
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ সময় তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান।। দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশের মাটিতে পা ফেলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। দেশে ফেরার পর থেকে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে টানা চার দশকের বেশি সময় ধরে সফল ভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
কারাবরণ ও কমবেশি ২০ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া থেকে শুরু করে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁর দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বে চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে ১৮ বছর ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দেশে যখন খুন, হত্যা, রাহাজানি চলছিলো। গণতন্ত্র যখন নির্বাসিত ছিলো। ঠিক সেই সময়ে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য জীবনের মায়া ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলার মাটিতে পা রাখেন। তীরহীন অন্ধকার সেই সময় পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আলোয় উদ্ভাসিত। তার শাসনামলেই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ম্যাজিকমাত্রা সূচিত হয়েছে। চরম দারিদ্রশীল দেশ থেকে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে কাছে উন্নয়নের রোল মডেল।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মতে, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিলো। গুম, খুনের পাশাপাশি নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়ে দলের নেতা-কর্মীরা যখন দিশেহারা ঠিক সেই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে সুসংগঠিত করেছেন তিনি। ফলে আজ সফলতার সাথে চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রপরিচালনা করছে স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
১৯৮১ সালে দেশ যখন এক ভয়াবহ পরিস্থিতি ঠিক সেই সময়ে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বিবার্তাকে বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছিলো, তাদের লক্ষ্য ছিলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে নির্মূল করা। যাতে করে বাংলাদেশকে আবারো একাত্তরের পরাজিত শক্তির তাবেদার রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। সেই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার কার্যক্রম শুরু করেছিলো। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা, গুম করা হয়েছিলে। অনেকে নির্যাতন করা হয়। আওয়ামী লীগকে খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, এরকম এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হলেন। শত বাঁধা-ভয় উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি জনগণকে ধীরে ধীরে সামরিক স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করেন। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম শেষে ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হলেও ২০০৮ সালের সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। এরপর থেকে টানা তিন বারের মত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আজকে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ চরম দারিদ্রের দেশ থেকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আমরা মনে করি এটা জাতির জন্য বিরাট এক প্রাপ্তি।
তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে আজ আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবার্তাকে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বাংলাদেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলো। বাঙালি জাতির আশা, সম্ভাবনার সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিলো। ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ ধ্বংস করে দিয়েছিলো। শেখ হাসিনার আগমনের মধ্য দিয়ে মানুষের ভিতরে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাহস সঞ্চারিত হয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই-সংগ্রাম করে ২১ বছর পর সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেশকে মূলধারায় আবার ফিরিয়ে এনেছেন। জাতির পিতা হত্যাকারীদের বিচার করেছেন। জেলখানার হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর হয়েছে। শেখ হাসিনা সেই অন্ধকার দেশকে আলোকিত বাংলাদেশে পরিণত করেছেন।
দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, বোমাবাজরা, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা কি করেছে বাংলাদেশে? কোথায় নিয়ে গিয়েছিলো দেশকে? গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে বিএনপি-জামাত রাষ্ট্রক্ষমতায় কিনা করেছে- এমনটি উল্লেখ করে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সেখান থেকে বাংলাদেশকে অনন্য, অসাধারণ উচ্চতায় নিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। বাঙালি জাতিকে সম্মানের, মর্যাদার জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন। বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ইমার্জিং টাইগার হিসেবে পরিণত করেছেন। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।
শেখ হাসিনার চার দশকের রাজনীতিতে বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বিবার্তাকে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার লক্ষ্যকে, মূল্যবোধকে এবং চেতনাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছে খুনী মোশতাক ও জিয়াউর রহমান। নিরাপদ, সুন্দর বাংলাদেশের ধারণাকে হত্যা করা হয়েছিলো। এরপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, মুক্তিযুদ্ধে চেতনা যারা ধারণ করে সেই সব মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলো। সেই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকে হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন করে গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করা হয়েছে। মানবাধিকারকে হত্যা করা হয়েছে।
মোজাম্মেল হক আরো বলেন, মানবতা বিবর্জিত কাজ করে তারা বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে করিয়েছিলো। তখনই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলেন এবং বাঙালি জাতির মাঝে ফিরে আসেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সারা বাংলাদেশের হাটে-বাজারে-জনপদে মানুষকে সংগঠিত করেছেন। তাকে ২০ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সবকিছু উপেক্ষা করে তিনি আমাদের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য লড়াই করেছেন এবং তা ফিরিয়ে এনেছেন। কোনো কিছুই তাকে দাবায়ে রাখতে পারেনি। আজকে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বদলে গেছে। যে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ, ব্যর্থ রাষ্ট্র বলা হত, সেই দেশ আজকে উন্নয়নের মডেল।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি- উন্নয়ন, সমৃদ্ধিতে পৃথিবীতে রোল মডেল হয়েছে। শেখ হাসিনা সারা পৃথিবীতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন, আজকে তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাহস নিয়ে সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ নিরাপদ। বাংলাদেশ যতদিন শেখ হাসিনার হাতে থাকবে, পথ হারাবে না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনাই পারছেন এবং পারবেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বিবার্তাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশে আসেন, তখন কেমন ছিলো বাংলাদেশ? অন্ধকার, খুন, হত্যা-রাহাজানির বাংলাদেশ ছিলো। সামরিক শাসনে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক দল বিএনপি ছিলো। মানুষের জানমালের যখন কোনো নিরাপত্তা ছিলো না, গণতন্ত্র যখন নির্বাসিত। ঠিক সেই সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য শেখ হাসিনা বাংলার মাটিতে পদার্পণ করেন।
আফজাল হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পর দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠত হয়, আইনের শাসন প্রতিষ্টিত হয়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক রাজাকার-আলবদরদের বিচার হয়েছে এবং বাংলাদেশ আলোকজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে পাঁ বাড়ায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করা হয়। আজকে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে সোনার বাংলা প্রতিষ্টিত হচ্ছে। দেশ আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার ওপর মানুষের আস্থা, বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে। দেশ আবার মূল ধারায় ফিরে এসেছে। তাঁর নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজকে সমৃদ্ধ। বাঙালি জাতি শেখ হাসিনার ফিরে আসার দিনটিকে অনন্য দিন হিসেবে স্মরণ করে।
বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/কেআর
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]