শিরোনাম
দেশের প্রধান তিনটি দলই গভীর সংকটে
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০১৬, ২০:২১
দেশের প্রধান তিনটি দলই গভীর সংকটে
জাহিদ বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

২০দলীয় জোট নেতা, জাতীয় পার্টির একাংশের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি আহসান হাবিব লিংকন বলেছেন, দেশের বিদ্যমান রাজনীতিতে প্রধান তিনটি দলই গভীর সংকটে। জোটের আন্দোলন ঠিকই গতিশীলতা পেয়েছে যার কারণে সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে।


তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে একজন বহুমুখী প্রতিভা অ্যাখা দিয়ে বলেন, বিনা ভোটের সংসদ থেকে পদত্যাগ করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরীক হলে এরশাদ আবার ঘুরে দাঁড়াবেন এবং বাংলার ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেবেন।


আহসান হাবিব লিংকন বৃহস্পতিবার বিকেলে তার পল্টনের ব্যবসায়িক কার্যালয়ে বিবার্তার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন।


আহসান হাবিব লিংকন ২৪ মার্চ ১৯৫৯ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মণ্ডলবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভেড়ামারায় প্রাইমারি শেষ করে ঢাকার সেগুনবাগিচা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও মাস্টার্স করেন। ১৯৭৮ সালে জেনারেল ওসমানীর জাতীয় জনতা পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন তিনি। এরপর ১৯৮২ সালে এরশাদের জাতীয় ছাত্রসমাজে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাকালীন কেন্দ্রীয় সদস্য হন। জাতীয় ছাত্রসমাজ, জাতীয় যুবসংহতির জ্যেষ্ঠ পদেও অধিষ্ঠিত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে তাকে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। ১৯৯৫ এরশাদ মুক্তি আন্দোলনে এবং ২০১৫ সালে ২০দলীয় জোট নেতা হিসেবে কারাবরণ করেন তিনি। এরশাদের জাতীয় পার্টিতে থাকাকালীন দলের অতিরিক্ত মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেন।


বিবার্তা : বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলুন, কী অবস্থা দেশের ?


লিংকন : দেশের প্রধান তিনটি দলই এখন গভীর সংকটে। যেমন আওয়ামী লীগ এদেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য এ দলের ভূমিকা ঐতিহাসিক। অথচ এই দলই বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছে একটি বিনা ভোটের সরকার হিসাবে। যে দলটি স্বাধীনতা-উত্তরকালে হিমালয়সম জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যারা একজন ব্যথর্ শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলো, তারাই চক্রান্ত করে শেখ হাসিনাকে বিনা ভোটের সরকারে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এতে দেশ অপরিসীম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অপর বড় দল বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে অপরাজনীতির শিকারে পরিণত হয়েছে। এদলটি দেশী-বিদেশী চক্রান্তের শিকার। বিএনপি চেয়ারপারসন থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আজ জেল-জুলুম-হুলিয়া-খুন-গুমের শিকার। বিরোধীদলের আন্দোলন দমানোর জন্য সরকার অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।আরেকটি বড় দল জাতীয় পার্টি যে রাজনীতিতে বিশ্বাস করে সে রাজনীতি তারা করতে পারছে না বা করতে দেয়া হচ্ছে না। স্ববিরোধী রাজনীতি এ পার্টিকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিচ্ছে।এছাড়া অন্য সকল রাজনৈতিক দলও স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে পারছে না।



বিবার্তা : দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ণ কি ?


লিংকন : আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই-রাহাজানি অনেক কম। তবে জঙ্গিবাদ দেশে একটি ভীতিকর ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে।


বিবার্তা : আপনার ২০দলীয় জোটের অবস্থা কী?


লিংকন : অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও খুন-গুম-মামলা-হামলা উপেক্ষা করে ২০দলীয় জোট দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আছে ও থাকবে। এ আন্দোলনের মাধ্যমেই দেশবাসী একদিন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও নাগরিক মর্যাদা ফিরে পাবে।


বিবার্তা : বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনকে আরো গতিশীল করার জন্য জোটের পরিধি বাড়িয়েছেন, তারপরও আন্দোলন গতি পাচ্ছে না কেন ?


লিংকন : আন্দোলনে যে গতিশীলতা, তা আপনি উপলব্ধি করতে পারছেন না, সরকার ঠিকই উপলব্ধি করতে পারছে। যে কারণে সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে।


বিবার্তা : বিএনপি বা ২০দলীয় জোটকে অনেকে প্রেস-ব্রিফিং ও মানববন্ধনের দল হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে। আপনার কী মনে হয়।


লিংকন : আধিপত্যবাদী শক্তির পদলেহনকারী দালালরা এ অপপ্রচার করছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রী। তিনি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। দালালদের কথামতো তিনি তার কৌশল নির্ধারণ করেন না।


বিবার্তা : আপনারা কি মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করেন ?


লিংকন : মধ্যবর্তী নির্বাচন নয়, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য ২০দলীয় জোট আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হলে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। আর এ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সাথে বসে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অথবা বিনা ভোটের সরকারের কলংকের তিলক নিয়ে ইতিহাসের ঘৃণা কুড়াতে হবে।


বিবার্তা : আপনাদের চেয়ারম্যানের মৃত্যুর এক বছর পার হলেও এখনও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই দল চালাচ্ছেন। এর কারণ কি ?


লিংকন : জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠাকালীন নীতি ও আদর্শ ধারণ করছে। আমাদের কাছে নেতা নয়, সেই আদর্শ ও নীতিই মূখ্য বিষয়। তাছাড়া চেয়ারম্যানের বিষয়ে দলের নীতি-নির্ধারকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।


বিবার্তা : আপনাদের দলের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে বলুন ?


লিংকন : আমাদের প্রায় ৪০টি জেলায় কমিটি রয়েছে। রয়েছেন ১৫ জন সাবেক এমপি, ৫ জন সাবেক মন্ত্রী। আরো অনেক সাবেক এমপি আমাদের দলে আসার জন্য যোগাযোগ করছেন। তাদের দাবি একটাই, নির্বাচনের সময় ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া।


বিবার্তা : দীর্ঘদিন এরশাদের সাথে ছিলেন, তার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি ?


লিংকন : হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একজন বহুমুখী প্রতিভা। আমি জানি না, তাকে বাঁচাতে বা রক্ষা করতে তার সামনে কেউ রক্ত দিয়েছিলো কিনা, তবে আমি দিয়েছি। আমার মাথায় এখনও ২৭টি সেলাইয়ের দাগ রয়েছে। তিনি দক্ষ একজন সেনাপ্রধান, সফল রাষ্ট্রপ্রধান, সংস্কারক, উন্নয়নের দিকপাল। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় নিয়ে থাকুক না কেন সেসকল সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিকে কলুষিত করতে সহায়ক হয়েছে। তবে এখনও সময় আছে, বিনা ভোটের সংসদ থেকে পদত্যাগ করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরীক হলে তিনি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন এবং ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারবেন। নতুবা এ দল জনগণ থেকে আরো অনেক দূরে সরে যাবে।


বিবার্তা : ভবিষ্যতে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে আবার ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা


লিংকন : রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। সময়ই এর উত্তর দেবে।


বিবার্তা/বিপ্লব/রয়েল/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com