শিরোনাম
আলোচনায় খালেদার সেই দুই মামলা
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৪৩
আলোচনায় খালেদার সেই দুই মামলা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিষয়টিকে যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন সবচেয়ে হট বিষয় হচ্ছে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুটো দুর্নীতি মামলা। কারণ এই দুই মামলায় খালেদার সাজা হলে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে মামলার রায় যা-ই হোক না, কেন, এই মুহূর্তে খালেদার মামলার সম্ভাব্য রায় নিয়ে রাজনৈতিক ময়দান বেশ সরব।


চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় ছিল ‘নির্বাচন কমিশন’। সেই স্থান এখন দখল করে নিয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচারাধীন ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টি মামলা’র বিষয়টি। কারণ, মামলা দুটোর বিচারকাজ এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। তাছাড়া মামলা দুটোর রায়ে খালেদা জিয়ার শাস্তি হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে আইনি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। মূলত, সে শঙ্কা থাকায় রাজনৈতিক অঙ্গনে মামলা দুটো এখন অধিক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন ধরেই এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’ দলের শীর্ষ নেতারা পাল্টপাল্টি বক্তব্যও রাখছেন।


সরাসরি রাজনীতি করেন এমন লোকজনের বাইরে তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষের মধ্যেও মামলা দুটো নিয়ে কৌতুহল দেখা যাচ্ছে। তাদের কৌতূহলী প্রশ্ন- শেষ পর্যন্ত মামলার রায়ে কি খালেদা জিয়াকে শাস্তি ভোগ করতে হবে? আবার কেউ বলছেন, শাস্তি হলে তো খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে আইনগত কারণেই। সে ক্ষেত্রে কি দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করবে। নাকি খালেদা জিয়াকে ছাড়াই নির্বাচনে যাবে বিএনপি। অনেকে আবার বলছেন, দলীয় চেয়ারপার্সন দণ্ডিত হলে কি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে?


অবশ্য এ মামলা দুটো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। অস্বস্তি ছিল বিএনপি শিবিরেও। তবে সম্প্রতি এ আলোচনায় নতুন মাত্রা পাওয়ায় বিএনপির ভেতরে-বাইরেও মধ্যে এক ধরনের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শুক্রবার এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করার পর। প্রধানমন্ত্রী জার্মানির মিউনিখে আওয়ামী লীগের সংববর্ধনা সভায় মন্তব্য করেন, আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হবেই। যদি সত্যি কোর্টের কাছে কাছে এভিডেন্স থাকে চুরি করেছে, তাহলে শাস্তি হবে। সেজন্য তারা ইলেকশন হতে দেবে না। কত আবদারের কথা!


এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরদিন শনিবার বগুড়ায় কৃষকদলের সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু অভিযোগের সুরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্নভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে করা মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তিনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকে ‘মিথ্যা মামলা’ বলেও দাবি করেন।


প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, এমনিতেই রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নির্বাচনকেন্দ্রিক যে পরিবেশ বিরাজ করছে সেটিকেই বাধাগ্রস্ত করছে। নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ সৃষ্টি হচ্ছিল সেটিকে হতাশাগ্রস্ত করেছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলা প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে মামলটি রাজনৈতিক। সরকার রাজনৈতিকভাবেই মামলার বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। দুদকসহ বিভিন্ন সংগঠন তো আওয়ামী লীগেরই। এ মামলার মাধ্যমে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। কারণ, আওয়ামী লীগ যতই নিজেদের জনপ্রিয় দল বলুক না কেন আসলে তারা ভেতরে ভেতরে বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভয় পাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে রায় হয় এবং আইনি কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন? এমন প্রশ্নে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, শাস্তি আদালতেই হবে। তবে রাজনৈতিকভাবে। এটা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নয়। গণতন্ত্রকে বঞ্চিত করে আওয়ামী লীগ যে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে সেটা হবে না। জনগণ তা মানবে না।


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সব বক্তব্য আমলে নিতে হবে নাকি? উনি তো অনেক কিছুই বলেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম মামলটিরও (নাইকো আমলা) আসামি ছিল শেখ হাসিনা। তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে তো মামলাটি প্রত্যাহার করা হলো। সাহস থাকলে মামলা চালাক। এখন আমাদের জন্য কথায় কথায় জেল নাকি। তবে রাজনীতি যখন করি জেলে যাওয়া নিয়ে আমাদের ভয় নেই। রাজনৈতিক কর্মীদের ‘সেকেন্ড হোম’ (দ্বিতীয় বাসস্থান) হচ্ছে জেল। আমরা মনে করি উনার বক্তব্য (প্রধানমন্ত্রী) রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। মামলটিও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেউ যদি মনে করেন খালেদা জিয়াকে জেলে দিলেই বিএনপি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে সেটাও ভুল। একই উদ্দেশ্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকেও তো মেরে ফেলেছিল। কই, বিএনপি তো এখনো ঠিকে আছে। দলীয় চেয়ারপারসনের সাজা হলে দলের নিবন্ধন বাতিলের সুযোগ নেই বলেও মনে করে তিনি।


আইনি বাধার কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচনে যেতে না পারলে নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা বিএনপির নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, প্রতিহতের কথা নাইবা বললাম। আমরা যদি নির্বাচন না করি তাহলে! গতবার তো বিনাভোটে ১৫৩টি জিতে রেকর্ড করছিল। এবার কি তাহলে ৩শ আসনেই বিনাভোটে জিতে আবারো তারা রেকর্ড করতে চায়। করুক।


এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের শরিক ‘এনপিপি’র আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কোনো ‘মিথ্যে’ মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠালে এ দেশে নির্বাচন হবে না। কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের একদিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি একই বিষয়কে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাজশাহী কলেজ মাঠে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা যদি নির্বাচনে অযোগ্যও হন, তবুও নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা বিএনপির নেই।


উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশন ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাটি করে। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য দেয়ার তারিখ নির্ধারিত আছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এ দিন ধার্য্য করা হয়েছিল। গত বছরের ১ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সাফাই সাক্ষী দিবেন বলে আদালতকে জানান।


এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অপর মামলটিও করেছিল দুদক। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের্‌ মামলাটি ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় দায়ের করা হয়। এ মামলায় ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এ মামলটিও এখন চূড়ান্ত বিচারের পর্যায়ে আছে।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com