
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে প্রায় আড়াই মাস হলো। এই সময়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠনসহ নানা ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে বিএনপির বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে বিএনপির সাথে বৈঠক করেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
এরপরই দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে এ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, একই দাবিতে আন্দোলন করা দুটি বড় শক্তির মধ্যে কি নতুন দূরত্ব তৈরি হলো?
বিএনপির সাথে এ নিয়ে বৈঠক করেও এখনও পর্যন্ত কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
তাহলে কি সরকার পতনের আড়াই মাসের মাথায় আওয়ামী লীগ বিরোধীদের মধ্যে ঐক্যে ফাটল ধরলো সেই প্রশ্নও তৈরি হয়েছে।
বিএনপি বলছেন, সাংবিধানিক সংকট তৈরির হতে পারে এমন আশঙ্কার জায়গা থেকেই এই পথে হাঁটতে চাচ্ছে না তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটাকে দূরত্ব বা ফাটল বলা যাবে না। তারা রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন করতে আমাদের সাথে আলোচনা করেছে। আমরা তাদের বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে এভাবে রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
এই প্রশ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করছে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে বিএনপি যে সংকটের কথা ভাবছে সেটি রাজনৈতিক। যেটি আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, হয়তো বিএনপি ভাবছে এখন রাষ্ট্রপতি অপসারণ হলে আগামী নির্বাচন আয়োজন বিলম্বিত হতে পারে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করবো যেনো প্রয়োজনের তুলনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একদিনও বেশি না থাকে।
তবে দূরত্ব যে একেবারে তৈরি হয়নি, সেটি কিন্তু জোরালোভাবে বলেনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
গত কয়েকদিনে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে এই ইস্যুতে আলোচনা করছে ছাত্রদের পৃথক দুটি প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাষ্ট্রপতির এই মুহূর্তে কোনো ক্ষমতা নেই। তাই তাকে অপসারণ বা তিনি পদে থাকলে খুব বেশি সংকটও তৈরি হবারও কথা না।
গত সপ্তাহে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে একটি পত্রিকার সম্পাদকের কাছে সাক্ষাৎকার দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনা পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই।
মূলত সাক্ষাৎকারে দেয়া রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্যকে ঘিরে দেশজুড়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে গত মঙ্গলবার বঙ্গভবন ঘেরাও করে ছোটখাটো কয়েকটি সংগঠন।
একই দিন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে আল্টিমেটামও দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
পরদিনই বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তারা জানান, এই মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট তৈরি হোক সেটি তারা চান না।
এরপর গত শনিবার বিএনপির সাথে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বৈঠক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।
কিন্তু ছাত্র নেতাদের সাথে বৈঠকেও তাদের আগের অবস্থানে অনড় ছিল বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা এই ইস্যুতে সংকট বা সাংবিধানিক শূন্যতা চাইছি না দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রে উত্তরণের স্বার্থে।”
কারণ হিসেবে বিএনপি অবশ্য বলছে এই মুহূর্তে এই সংকট তৈরি হলে তা অন্য কোনো অসাংবিধানিক শক্তিকে সুযোগ করে দিতে পারে।
তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন সাংবিধানিক সংকটের চেয়ে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুটি আরো বেশি রাজনৈতিক।
যেহেতু প্রথম দফার আলোচনায় রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে কোনো একক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি দলগুলো, সে কারণে আবারও দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু করার কথা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু তাতেও কি বিএনপিকে রাজি করানো সম্ভব হবে? আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সমাধান কী?
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, ১২ জোটসহ অন্যান্য দল এবং জোট রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে ছাত্রদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তবে তাদের কেউ কেউ আগে রাজনৈতিক ঐকমত্যকেই গুরুত্ব দিয়েছে। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে এটি বড় কোনো সংকট নয়।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]