শিরোনাম
ফেসবুক লাইভে জয়নাল হাজারী
‘আমাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা করা হয়েছে’
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৪৯
‘আমাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা করা হয়েছে’
প্রিন্ট অ-অ+

ফেনী সদর আসনের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী বলেছেন, আমি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি, বুধবার (২ অক্টোবর) রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে চিঠিতে দস্তখত দিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।


ওই চিঠিতে তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে। একই সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদে তাকে স্থান দিয়ে শেখ হাসিনা নজিরবিহীন ইতিহাস করেছেন বলেন দাবি তার।


বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সিঙ্গাপুর থেকে ফেসবুক লাইভে তিনি এ দাবি করেন।


ফেসবুক লাইভে জয়নাল হাজারী বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলছি আমাকে অবশ্যই উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করা হয়েছে। যে কমিটিতে আমির হোসেন আমু ভাই ও তোফায়েল আহমেদ ভাই আছেন সেখানে আমাকে স্থান দিয়ে শেখ হাসিনা আমার প্রতি যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন এটা ইতিহাসে নজিরবিহীন।


জয়নাল হাজারীকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য করা হয়েছে- এই সংবাদ প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।


এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে এদিনই সিঙ্গাপুর থেকে ফেসবুক লাইভ করে জয়নাল হাজারী এ প্রসঙ্গে একটি দীর্ঘ বক্তব্য তুলে ধরেন।


শুরুতেই জয়নাল হাজারী বলেন, বন্ধুরা আমি শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল। খুবই অসুস্থ অনুভব করছি। তবুও একান্তই না বলে পারছি না বলে সংক্ষিপ্ত একটি লাইভ ভার্সনে এসেছি। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি, শেখ হাসিনা আমাকে দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলী সদস্য করেছেন। এটা রেডিও, টেলিভিশন ও পত্রিকায় প্রকাশের পর ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে আবার বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা হচ্ছে। সেকারণে কিছুটা হলেও বিভ্রান্তি দূর করার জন্য আমার আজকের এ লাইভে আসা।


তিনি বলেন, যেদিন আমি নেত্রীর হাত থেকে চল্লিশ লাখ টাকা (চিকিৎসা বাবদ) নেই, সেদিন নেত্রীকে বলেছিলাম, আপনি বলছেন আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করেননি, দলও করেনি। তাহলে দলে আমার অবস্থান কোথায়? তখনই তিনি বলেছিলেন অবস্থান ঠিক হয়ে যাবে। আরো দুয়েকটা কথা যা বলেছিলাম তা তিনি মেনে নিয়েছিলেন।


‘বিভ্রান্তির কারণ হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব একটা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে এক সংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, জয়নাল হাজারীকে দলের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য করার বিষয়টি তিনি জানেন না। আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাবো এ কারণে যে, রাজনীতি করতে হলে মিথ্যা কথা বলতে হয় কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো মিথ্যা কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, আমি কিছু জানি না।’


‘তিনি বলেছেন, আমার সঙ্গে আলোচনা হয়নি। এটা একশ পার্সেন্ট সত্য যে নেত্রী কারো সঙ্গে আলোচনা করেননি। কাউকে উপদেষ্টা কমিটিতে রাখা অথবা কাউকে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা একান্তভাবে নেত্রীর নিজস্ব এখতিয়ার। এটা গতবার সম্মেলনে নেত্রীকে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। এটা ভোটের মাধ্যমে বা সম্মেলনের মাধ্যমে করার বিষয় নয়। এর আগেও যাদের উপদেষ্টা বানিয়েছেন তাদের কাউকেই কারো সঙ্গে আলোচনা করে বানাননি। সবাইকেই শুধু একটি চিঠি দিয়ে কনফার্ম করেছেন। এরপর দফতর থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।’


জয়নাল হাজারী বলেন, আজ তিনচারদিন ধরে আমি আছি সিঙ্গাপুরে। এর আগে তিনদিন ছিলাম মালয়েশিয়ার কলম্বো হাসপাতালে। সেখানে অগ্রগতি না হওয়ায় আমি এখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিচ্ছি। প্রতিদিনই হাসপাতালে যেতে হচ্ছে, আসতে হচ্ছে এবং ৭ তারিখে আমার ফাইনাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। ঠিকই তো আছে এটা ওবায়দুল কাদের সাহেবের সঙ্গে আলাপ করার কোনো দরকার নেই। ওনার জানারও কোনো দরকার নেই। আমাকে যে নেত্রী ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন এটাও তো ওবায়দুল কাদের সাহেব জানতেন না। আমিই এগিয়ে ওনাকে জানিয়ে আসছি।


‘আমি নিজেও জানি না। আমাকে যখন প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন আমাকে ফোন করে জানালেন যে, আমাকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে, নেত্রী চিঠিতে স্বাক্ষরও করেছেন। এটা জানার পরও আমি কাউকে কিছু বলছিলাম না। যখন টিভিতে দেখলাম নিউজ এসে গেছে। তখন দেশের বাইরে থেকে কি আমি তাদের বলতে পারি যে আপনারা নিউজ বন্ধ করুন!’


তাকে দল থেকে বহিষ্কার করার প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাজারী বলেন, যারা দীর্ঘ বিশ বছর ধরে যারা বলেছে আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে সেই তারাই আজ বলছে আমাকে উপদেষ্টা করা হয়নি। এরা কারা? এরা ওরা, যারা আমার সম্পর্কে বিশ বছর ধরে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। নেত্রী বেশ কজন মন্ত্রী-এমপির সামনেই আমাকে বলেছেন যে, আমাকে বহিষ্কার করেননি। অথচ আজো ওরা বলছে আমার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি।’


ফেসবুক লাইভে তিনি আরো বলেন, এবার আমি বলি, আমার এই নিয়োগের পর সম্ভবত সবার আগে আলাউদ্দিন নাছিম (আওয়ামী লীগ নেতা) আমাকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাহলে কি আলাউদ্দিন নাছিম কোনো খবর না নিয়েই স্ট্যাটাস দিয়েছেন? মিডিয়া নিশ্চিত না হয়ে যে এতবার এই খবর প্রচার করতে পারে না এটা জেনেই নাছিম এই স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আলাউদ্দিন নাছিমও বলেছেন এটা একান্তই নেত্রীর এখতিয়ার।


‘ওবায়দুল কাদেরের মতো আলাউদ্দিন নাছিমকেও ধন্যবাদ জানাবো এই সত্য কথাটি বলার জন্য। এটা দিয়ে আলাউদ্দিন নাছিম এটাই বোঝাতে চেয়েছেন এটা ওবায়দুল কাদেরের এখতিয়ার নয়, নেত্রীর এখতিয়ার। তাহলে নেত্রীর এখতিয়ারে যা কিছু হয় তার সবকিছু ওবায়দুল কাদেরের জানতে হবে সেটা নয়। আমি পরিষ্কার করে বলছি আমাকে অবশ্যই উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’


‘এত বিরোধিতা, এত চক্রান্ত, মিডিয়ার এত আক্রমণের পরেও তিনি আমার ওপর আস্থা রাখেন এটা ইতিহাসে নজিরবিহীন। পৃথিবীর কোথাও কোনো কর্মীর প্রতি এতোটা দরদ দেখিয়েছেন বলে এটা আমি মনে করি না। আমি শুধু বলি, মিথ্যায় বিভ্রান্ত হবেন না। আজ তারা মনে করছে আমি ফেনীতে যাবো আর ফেনীতে গেলে ওদের অস্তিত্ব বিলীন হবে। মূলত তাদের এ ধারণা কতটুকু সত্য তা আমি জানি না। আমি নেত্রীর অনুমতি ছাড়া ফেনীতে যাবো না। যদি তিনি বলেন তবেই আমি যাবো। যদি আমার কোনো প্রয়োজন থাকে তবে তো যাবোই।’


তিনি বলেন, দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি আমাকে দলের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য করে রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে আওয়ামী লীগ অফিসে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে। অবশ্যই আমি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। ইতোমধ্যে আমি কত লাইভ দিলাম, কত বিবৃতি দিলাম কিন্তু কখনো আমার বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যাচার কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। আমি ফেনীবাসীসহ সারা দেশবাসীকে বলবো আমি মিথ্যা বলি না। এটাও মিথ্যা বলছি না।


জয়নাল হাজারীর ভাষ্য, নেত্রী যখন স্বাক্ষর করেন তখন বাহাউদ্দিন নাছিমসহ তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। এই খবর ধানমন্ডি অফিসে যাওয়ার পর উৎসবমুখর ছিল। এই খবর পাওয়ার পর অনেকেই বলছিল জেল-জুলুম খাটা, মুক্তিযুদ্ধে অবদান, বিশ বছর তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র থাকার পরও নেত্রী জয়নাল হাজারীর সঠিক বিচার করছেন। আমি কী কার্যক্রম করবো আমি জানি না। তবে আপনারা দোয়া করলে, আল্লাহ চাইলে অনেক কিছুই তো হতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদে নিয়ে আসাও তো আল্লাহর নিয়ামত। ক্যাসিনোর লোকরা একজন বিশাল বিশাল ক্ষমতাবান কিন্তু অভিযানের পরদিন কী দেখা গেলো? সুতরাং, কে কখন কোন অবস্থায় যায় তার ঠিক নেই।


তিনি বলেন, আলাউদ্দিন নাছিমকে বলবো তুমি খোঁজ নাও। তুমি প্রটোকল অফিসার ছিলে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কীভাবে কোন খবর যায় সেটা তুমি যতটুকু জানো ওবায়দুল কাদেরের পক্ষে জানা সম্ভব না। এক সময় বিরাট প্রতাপশালী আলাউদ্দিন নাছিমের অবস্থা আজকাল ভালো না। এর পিছনে কার অবদান, কে এটাকে খারাপ করেছে সেটা তুমি জানো, তোমাকে যারা সর্বনাশ করেছে নমিনেশন পেতে দেয়নি, আমাকে যারা বিশ বছর কষ্ট দিয়েছে তারা একই পথের পথিক। আমাকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য করায় আমি পরিশেষেও আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ, শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ, দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। ‘জয় বাংলা’।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com