আওয়ামী লীগ এখন গণমানুষ নয়, বেনজীর-আজীজদের দল: ফখরুল
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৪, ১৫:২১
আওয়ামী লীগ এখন গণমানুষ নয়, বেনজীর-আজীজদের দল: ফখরুল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আওয়ামী লীগ এখন গণমানুষ নয়, বেনজীর-আজীজদের দল বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে অভিন্ন নদীর পানির হিস্যাসহ কোন দাবিই আদায় করতে পারেনি। সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশি হত্যা করলেও সরকার প্রতিবাদ জানাতে পারে না।


১০ জুন, সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আধুনিক কৃষি, অভিন্ন নদীর পানি আগ্রাসন এবং জলবায়ুর ভারসাম্যহীনতা রোধে শহীদ জিয়ার ভূমিকা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।


মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের জনগণ যেমনভাবে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন, বাংলাদেশেও যেন তেমনটা ঘটে এবং সেভাবেই যেন দুই দেশের সম্পর্ক তৈরি হয়। নির্বাচন কমিশন ও আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে সেই লক্ষ্যেই আন্দোলন করছে বিএনপি।


ভারতের নতুন সরকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারতের নতুন সরকার সম্পর্কে আমার একটাই কথা, ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। নিঃসন্দেহে আমাদের অনেক প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ। আমরা ভারতের নতুন সরকারের কাছে একটাই আশা করবো, তাদের দেশে যেভাবে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, এখনও তাদের নির্বাচন কমিশন যেভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তাদের বিচার বিভাগ যেভাবে কাজ করতে পারে, আমরা ১৯৭১ সালে সেই লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম; আমরা দেশে গণতন্ত্রকে সেইভাবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমাদের যেটা প্রত্যাশা ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশের জনগণের যে প্রত্যাশা সেই প্রত্যাশাকে তারা মর্যাদা দেবেন, সেভাবেই তারা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন।


তবে ভারতের মুখাপেক্ষী আওয়ামী লীগ দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে নতজানু হয়ে আছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ক্ষমতাসীনদের দুর্বলতার কারণেই তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশে ঢুকে লোকদের হত্যা করছে।


আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, গতকালকে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার পুরোনো এক ইউনিভার্সিটির বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল। আমি নাম বলবো না, তাহলে আপনারা হয়তো অনেকেই চিনে ফেলবেন। সে এখন রাজনীতি থেকে দূরে আছে। সে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। পরবর্তীকালে সে আওয়ামী লীগ করেছে, এমপিও হয়েছে। কিন্তু এখন প্রায় ১০-১৫ বছর ধরে সে রাজনীতি থেকে দূরে সরে আছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি রাজনীতি করছ না কেন? সে বলে যে- কোন রাজনীতি করবো, আমি বললাম আওয়ামী লীগ করবা। সে বলল আওয়ামী লীগ কি আর আওয়ামী লীগ আছে? এটাতো এখন আজিজ আর বেনজীরের আওয়ামী লীগ। এই যে দেখুন একজন আওয়ামী লীগের নেতার উপলব্ধি। এটাই বাস্তবতা।


বাজেট প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বাজেট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। সম্পূর্ণ বাজেটটাই হচ্ছে তাদের লুটপাটের বাজেট।


বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারের ক্ষুধার শেষ নেই। সব কিছু খেয়ে ফেলছে। সরকারের লোকজন যার যা খুশি তাই করছে। এই যে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে দেশে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশের ৫৩ বছরের সমস্ত অর্জনগুলো ধ্বংস করে ফেলেছে। কোথাও কোন বিচার নাই, ব্যবসা করতে গেলে সরকারের লোকজনকে চাঁদা দিতে হবে। এরা পরিকল্পিতভাবে দেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এমন উন্নয়ন করেছে সরকার, জনগণ এখন ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে।


ফখরুল আরও বলেন, সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কারও কথা বলার স্বাধীনতা নেই। দেশে পুরোপুরিভাবে একটা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য যেমনভাবেই হোক এই ভয়াবহ দানব সরকারকে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠাতা করা।


বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আন্দোলন না করলে কিছু পাওয়া যাবে না। আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে বিদায় জানাতে হবে।


বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশ গভীর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক, অন্যদিকে ভৌগোলিক। তিস্তার পানি নিয়ে বহু খেলা হচ্ছে। ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও এখন পর্যন্ত তিস্তার পানি চুক্তি করতে পারেনি এই সরকার। অথচ জিয়াউর রহমান তিস্তার পানির জন্য জাতিসংঘ পর্যন্ত গিয়েছিলেন।


দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়া শুধু ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন না, তিনি ছিলেন দার্শনিক। আমরা কারও সংগ্রাম কারও অবদানকে ছোট করতে চাই না। জিয়াউর রহমানকে ছোট করা মানে দেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা তাকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারিনি, চক্রান্তকারীরা তাকে হত্যা করেছে।


জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কৃষকদলের যুগ্ম-সম্পাদক শাহাদত হোসেন বিপ্লব, কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, সাংগঠনিক দিপু হায়দার খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com