শিরোনাম
এরশাদবিহীন জাপার এক বছর, রয়ে গেছে পুরনো অনৈক্য
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২০, ১৯:৫৪
এরশাদবিহীন জাপার এক বছর, রয়ে গেছে পুরনো অনৈক্য
জাহিদ বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

আগামী ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। বিগত এক বছর এরশাদের হাতে প্রতিষ্ঠিত জাপা চলেছে এরশাদের অনুপস্থিতিতে। তবে এরশাদ জীবিত থাকাবস্থায় জাপায় শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে অনৈক্যর যে সুর ছিলো, মৃত্যুর এক বছরের মাথায়ও সেই পুরানো অনৈক্য বহাল রয়েছে। তারপরও এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই পুরো পার্টির নেতৃত্বের ভার এখন পযর্ন্ত তার ভাই জিএম কাদেরের হাতেই রয়েছে। বিশেষ করে জাপার কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের অভূতপূর্ব সমর্থন নিয়ে জিএম কাদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মূলত শক্ত হাতেই জাপার হাল ধরেন তিনি। তবে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর পার্টির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিতর্কের মুখে পড়েন জিএম কাদের। দুরত্ব সৃষ্টি হয় এরশাদ পত্নী বেগম রওশন এরশাদের সাথেও। কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয় বেশ কয়েকজন তাগীনেতাকে। এসব নিয়ে দলের একটি অংশকে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কমিটি গঠনে জাপার কো-চেয়ারম্যানদের সাথে কোনো সমন্বয়ও করেননি তিনি।এমনটি অভিযোগ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।


এদিকে এরশাদের মৃত্যুর পর বেগম রওশন এরশাদ অনেকটায় নিরবে চলে যান। পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে তিনি যেমন উপস্থিত ছিলেন না, তেমনি দলের অন্যান্য কর্মসূচিতে তিনি খুব বেশি অংশ নেন না। তিনি চেয়েছিলেন এরশাদ তনয় শাদ এরশাদ পার্টিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হোক। কিন্তু তা করা হয়নি। রওশন দলের বয়োজ্যেষ্ঠ ও তাগী নেতাদের মূল্যায়নের কথা বললে তাও করা হয়নি। তবে নিয়মিতই তিনি পার্টির সকল কর্মকান্ডের খোঁজ খবর রাখেন। যখন প্রয়োজন হয়, ঠিক তখনই অনুসারীদের নিয়ে তার বাসায় অনির্ধারিত সভায় সরব হন।


এদিকে এরশাদের মৃত্যুর পর পরই জাপা শিবিরে নতুন করে আলোচনায় আসেন এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা। বিশেষ করে এরশাদের মৃত্যুর কয়েক মাস পর থেকে বিদিশা প্রেসিডেন্ট পার্কে অবস্থান নেন। তার ছেলে এরিককে সামনে রেখেই এরশাদের গড়া ট্রাস্টকে কেন্দ্র করেই মুলত বিদিশার নানা কর্মকান্ড আলোচনায় চলে আসে। গত এক বছরের এই নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ লেখালেখী হয়েছে। বিদিশার আমন্ত্রণে এরিকের জন্মদিনে জাতীয় পার্টির কয়েকজন সিনিয়র নেতা, এরশাদের আরেক ছেলে সাদ এরশাদ ও ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার উপস্থিতি বিদিশাকে সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে যায়। বর্তমানে এরশাদের গড়া ট্রাস্টের সব কর্মকান্ড বিদিশার পরামর্শে হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।


এই ব্যাপারে দলের কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন এরশাদের ট্রাস্ট ও বিদিশা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে বেগম রওশন এরশাদের পরামর্শ ও জিএম কাদেরের নেতৃত্বেই পার্টি চলছে। করোনার কারণে সব দলের মতো আমাদের পার্টির স্বাভাবিক কর্মকান্ড কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। কিন্তু করোনায় অসহায় মানুষের মাঝে আমরা পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করেছি। বন্যা দূর্গত মানুষের মাঝেও আমাদের ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। এছাড়া আগামী ১৪ জুলাই আমাদের পার্টির চেয়ারম্যানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছি।


জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুলত এরশাদকে কেন্দ্র করেই চলতো জাতীয় পার্টির রাজনীতি। কিন্তু এরশাদবিহীন জাপা যেমন সাংগঠনিক কর্মকান্ডে দূর্বল হয়ে পড়েছে। ঠিক তেমনি দলের অভ্যন্তরে অনৈক্যর সুর ফুটে উঠছে। তিন ভাগে বিভক্ত জাপার কেন্দ্রীয় রাজনীতি। সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম একেবারেই বেহাল। ৪০টির বেশি সাংগঠনিক জেলায় কমিটি নেই বছরের পর বছর। তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠন এখন অস্তিত্বহীন বলা চলে। অন্যদিকে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবতো আছেই। কর্মসূচির অভাবে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম একেবারে ‘নাই’ হয়ে গেছে। যদিও করোনা সঙ্কটের দোহাই দিয়ে সংগঠন ভাল আছে এমন সান্তনা খোঁজার চেষ্টা শীর্ষ নেতাদের।


জাপার একাধিক সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের প্রভাব কেটে গেলে দলের অংশ নতুন ভাবে জাতীয় পার্টির ঘোষনা দেবে। আর এ নেপথ্যে কাজ করছেন পার্টিরই কয়েকজন সিনিয়র নেতা। তারা শুরু থেকেই জিএম কাদেরের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেননি। তার ওপর দল থেকে বাদ পড়া তাগী নেতা, রওশন অনুসারী, এরশাদ ট্রাস্ট ও বিদিশা অনুসারীরা সবাই একজোট হচ্ছেন। এরশাদের জীবদ্দশায় রওশনের সাথে বিদিশার কথা না হলের এরশাদের মৃত্যুর পর একাধিকবার তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয় বলে জানান এরশাদ ট্রাস্টির একজন সদস্য। জাপার অংশটি নিজেদের মূল জাতীয় পার্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করবে। এছাড়া অনেককেই আর দলের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দেখা যাবে না। বড় একটি অংশ দলছুটও হতে পারেন। নেতৃত্বের সঙ্কট ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। তারা মনে করছেন, বর্তমান নেতৃত্বের হাত ধরে এই দলের নিজস্ব শক্তিতে টিকে থাকা হবে কষ্টসাধ্য। টিকে থাকলেও তা হবে নামসর্বস্ব।


দলের কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরশাদের মৃত্যুর পর জাপার চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন তার স্ত্রী রওশন। এরপর কাউন্সিলে জিএম কাদের আনুষ্ঠানিক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সম্মেলনে করা নতুন কমিটিতে রওশনপন্থী অনেক সিনিয়র নেতাই স্থান পাননি। বাবার মৃত্যুর পর এরশাদের অপর পুত্র এরিক ছিলেন বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে। জমি সম্পদ এরশাদ ট্রাস্টের নামে দিয়ে গেলেও এ নিয়ে জটিলতা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে প্রবেশ করে এরিকের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন মা বিদিশা। জাপা থেকে বঞ্চিত হয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে বিদিশার সঙ্গে যুক্ত হোন এরশাদ ট্রাস্টের কর্ণধাররা। বিদিশাও সুযোগটি লুফে নেন। সম্প্রতি এরিখের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তাদের প্রেসিডেন্ট পার্কে দেখা গেছে। আবার এরশাদের রংপুরের আসনে নির্বাচন করে পাস করা ‘সাদ’ সম্প্রতি রংপুরের পল্লী নিবাসে দলীয় নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে পার্টিতে চলছে তুমুল দ্বন্দ্ব। চলছে বহিষ্কার আর পাল্টা বহিষ্কার। রংপুরের দুর্গ হিসেবে পরিচিত জাপার রাজনীতি এখন ভেঙ্গে খান খান। গোটা উত্তরাঞ্চলের চিত্র একই রকম বলা চলে। সব মিলিয়ে তিন ধারার রাজনীতিতে জাপার মেরুদন্ড বাঁকা হওয়ার দশা।


এদিকে দলের তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পার্টির অধিকাংশ এমপিদের ওপর ক্ষুদ্ধ। তাদের অভিযোগ দলের ২২ জন নির্বাচিত ও চার জন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া কেউ সাংগঠনিক দায়িত্ব নিতে চান না। তাদের সঙ্গেও নেতাকর্মীদের দূরত্ব রয়েছে। তারা বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সুযোগ-সুবিধা নিয়েই ব্যস্ত। ফলে দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের সুবিধা অসুবিধায় সংসদ সদস্যরাও পাশে থাকেন না।


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com