনি, বরং জনগণের স্বার্থ ও ভোটাধিকারকে আমরা বড় করে দেখেছি। আমরা চাইলে ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নিতে পারতাম। কিন্তু যেখানে জনগণের ভোটাধিকারের কোনো নিশ্চয়তা ছিলো না, সে কারণে আমরা সে সমস্ত নির্বাচনে যাইনি। অর্থাৎ আমরা ক্ষমতাকে নয়, জনগণের ভোটের অধিকারকে বড় করে দেখেছি। বিএনপি কখনই নিজ স্বার্থে রাজনীতি করে না, করে জনগণের স্বার্থে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের সুযোগ-সুবিধা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তাদের জী্বনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তাদের গুটিকয়েক নেতাকর্মীই কেবল লাভবান হয়। আমাদের আমলে শ্রমিক, শিক্ষক, সরকারী-বেসরকারী কর্মচারি তথা সকল শ্রেণীর পেশাজীবীরা ভালো থাকেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এ সমস্ত পেশাজীবীর মধ্যে যারা তাদের চাটুকারিতা করে তারাই ভালো থাকে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে দেশের অর্থনীতি বিকশিত হয়, নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ব্যাংকগুলো সচল থাকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়। ব্যাংকগুলোর শুধু খোলস থাকে, ভেতরে কিছুই থাকে না। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভোগে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ছোট-বড়-মাঝারি সব ধরনের ব্যবসায়ীরই ব্যবসা বিকশিত হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগের গুটিকয়েক ব্যবসায়ী লাভবান হয়। আমরা ক্ষমতায় থাকলে কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পান। জনগণ শান্তিতে ঘুমাতে পারে। কিন্তু ওরা ক্ষমতায় থাকলে জনগণের জীবন থেকে শান্তি উধাও হয়ে যায়, চোখ থেকে ঘুম চলে যায়। সুতরাং বিএনপিকে দেশবাসী কেন ভোট দেবে - এর হাজারো কারণ আছে।


প্রশ্ন : সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি বা এরশাদ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী? তাদের সাথে আগামীতে কোনো জোটের সম্ভাবনা আছে কিনা?


আজকে যে অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আছে, তা জাতীয় পার্টির সহায়তায়। তারা এই সরকারের সব অপকর্মের অংশীদার। দেশের ক্রান্তিলগ্নে আমরা দেখেছি এরশাদ ও শেখ হাসিনা সবসময় জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সকাল-বিকাল রাতে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলে রাজনীতিতে হাসির খোরাক সৃষ্টি করেছেন এরশাদ। তার কারণে তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিবিদদের নিয়ে ফান করে। তবে যত ভিন্ন কথাই বলুক শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সুরেই কথা বলেছেন। সব নাটক শেষে দেখা গেছে দুই স্বৈরাচার এক সাথেই থেকেছেন বারবার। আমাদের দল বা জোটের কেউ জাতীয় পার্টি এবং এরশাদকে ন্যূনতম বিশ্বাস করে না, পছন্দ করে না।


প্রশ্ন: আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার রায় হবে। রায় বিপক্ষে গেলে এবং তিনি যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সেক্ষেত্রে কী করবেন?


সোহেল: শেখ হাসিনা জানেন কিনা জানি না, যাদের পরামর্শে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাজানো মামলা চালাচ্ছেন তারা শেখ হাসিনাকেও জেল খাটার পথ প্রশস্ত করছেন। যদি কেউ এই স্বপ্নে বিভোর থাকেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাজা দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে দেশে নির্বাচন করবেন, তাহলে বলবো সেই স্বপ্ন শিগগিরই দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। জনগণের ভোটাধিকার এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন হবে, এটাই শেষ কথা।


বিবার্তা/বিপ্লব/কাফী /হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com