শিরোনাম
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাসানুল হক ইনুর বার্তা
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২০, ১০:০৭
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাসানুল হক ইনুর বার্তা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

করোনায় আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ জানিয়েন জাসদ সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু।


শুক্রবার (৩ এপ্রিল) রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো দলটির দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সাক্ষরিত এক বার্তায় তিনি এ অনুরোধ জানান।


বার্তায় তিনি বলেন,


প্রিয় ভাই ও বোনেরা,


করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে আপনারা প্রত্যেকেই দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, মানসিক চাপসহ নানা কষ্ট ও চাপের মধ্যে আছেন। আমি আপনাদের আতঙ্কিত না হয়ে এই পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করছি। আতঙ্কিত ও দিশেহারা হবেন না। মহামারি পরিস্থিতিতে একা একা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায় না। এরকম সংকটে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী, সরকার, প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনী সামনে থেকেই মোকাবেলা করে। জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে সরকার, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা; সরকার ও প্রশাসনকে সহযোগীতা করা। এখনো পরিস্থিতি আমাদের আয়ত্বের মধ্যেই, আমরা ইচ্ছা করলেই করোনা সংকট থেকে বের হয়ে যেতে পারবো।


আমি তাই এই পরিস্থিতিতে বলতে চাই,


আমাদের প্রথম কাজ: করোনা বিস্তার ঠেকানো, যেকোনো মূল্যেই লোক সমাগম বন্ধ রাখতেই হবে, যেকোনো মূল্যেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না, ঘরে থাকুন, নিজে নিরাপদ থাকুন অন্যকে নিরাপদে থাকতে সাহায্য করুন।


দ্বিতীয় কাজ: করোনা রোগী চিহ্নিতকরণ, সনাক্তকরণ, পৃথকিকরণ ও চিকিৎসা প্রদান। কোয়ারেনটাইন, আইসোলেশনের বিধান ও নিয়ম মেনে চলা। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইন সম্প্রসারণ করার ব্যবস্থা নেয়া। লক্ষণ, উপসর্গ দেখলে বা অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত হটলাইন ও কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। করোনা রোগ পরীক্ষা কেন্দ্র, ল্যাব ও প্রয়োজনীয় কিট, মেশিনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। করোনা লক্ষণ ও উপসর্গ আছে এমন একজন ব্যক্তিও যেন পরীক্ষার বাইরে না থাকে। আমাদের এই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ অস্থায়ী ব্যবস্থা ও অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে। লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের উদ্যোগও নিতে হবে।


তৃতীয় কাজ: করোনা সংকটে সাধারণ চিকিৎসা ব্যবস্থা অবশ্যই চালু রাখতে হবে। একজন রোগীও যেন বিনা চিকিৎসায় না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।


চতুর্থ কাজ: এই করোনা সংকটে সামনে থেকে মোকাবেলা করছে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মীগণ। তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য। তাদের মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য বিশেষ প্রণোদনার ঘোষণাও দিতে হবে। করোনা রোগ মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বোর্ড গঠন করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।


পঞ্চম কাজ: করোনা অভিঘাত মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদনশীলতা নিয়ে রফতানিমুখী শিল্পের জন্য ও শ্রমিকদের বেতন প্রদানের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি সহায়তার প্যাকেজসহ গরীব মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে আমি বলতে চাই, করোনা সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, শহর ও গ্রামের সকল ধরনের শ্রমিক-মজুদ, শ্রমজীবী-কর্মজীবী-মেহনতি মানুষ, দিনচালক, ভ্যানচালক, রিকশাচালক, ক্ষুদ্র কারবারি, হকার, দোকান কর্মচারীসহ সীমিত আয়ে ও দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা ও


আয় সহায়তা প্রদান করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার যে খাদ্য সহায়তার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং যে তালিকা তৈরি হচ্ছে সেই তালিকাতে খাদ্য সহায়তা প্রার্থী একজনও যেন বাদ না যায়, একজন মানুষকেও যেন অনাহারে না থাকতে হয়Ñ তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলের কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের প্রশাসনের পাশে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালনের আমি আহ্বান জানাচ্ছি।


ষষ্ঠ কাজ: করোনা অভিঘাত থেকে অর্থনীতি ও মানুষ বাঁচাতে দেড় লক্ষ কোটি টাকার একটি করোনা দুর্যোগ মোকাবেলা তহবিল গড়ে তোলার প্রস্তাব বলছি। এজন্য প্রয়োজনীয় বিদেশী সাহায্য ও অনুদান সংগ্রহ করতে বিশেষ কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করা দরকার। আগামী বাজেটে অনুৎপাদন খাতে ব্যয় কমিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট সাজাতে হবে।


সবশেষে আমি এই পরিস্থিতিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাই আপনারা প্রশাসনের পাশে থাকুন, স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করুন, অসহায় মানুষের পাশে থাকুন। যারা স্বেচ্ছাসেবক হবে তাদের নামের তালিকা মোবাইল নম্বর সহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জমা দিন। প্রয়োজনে বাইরে বের হবার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি পত্র সংগ্রহ করে রাখবেন। আমি দেশের সকল মানুষকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে অনুরোধ করছি। যেকোনো মূল্যে করোনা বিস্তার ঠেকাতে হবে। একজন মানুষও যেন চিকিৎসার সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। একজন মানুষও যেন অনাহারে না থাকে তাও নিশ্চিত করতে হবে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষ বাঁচাতে, অর্থনীতি বাঁচাতে দেড় লক্ষ কোটি টাকার দুর্যোগ তহবিল গড়তেই হবে।


সবাই নিরাপদে থাকুন, ধৈর্য্য ধরে মোকাবেলা করুন। করোনা যুদ্ধে বিজয়ী হোন। আমি হাসানুল হক ইনু আপনাদেরই একজন, আমি আপনাদের সাথেই আছি।


ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন...


বিবার্তা/বিজ্ঞপ্তি/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com