শিরোনাম
জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সংকট মোকাবেলার আহ্বান ফখরুলের
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২১, ১৮:৩৮
জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সংকট মোকাবেলার আহ্বান ফখরুলের
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে দেশের চলমান সংকট মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিএনপি চেয়ারপার্সনের অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।


সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, সরকারের উদাসীনতা, অগ্রাধিকার নির্ধারণে ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের অপকৌশল হিসেবে করোনা সংক্রমণের তথ্য গোপন ও সীমাহীন ব্যর্থতা আজ পুরো দেশকে এক বিপদ সঙ্কুল পথে নিয়ে চলেছে।


তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনা সনাক্ত এবং মহামারী আকারে সংক্রমণের পর সারা বিশ্বের জনবান্ধব রাষ্ট্রগুলো যখন সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করে- বাংলাদেশের সরকার তখন স্বভাবসুলভ বলতে শুরু করে, “আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী”। “যে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সে দেশে করোনা কিছইু করতে পারবে না।” এসব উন্মাদীয় বক্তব্য দিয়ে তারা জনগণের সাথে প্রতারণা শুরু করে এবং করোনা প্রতিরোধে সামান্যতম উদ্যোগ গ্রহণ না করে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে বিভোর থাকে।


গত বছর দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুর সময়ের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে যখন বিমান চলাচল সীমিত এবং যাত্রী প্রবেশে কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করলো, বাংলাদেশ তখনও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন ও নির্বিকার থাকলো। করোনাক্রান্ত দেশ চীন, ইতালি, স্পেন মধ্যপাচ্য থেকে প্রচুর প্রবাসী কর্মহীন হয়ে পড়ায় কিংবা নাড়ীর টানে দেশে ফিরে আসে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে হৈচৈ শুরু হলে তারা বললো, করোনা প্রতিরোধে বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়েছে। অথচ দেখা গেলো ১টি ছাড়া সবগুলো থার্মাল স্ক্যানারই ছিল নষ্ট। অনেকটা যথাযথ করোনা পরীক্ষা ছাড়াই বিদেশ থেকে বিশেষ করে করোনা সংক্রমণ দেশ থেকে আসা প্রায় ৬.৫ লক্ষ প্রবাসী দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এটাই হল সরকারের করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক ব্যর্থতা। ঠিক একই ভাবে, দেশে ৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে করোনার নূতন স্ট্রেইন ধরা পড়লেও তা গোপন রাখা হয়। সরকার তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপন করে এবং সংক্রমণের বাস্তবচিত্র গোপন করে।


তিনি বলেন, সরকার জনস্বার্থ উপেক্ষা করে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমগ্র প্রশাসনকে ব্যস্ত করে রাখে। এতে করে করোনা সংক্রমণ দমন ও নিয়ন্ত্রণে বিলম্বের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।


সরকারের সমন্বয়হীনতা ও কৌশলগত পরিকল্পনার অভাব রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শুরু থেকেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সরকারের অসহায়ত্ব ও চরম সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান। জাতীয় পরামর্শক কমিটি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নীতি নির্ধারকদের মধ্যে কোন সমন্বয় ছিল না। পরামর্শক কমিটির সিদ্ধান্ত মানা হয়নি। সরকারী সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেন না। লকডাউন না করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়। পোশাক শিল্পের কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় অবগত নয়। কোভিড-নন কোভিড হাসপাতাল নির্ধারণ, চিকিৎসকগণ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম ছিল চরম হতাশাব্যঞ্জক।


তিনি বলেন, চীনা বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান ডা: ওয়েন বীও এর মতে, “বাংলাদেশে অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো কাজ হয়েছে”। এভাবে ভাইরাস মোকাবেলা করা সত্যিই কঠিন। কার্যকর লকডাউন, দ্রুত বেশি সংখ্যক পরীক্ষা, কন্টাক্ট ট্রেসিং ও চিকিৎসার পরিধি বাড়ানোর মাধ্যমে পরিক্ষিত উত্তরণ সম্ভব ছিলো- কিন্তু তা করা হয়নি। আমরা তখনও এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানালেও সরকারের একগুঁয়েমির কারণে তা সম্ভব হয়নি, ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।


হাসপাতালের প্রস্তুতি না থাকা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেয়া হলেও সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসার উপযোগী করা হয়নি। তাছাড়া হাসপাতালকে কোভিড-নন কোভিড চিহ্নিত করে আলাদা না করায় দেশে স্বাস্থ্য সেবায় চরম নৈরাজ্য পরিলক্ষিত হয়েছে। করোনা রোগীরা যেমন হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেনি, তেমনি সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। ঘটেনি।


তিনি বলেন, দেশের অন্তত: ৪৬টি জেলায় যথাযথ চিকিৎসার সুবিধা সম্বলিত ওঈট/হাইফ্লো অক্সিজেন/ ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা এক বছরেও গড়ে তোলা হয়নি। দেশের ৭৯ টি সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরির কার্যক্রম হাতে নেয়া হলেও সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও উদাসীনতায় ৫০% অগ্রগতিও হয়নি এক বছরে।


করোনায় টেস্ট নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, কতিপয় বেসরকারী হাসপাতালের করোনা বাণিজ্যের সুযোগ করে দেয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনা পরীক্ষা ও আক্রান্তদের চিকিৎসায় এ বাণিজ্য চরমে পৌছে। বেসরকারী হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণে সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। এছাড়া পরীক্ষা ছাড়া রিপোর্ট প্রদান করে, রিজেন্ট-জেকেজিসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। চিকিৎসা সেবায় ভূতুড়ে বিলের বিষয়গুলোতো গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। এক ঘণ্টার অক্সিজেন বিল ৮০ হাজার টাকা, চিকিৎসা ব্যয় লক্ষ লক্ষ টাকা এগুলো সংবাদ মাধ্যমেই আমরা পেয়েছি।


বিবার্তা/জাহিদ/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com