শিরোনাম
আ. লীগের জাতীয় সম্মেলন, যুগে যুগে
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:১৮
আ. লীগের জাতীয় সম্মেলন, যুগে যুগে
তৌফিক ওরিন
প্রিন্ট অ-অ+

শনিবার শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ১৯টি সম্মেলন করেছে দলটি। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য ৭টি বিশেষ সম্মেলনও হয়েছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে দলের ভবিষ্যত নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। তাছাড়া সংকটকালে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বিশেষ সম্মেলন করে থাকে দলটি।


১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলীয় সভাপতি হয়েছেন সাত জন এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন নয় জন। এর মধ্যে বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ সাতবার সভাপতি এবং সবচেয়ে বেশি চারবার করে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান।


১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে জন্ম নেয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে ১৯৫৫ সালের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সব ধর্ম-বর্ণের প্রতিনিধি হিসেবে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয় আওয়ামী লীগ।


দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান নাদিম বিবার্তাকে এ সব তথ্য জানান।


প্রথম জাতীয় সম্মেলন


আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে প্রথম জাতীয় সম্মেলনে প্রতিনিধি ছিল প্রায় ৩০০জন। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। পরে প্রতিনিধিদের সমর্থনে ৪০ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান। সম্মেলন স্থান ছিল রোজ গার্ডেন।


দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন


১৯৫৩ সালের ৩ থেকে ৫ জুলাই মুকুল সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সম্মেলন। এই সম্মেলনেও সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা ভাসানী। আর সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান।


তৃতীয় জাতীয় সম্মেলন


১৯৫৫ সালের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর রূপমহল সিনেমা হলে তৃতীয় সম্মেলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয় দলের। এ সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী মুসলিম লীগের মুসলিম শব্দটি বিয়োজিত হয়ে অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। এ সম্মেলনে প্রথমবারের মত পাঁচজন নারীও অংশ নেন। এ সম্মেলন পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।



চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন


তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের পর দলের মধ্যে বিভক্তির কারণে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন মওলানা ভাসানী। ১৯৫৭ সালের ১৩ জুন রাজধানীর আরমানিটোলার নিউ পিচকার হাউজে এবং পরদিন গুলিস্তান সিমেনা হলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রতিনিধি ছিল আটশত জন। এ প্রতিনিধিদের ভোটে মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।


পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন


দলের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৪ সালে। ৬ মার্চ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছিল প্রায় এক হাজার। এতে পুনরায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মওলানা তর্কবাগীশ ও শেখ মুজিবুর রহমান।


ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন


১৯৬৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনটি ছিল আওয়ামী লীগের জন্য ঐতিহাসিক একটি সম্মেলন। এ সম্মেলনে মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবিটি দলীয় ফোরামে পাস হয়। ১৮ থেকে ২০ মার্চ হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। আর প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমেদ। এতে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪৪৩ জন।


সপ্তম জাতীয় সম্মেলন


১৯৬৮ সালে তৎকালীন দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে আটক তখন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সম্মেলন। ১৯ থেকে ২০ অক্টোবর হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রায় এক হাজার চারশত ৫৩ জন কাউন্সিলর ও ডেলিগেট এতে অংশ নেন। এতে আবার শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক পুনঃনির্বাচিত হন।


অষ্টম জাতীয় সম্মেলন


১৯৭০ সালে স্বাধীনতা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের আগমুহূর্তে উত্তাল সময়ে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের অষ্টম জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনের মাধ্যমে ছয় দফা ও ১১ দফা গ্রহণ করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নেয় আওয়ামী লীগ। ১৯৭০ সালের ৪ থেকে ৫ জুন হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে কাউন্সিলর ছিল এক হাজার ১৩৮ জন। কাউন্সিলরদের ভোটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।



নবম জাতীয় সম্মেলন


১৯৭২ সালের ৭ থেকে ৮ এপ্রিল নবম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলন। সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় সার্কিট হাউজ রোডের ১১২ নং বাড়িতে; যেটি ছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন এবং পুর্নবাসনসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য শপথ নিয়ে এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।


দশম জাতীয় সম্মেলন


আওয়ামী লীগের ১০ম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১১২ সার্কিট হাউজ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এ কাউন্সিলে কাউন্সিলর ছিল এক হাজার ৫৬৬ জন এবং ডেলিগেট ছিল তিন হাজার। এ সম্মেলনে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারতসহ ২২টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এ সম্মেলনের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দেন। এই সম্মেলনে এ এইচ এম কামরুজ্জামান সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।


একাদশ জাতীয় সম্মেলন


১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর তৎকালীন সামরিক সরকারের ভয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ঘরছাড়া হন। এতে নেতৃত্বশূন্য হয় দলটি। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৭৭ সালের ৩ থেকে ৪ এপ্রিল হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে দলের ১১তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে কাউন্সিলর ছিলেন প্রায় একহাজার ৪০০ জন এবং ডেলিগেটও প্রায় সমসংখ্যক ছিল। এতে দলের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন।


দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলন


১৯৭৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয় দলটির ১২তম জাতীয় সম্মেলন। ৩ থেকে ৫ মার্চ হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে প্রায় এক হাজার ৫০০ কাউন্সিলর এবং সমসংখ্যক ডেলিগেট নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ সম্মেলনটি। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন আবদুল মালেক এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবদুর রাজ্জাক।


ত্রয়োদশ জাতীয় সম্মেলন


১৯৮১ সালের ১৩তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দলীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য এ সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বে আনা হয় বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। ১৯৮১ সালের ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছিল তিন হাজার ৮৮৪ জন। সভায় শেখ হাসিনা সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।


পরে ১৯৮২ সালে আব্দুর রাজ্জাক দলত্যাগ করলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।


চতুর্দশ জাতীয় সম্মেলন


১৯৮৭ সালের ১ থেকে ৩ জানুয়ারি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের ১৪তম জাতীয় সম্মেলন। এতে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছিল প্রায় চার হাজার। সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।


পঞ্চদশ জাতীয় সম্মেলন


১৯৯২ সালের ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলের ১৫তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ দুই থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করা হয়। এতে কাউন্সিলর ছিল প্রায় দুই হাজার ৫০০ ও ডেলিগেটও ছিল সমসংখ্যক। এতে শেখ হাসিনা সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।


ষষ্ঠদশ জাতীয় সম্মেলন


১৯৯৭ সালের অনুষ্ঠিত ১৬তম জাতীয় সম্মেলন আওয়ামী লীগের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্মেলন। কারণ প্রায় ২১ বছর পর পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সম্মেলন। ৬ থেকে ৭ মে আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে কাউন্সিলর ছিল প্রায় দুই হাজার ৫১৬ এবং ডেলিগেটও ছিল প্রায় সমসংখ্যক। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুনঃনির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও জিল্লুর রহমান।


সপ্তদশ জাতীয় সম্মেলন


২০০২ সালে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে যাওয়ার পর পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় দলের ১৭তম জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আব্দুল জলিল।


অষ্টাদশ জাতীয় সম্মেলন


২০০৯ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় দলটির ১৮তম জাতীয় সম্মেলন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দলের নেতৃত্বে যথেষ্ট পরিবর্তন আসে। দল থেকে বাদ পড়েন এক-এগারো সময়ের বিতর্কিতরা। এ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।



উনবিংশ জাতীয় সম্মেলন


২০১২ সালে ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় দলটির ১৯তম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুর্ননির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।


আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর শুরু হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। এ জন্য দলের পক্ষ থেকে রাজধানীর জাতীয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নান্দনিক সৌন্দর্যে সাজানো হয়েছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে আবার একটি নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে দলটি।


বিবার্তা/ওরিন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com