করোনা মহামারিতে দেশজুড়ে অসহায়-দুস্থদের পাশে দেখা গেছে যুবলীগ নেতা-কর্মীদের। লকডাউনে যুবলীগের মানবিক কার্যক্রম সর্বমহলে প্রশংসাও কুঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় তৃণমূলের সাথে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ ছিলো যুবলীগ নেতাদের।
তবে স্তিমিত হয়ে পড়েছিলো দলকে সংগঠিত করার কার্যক্রম। আর তাই এখন দলকে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল ও শক্তিশালী করতে জেলাগুলোতে বর্ধিত সভা শুরু করেছে যুবলীগ।
যুবলীগ নেতারা বলছেন, টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও যুবলীগের তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী অবহেলিত, অবজ্ঞার শিকার হয়ে দল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। দলের দুঃসময়ের এসব সাথীদের আবার ফিরিয়ে আনা, সংগঠনকে গতিশীল করা, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করা, অচলায়তন ভেঙে প্রবাহমান ধারায় নিয়ে আসার জন্য শুরু হয়েছে জেলা সফর।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব নেতা ইতোমধ্যে শুরু করেছেন সাংগঠনিক জেলা সফর। চলতি মাসে ২০টি জেলায় বর্ধিত সভা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ধিত সভা। আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে আরো ৯ জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা।
যুবলীগ নেতাদের মতে, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চার মূল নীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির বাংলাদেশ গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখছে যুবলীগ। শোকের মাস আগস্টে রাজধানীতে ধারাবাহিকভাবে অসহায়-দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে যুবলীগ। দেশজুড়ে মাসব্যাপী এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। মানবিক কাজের পাশাপাশি সাংগঠনিক দক্ষতা তৈরির জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যুবলীগ।
দলের দফতর সেল সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে গত ১০ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী জেলা ও ১১ সেপ্টেম্বর বরগুনা জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর এবং ২৪ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা করার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম বিবার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বলেছেন। এ অবস্থায় দলকে গতিশীল করা, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করা, অচলায়তন ভেঙে প্রবাহমান ধারায় নিয়ে আসার জন্য যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত ১০-১২ বছরে আমাদের অনেক তৃণমূলের কর্মী হারিয়ে গেছে। যারা অবহেলিত, অবজ্ঞার শিকার হয়েছেন, যাদের ত্যাগে-শ্রমে আওয়ামী লীগ সমৃদ্ধ হয়েছে, আমাদের দুঃসময়ের এসব সাথীদের আবারও ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা কাজ করছি। এছাড়া তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জাগিয়ে তোলা, তাদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার করা, উজ্জীবিত করার জন্য বর্ধিত সভা করা হচ্ছে।
বদিউল আলম বলেন, আমাদের কেন্দ্রের সম্মেলন হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়নের প্রতিটি জায়গায় সম্মেলন করা হবে। মানবিক যুবলীগের যারা আছে তাদেরকে সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমাদের কার্যক্রম চলমান।
চট্টগ্রাম উত্তর সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মশিউর রহমান চপলের নেতৃত্বে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর, ২২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী ও ২৩ সেপ্টেম্বর ফেনী জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।
যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মশিউর রহমান চপল বিবার্তাকে বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পরে জেলাগুলোতে করোনার কারণে যেতে পারেনি। বর্ধিত সভার মাধ্যমে বর্তমান তৃণমূলের অবস্থা জানা দরকার। দলকে গতিশীল করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেসব ইউনিটে যুবলীগের সাংগঠনিক কমিটি নেই বা যেখানে আছে সেগুলো নতুন করে সাজাতে হবে। জেলায় জেলায় বর্ধিত সভা করায় নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক স্পিরিট তৈরি হচ্ছে। এতে সংগঠন আরো গতিশীল হবে। তৃণমূলে সংগঠনকে কিভাবে এগিয়ে যেতে হবে সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।
রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নাটোর, ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী জেলা ও রাজশাহী মহানগর যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।
যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা বিবার্তাকে বলেন, আমাদের কমিটির মেয়াদ থাকে তিন বছর। করোনা পরিস্থিতির কারণে বেশিরভাগ কমিটির মেয়াদ শেষের দিকে। করোনায় যুবলীগ সাধারণ মানুষের পাশে ছিলো। বর্তমান অবস্থায় দলকে আরো সংগঠিত করা, কর্মকৌশল ঠিক করা এবং কমিটিগুলোকে নতুন করে সাজানোর কাজ চলছে। রাজশাহী বিভাগে যুবলীগের নয়টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে চারটিতে কমিটি আছে বাকি পাঁচটিতে কমিটি গঠন করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। বর্ধিত সভার মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সাথে দলের সম্পর্ক অটুট রাখার জন্য আমরা কাজ করছি।
এছাড়া ঢাকা উত্তর সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল আলম জোয়ার্দার সৈকত ও সাধারণ সম্পাদক মো. জহির উদ্দিন খসরুর নেতৃত্বে গত ১১ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলা ও ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের এবং ১২ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বে ১৫ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাঙ্গামাটিতে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. ড. শামীম আল সাইফুল সোহাগের নেতৃত্বে ১৫ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহে ও বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মাগুরা জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর ৭ম জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে যুবলীগের নতুন কমিটি গঠিত হয়। এ সম্মেলনে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান ও মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
বিবার্তা/সোহেল/গমেজ/আরকে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]