
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এমন একটা দেশ আপনারা চান যে সমাজে চঁদাবাজি থাকবে না, যে সমাজে ঘুষখোর থাকবে না, যে সমাজে দখলবাজি চলবেনা, যে সমাজে মানুষে মানুষে বৈষম্য হবে না।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, যে সমাজে ধর্মে ধর্মে কোন বৈষম্য হবে না এমন মানবিক বাংলাদেশ চাইলে আরো অনেক লড়াই করতে হবে, ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। তিনি বলেন, এদেশকে আমরা অন্তরে ধারণ করি। এদেশের প্রত্যেকটা মানুষকে সম্মান করি এবং ভালবাসি। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখবো, দেখবো না তিনি মুসলমান না হিন্দু।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, প্রায় ১৬টি বছর আওয়ামী লীগ দেশকে শোষন করেছিল। তারা দেশ প্রেমের ও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে লুটপাট চালিয়েছিল। তাদের চুরি ও লুটপাটের কথা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
২৬ লতার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক ছিলেন। তাহলে মালিকের কত টাকা। এই কুষ্টিয়ার পাশেই রুপপুর পারমনবিক কেন্দ্র। এই একটা প্রকল্পথেকে তারা ৫৭ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। লক্ষ হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছে। যা বাংলাদেশের ৪টি বাজেটের সমান।
তার বোন শেখ রেহানা, ভাগিনা বৃটিশ এমপি টিউলপসহ অন্যরা ভাগাভাগি করেছে। দুর্নীতির দায়ে টিউলিপের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে লন্ডনেও সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করেছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার, তবে তাদের কোন লজ্জা নেই।
জামায়াত আমীর আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে তার একটি রুপরেখা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষ জামায়াতকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসার সুযোগ দিলে সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা, ইজ্জতের হেফাজত করবে। জামায়াতকে নিয়ে অনেক অপপ্রচার চালানো জয়। জামায়াত না-কি ক্ষমতায় আসলে নারীদের নিরাপত্তা থাকবে না। মহিলারারা মায়ের জাতি।
আমরা নারীদের মায়ের মত সম্মান করি। তাদের সব স্বাধীনতা থাকবে। অন্য ধর্শ ও কাউকে জোর করে পর্দা করানো ও চাপিয়ে দেওয়া ইসলাম আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তার প্রমান আমার স্ত্রী ডাক্তার, রাজনীতিবিদ। আমার দুই মেয়ে ডাক্তার ও ছেলে ডাক্তার।
অনেকে বলেন, আমরা নারীদের কালো বোরকায় আবদ্ধ করবো। বোরকা কালো হবে না, সাদা হবে না বেগুনি হবে তা চয়েজ করা আমাদের কাজ নয়। তবে আমার কথা অনেক সাংবাদিক উল্টা-পাল্টা কোড করেন। সেটা কেউ কেউ।
জামায়াত আমীর বলেন, মদিনা সনদ ছিল মুসলিমদের প্রথম সংবিধান। মদিনা সনদের প্রথম ৫টি ধারায় সব দলমত নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তার কথা ছিল। আমরাও সেই নিরাপত্তা বিধান করতে চাই।
আওয়ামী লীগ গেলেও দেশে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখণ বন্ধ হয়নি। এটা আগে একদলের কাছে ছিল, এখন আরেক দলের হাতে গেছে। আমি সরকারকে বলেছি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৮ কোটি মানুষ আপনাদের সাথে আছে। ৫ আগষ্ট অসংখ্য মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, দুই চোখ হারিয়েছি, কেউ এক পা, এক হাত হারিয়েছে। অনেকে পঙ্গু হয়ে হজাসপাতালের বিছানায়। তাই আমরা এদেশ গড়তে চাই। রাষ্ট্র সবার সমান অধিকার দিয়েছে। আল্লাহর কুরআনও সকলকে সমান অধিকার দিয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে বিভাজন করা হবে না। সবাই নিরাপত্তার সাথে
তার নিজের ধর্ম পালন করবে। এটা মদিনা সনদে পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোন ম্যাজরিটি-মাইনোরিটি নেই। কিসের
ম্যাজরিটি-মাইনোরিটি।
এদিকে দীর্ঘ ১৮বছর পর প্রকাশ্যে জামায়াত কর্মী সম্মেলনকে ঘিরে সকাল থেকেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার কর্মী মিছিল নিয়ে সরকারি কলেজে মাঠে হাজির হন। তারা নানা রকম স্লোগান দেন। দীর্ঘদিন পর এ ধরনের সভায় আসতে পেরে তারা উচ্ছাস প্রকাশ করেন।
কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়েতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বহিী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন, শামিম সাঈদী। সম্মেলনে বিভাগীয় ও স্থানীয় জামায়াত এবং শিবির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বিবার্তা/শরিফুল/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]