শিরোনাম
গৌরব ও ঐতিহ্যে ৭২ বছরে ছাত্রলীগ
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:৫২
গৌরব ও ঐতিহ্যে ৭২ বছরে ছাত্রলীগ
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শনিবার (৪ জানুয়ারি)। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে সংগঠনটির জন্ম হয়। এরপর ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সঙ্কটে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখেছে সংগঠনটি।


গৌরব ও ঐতিহ্যে ৭১ বছর পার করা এ সংগঠনটির এবারের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংগঠনটির পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানও হবে। যেখানে বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে থাকছেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন পর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন বলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত।


ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ছাত্রলীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাকর্মীরা, সাবেক নেতাকর্মীরা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন।


ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠারবার্ষিকীর পোস্টার


আরো জানা যায়, ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতাকর্মীদের জন্য ওরিয়েন্টেশন কোর্সের আয়োজন করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। গত বুধবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনদিনব্যাপী ওরিয়েন্টেশন কোর্সের সূচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সারা দেশের সকল নেতাকর্মীদের জন্য এটা উম্মুক্ত ছিল।


ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ওরিয়েন্টেশন কোর্সের সূচনাপর্বে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য আওয়ামী নেতারা


ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জন্য নেয়া বিশেষ ওরিয়েন্টেশন কোর্সের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে : ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা কী? কিভাবে ছাত্র রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা যায় ? বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শের আলোকে ছাত্র জীবন গড়া, বার্ষিক পরিকল্পনা নির্ধারণে জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে মতামত গ্রহণ এবং ছাত্র রাজনীতির সংজ্ঞা কী ? সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন, সংগঠনের আদর্শ-উদ্দেশ্য, ছাত্র রাজনীতি চর্চা, বঙ্গবন্ধু , বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ। ওরিয়েন্টেশন কোর্সে ক্লাস নিয়েছেন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনেরা।


এদিকে ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর বারোটায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সংবাদ সম্মেলনে থেকে ঘোষিত কর্মসূচিগুলো হলো- ১ জানুয়ারি থেকে ৩ দিনব্যাপী ওরিয়েন্টশন কোর্স। ৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনটির সব সাংগঠনিক ইউনিটে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭ টায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা, সকাল ৮ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটা। ৬ জানুয়ারি সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা সংলগ্ন বটতলায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। ৭ জানুয়ারি সকাল ১০ টায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বিকেল ৪ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে দুস্থদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ।


ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠারবার্ষিকীর সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা


প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের (ভারপ্রাপ্ত) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বিবার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যে ৭১টি বছর পার করেছে। শনিবার সংগঠনটির ৭২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নানা উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানও হবে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন ছা্ত্রলীগের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আগমনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে।


তিনি বলেন, আমরা আশা করছি এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রলীগের ৫০ হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করবেন। তাদের পদচারণায় মুখরিত হবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে নানা আয়োজন রাখা হয়েছে জানান তিনি।


ওরিয়েন্টেশন কোর্সে অংশগ্রহণকারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা


ওরিয়েন্টেশন কোর্স নিয়ে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী ওরিয়েন্টেশন কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে। একজন রাজনীতিবিদ এবং একজন শিক্ষক ওরিয়েন্টেশন ক্লাস নিয়েছেন। প্রথমে কেন্দ্রীয়ভাবে ওরিয়েন্টেশন করা হয়েছে। পরবর্তীতে দেশব্যাপী এটা করা হবে।


যে ভাবে প্রতিষ্ঠা হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি প্রথম পর্বে ভর্তি হন। ঢাকায় ফিরে আসার প্রধান কারণ ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্বাস করতেন নেতাজী-শেরে বাংলাদের সাইডলাইনে পাঠিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, জওহরলাল নেহরু, মহাত্মা গান্ধী, লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনরা যেভাবে ভারতবর্ষ ভাগ করে পাকিস্তান নামক যে অবাস্তব রাষ্ট্র বানিয়ে দিল তা বাঙালির জন্য নয়। ১২০০ মাইলের ব্যবধানে দুই ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতির দুই দেশ, এক অবাস্তব রাষ্ট্র। এটি টিকে থাকতে পারে না। তিনি তাঁর বন্ধুদেরও বলেছিলেন, যে পাকিস্তানের জন্ম হলো তা আমাদের জন্য নয়, আমাদের আবার লড়াই করে আপন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি।


তারুণ্যের শক্তি অজেয় অপ্রতিরোধ্য। তাদের পিছুটান নেই। বঙ্গবন্ধু নিজেও তখন তরুণ। কাজেই তরুণদের সংগঠন দরকার। তিনি তরুণদের সংগঠিত করতে থাকলেন এবং ঢাকায় ফিরে আসার ছয় মাসের মাথায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের এ্যাসেম্বলিতে তখনকার একঝাঁক সাহসী তরুণ নিয়ে প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেন। প্রথমদিকে অবশ্য মুসলিম শব্দটি ছিল। পরে সকল জাতি, ধর্ম তথা সর্ব বর্ণবাদবিহীন তরুণদের নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়।



ছাত্রলীগ যখন প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন বঙ্গবন্ধুর বয়স ছিল ২৮ বছর এবং তিনিই হতে পারতেন এর সভাপতি। কিন্তু না, তিনি হননি। তিনি প্রথম আহ্বায়ক নির্বাচিত করেন নাঈমুদ্দিন আহমদকে। এরপর যখন ছাত্রলীগ রাজপথে কার্যক্রম শুরু করে তখন সভাপতি মনোনীত করা হয় দবিরুল ইসলামকে। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় খালেক নেওয়াজ খানকে। জন্মের প্রথম লগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনসহ বিভিন্ন সঙ্কটে সবচেয়ে সফল সাহসী সারথি রেখেছে সংগঠনটি।


বস্তুত এই ছাত্রলীগের সবকিছুতেই ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের পর আওয়ামী লীগের মতো ছাত্রলীগেরও হাল ধরেন তারই কন্যা বর্তমান প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বিবার্তা/রাসেল/উজ্জ্বল/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com