বর্ণিল আয়োজনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী ২০তম জাতীয় সম্মেলন শুরু হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টা ১৩ মিনিটেরাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। পরে বেলুন ও শান্তির পায়রা উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণার পর অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিমের স্বাগত ভাষণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বক্তৃতার পালা। পর্যায়ক্রমে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন আমন্ত্রিত দেশি-বিদেশি অতিথিরা। বক্তৃতাপর্ব শেষে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রথম অধিবেশন শেষ হবে।
ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সম্মেলনে আসতে শুরু করেন অতিথি ও নেতা-কর্মীরা। রাজধানী জুড়ে নেয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
জোহরের নামাজের পর দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জেলার সাংগঠনিক লিখিত রিপোর্ট উপস্থাপন করা হবে। সন্ধ্যায় হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এবারের জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’।
উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া দেশের সাবেক কূটনীতিক ও রাষ্ট্রদূত, খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকেরাও আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, প্রবেশমুখ এবং ঢাকার বাইরের জেলাও সেজেছে নানা রঙের বাতি আর পোস্টার-ব্যানারে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতাদের বসার জন্য স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন নৌকা আকৃতির বিরাট মঞ্চ। ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬৫ ফুট প্রস্থের এই মঞ্চে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল প্রদর্শনী। মঞ্চের দুপাশে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধুসহ প্রয়াত জাতীয় নেতাদের প্রতিকৃতি। বিভিন্ন প্রবেশপথ থেকে সম্মেলনস্থল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিভিন্ন অর্জনের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে।
মূল মঞ্চ হয়েছে পাঁচ স্তরের। একেবারে সামনের অংশটির উচ্চতা হবে আড়াই ফুট। যেখানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হবে। সাত ফুট উচ্চতার স্থানটিতে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বসবেন। আর পেছনের বিভিন্ন উচ্চতার তিন সারিতে কেন্দ্রীয় নেতারাসহ ৫৮ জনের বসার স্থান করা হয়েছে।
মঞ্চের সামনে বিশাল প্যান্ডেল করা হয়ে গেছে। এর ভেতরে ২০ হাজার চেয়ার রাখা হয়েছে। রয়েছে ১৬টি এলইডি টেলিভিশন। মূল মঞ্চ থেকে মৎস্য ভবন, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর পর্যন্ত শতাধিক মাইক স্থাপন করা হয়েছে।
সম্মেলন উপলক্ষে সাজানো হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকা। উদ্যানে আলোকসজ্জার পাশাপাশি গাছগুলোতে করা হয়েছে সাদা-লাল রং। মঞ্চে যাওয়ার রাস্তাগুলোকে আলোকসজ্জার পাশাপাশি সম্মেলনের পোস্টার-ব্যানার দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঝিলে কৃত্রিম শাপলা স্থাপন করা হয়েছে। ঝিলের পাড়ে প্রয়াত জাতীয় নেতাদের ছবি দিয়ে সজ্জায় এসেছে ব্যতিক্রমী ধাঁচ।
আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবন এবং তার সরকারি কার্যালয়সহ রাজধানীর উল্লেখযোগ্য সড়কগুলো বিভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক দিন আগ থেকেই জেলা-উপজেলার উল্লেখযোগ্য সড়ক ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে তৈরি করা হয়েছে অভ্যর্থনা গেট। সেখানে অপেক্ষারত স্বেচ্ছাসেবকেরা আগত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেবেন। ঢাকার স্থানীয় সাংসদেরা এই দায়িত্ব পালন করবেন।
আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন এবং ঢাকা শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। সম্মেলনস্থলে লাগানো হয়েছে প্রায় ১৪০টি সিসি ক্যামেরা।
এছাড়া উদ্যানের চারপাশের রাস্তা, নগরের সব কটি প্রবেশপথ এবং অন্যান্য স্থানেও নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। শুক্রবার বিকেল চারটার পর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। আজ সকাল আটটায় জাহাঙ্গীর গেট থেকে শাহবাগ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান-সংলগ্ন বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ থাকবে।
বিবার্তা/জাকিয়া/যুথি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]