
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ১৮ কোটি মানুষের দাবি এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের আহ্বান পরোয়া না করে পূর্ব নির্ধারিত ফলাফলের একদলীয় একতরফা ভোটার বর্জিত ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে মুলতঃ বিজয় হয়েছে স্বতস্ফূর্ত ভোট বর্জনকারী গণতন্ত্রকামী বীর জনতার।
তিনি বলেন, চরম কলংকিত অপদস্তমূলক লজ্জার পরাজয় ঘটেছে গণবিচ্ছিন্ন বেপরোয়া একনায়ক মাফিয়া প্রধান শেখ হাসিনা গংদের। এই দিনটি অনন্তকাল একটি জঘন্য কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই দিনে ভোট বর্জন করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ আওয়ামী লীগকে লাল কার্ড দেখিয়েছে।৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে জনগণের অভাবনীয়-অভূতপূর্ব নীরব প্রতিবাদে একটি উদ্ভট, গণ বর্জিত প্রহসনের প্রকাশ্য অটো ভোট ডাকাতির মঞ্চায়ণ দেখলো দেশবাসীসহ গোটা বিশ্বের মানুষ।
শত ভয়-ভীতি, জেল-জুলুম নির্যাতন- প্রলোভন ও সরকারের সাড়াশি চাপ উপেক্ষা করে ভোট প্রদান না করার মাধ্যমে জনগণ এই নির্বাচনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
৯ জানুয়ারি, মঙ্গলবার বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ৭ জানুয়ারি গভীর রাত থেকে চুরি-ডাকাতি, জালভোট, শিশু কিশোর ভোট, রাস্তা থেকে পথিক ধরে নিয়ে ভোট, একই ব্যক্তির ৫০ ভোট, মিনিটে ৫০ ভোট, একই লাইন থেকে ঘুরেফিরে বার বার জাল ভোট দিয়েও বিকাল তিনটা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫% ভোটের ঘোষণা দিয়ে গণভবনের চাপে আবার এক ঘন্টা পরেই ৪০% এবং গতকাল দুপুরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোটের গোজামিলের ভৌতিক হিসাব বানানোর এই ভূয়া হাস্যকর নির্বাচন ভোটের ইতিহাসে কলংক তিলক উৎকীর্ণ করলো ডামি সরকার।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই অংশগ্রহণহীন ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি প্রদান করেছে। বিশ্বের সমস্ত মিডিয়া এবং পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনকে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও ভোটার সম্পর্কহীন পুরোপুরি ‘ওয়ান উইম্যান শো’-এর ঘোষিত জয়-পরাজয়ের ভোট বলে আখ্যায়িত করেছে। পাতানো ডামি নির্বাচনের ফাঁদে পা দেয়নি দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ। সারা দেশের ভোট কেন্দ্রগুলো ছিল ভোটারশূন্য।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার এই প্রহসনমূলক নির্বাচন দেশকে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা ব্রিটিশ পর্যবেক্ষক জেজ কৌলসন সাংবাদিকদের বলেছেন, আই ফাউন্ড দ্য নর্থ কোরিয়া মডেল হিয়া’র। বাংলাদেশে উত্তর কোরিয়া স্টাইলের একদলীয় নির্বাচন হয়েছে।
রিজভী বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর আবারো অভিনব কায়দায় বিরোধীদলহীন, ভোটারবিহীন ভোট ডাকাতির একটি ডামি নির্বাচন করার জন্য গত ৫ বছর গণবিচ্ছিন্ন শেখ হাসিনা বিএনপিসহ বিরোধীদল ও ভিন্ন মতের প্রতিটি মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের গুম খুন নির্যাতন মিথ্যা মামলা হুলিয়া গৃহছাড়া করেছে। জনপদগুলো গডফাদার-সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ-কিলার বাহিনীর মাধ্যমে জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ বানিয়েছে। দেড় লক্ষাধিক মিথ্যা মামলায় অর্ধকোটির বেশি বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। কোটির অধিক বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্বাস্তু করেছে। কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে বন্দি করে রেখে মৃত্যুর মুখে নিপতিত করেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, দেশকে করেছে বৃহৎ কারাগার। কারা হেফাজতে প্রতিদিন বিএনপি’র নেতাকর্মীদের কারো না করো মৃত্যুর সংবাদ আসছে। নতুন নতুন কালাকানুন করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশা ও সাধারণ জনগনকে শৃংখলিত করেছে। আচার-বিচার-আইন আদালত, পুলিশ, সিভিল প্রশাসন সবকিছু দলীয়করণ করে প্রতিষ্ঠা করে সমস্ত মৌলিক অধিকার কবর দিয়ে ভয়ের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া বানিয়েছে। সিন্ডিকেট করে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বি করে দূর্ভিক্ষের পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে। দেশের জনগণকে ভোটারহীন করে রিফিউজিতে পরিণত করেছে। এতো কিছু করার পর শেখ হাসিনার পরিকল্পিত এই স্বেচ্ছাচারি একতরফা প্রহসনের ভোটার বর্জিত নির্বাচনের পর এখন কদর্য উল্লাসে মেতে উঠেছে। ডামি নির্বাচনের ডামি প্রার্থীরা এখন ডামি পার্লামেন্টে নেতৃত্ব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদের কোন বৈধতা নেই। এক মূহুর্তে ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই। এই অবৈধ সরকারকে জনগণ মানে না। আমি এই মুহূর্তে পাতানো গণবিরোধী ডামি নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় জনগণের চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আরো দুর্বার করে এই ডামি সরকারের পতন ঘটানো হবে। ইনশাআল্লাহ ।
রিজভী বলেন, পুরোপুরি এই ‘ওয়ান উয়োম্যান শো’-এর ঘোষিত জয়-পরাজয় ও ভোটের দেখানো সংখ্যা নিয়ে বিশ্লেষণ করার বা আনন্দ-বেদনা প্রকাশের কিছু নেই। কাউকে দিবে কিঞ্চিৎ এবং কাউকে করবে বঞ্চিত - এই ধারার এক স্বেচ্ছাচারি একতরফা প্রহসনে শেখ হাসিনা কাউকে জিতিয়েছেন, কাউকে হারিয়েছেন। সবই ভেলকিবাজি ও তার মর্জির ফল। এর সঙ্গে জনগণ, ভোটার বা অন্য কারুর কোনও সম্পর্কই নেই। সাধারণ মানুষের এই বর্জন বর্তমান ‘ডামিক্রেসী সরকার’ ও শাসকগোষ্ঠীর প্রতি নীরব গণ-অনাস্থার সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। দৃশ্যমান এই অনাস্থা ক্ষমতাসীনদের ন্যূনতম বৈধতার ভিত্তি তাসের ঘরের মতো গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ভোটার সংখ্যা বাড়ানোতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সরকার একটি স্বাধীন দেশের মর্যাদা ভুলুন্ঠিত করেছে এবং প্রজাতন্ত্রের জনগণের উপর কলঙ্ক লেপন করেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফল যে পুর্বনির্ধারিত তা প্রকাশ্যে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম রবিবার রাতে ফলাফল ঘোষণার সময় মিডিয়ার মাইক্রোফোন অন রেখে আওয়ামী দলদাস কর্মকর্তাদের সাথে সলাপরামর্শ করার সময় ফাঁস করে দিয়েছেন। যা মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে গোটা দেশের জনগণ অবলোকন করেছেন।
বিবার্তা/রুবেল/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]