শিরোনাম
মেঘের সাথে মেঘের রাজ্যে এক চক্কর
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:৪৩
মেঘের সাথে মেঘের রাজ্যে এক চক্কর
মো. শাহীন সরদার
প্রিন্ট অ-অ+

চারদিকে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। ছোটো-বড় সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে চলে গেছে পিচ ঢালা পথ। উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা। দুই পাশে সবুজ গাছ গাছালি। পথে ছোটো-বড় পাহাড়ি ঝরনা। এই পথই একসময় নিয়ে যাবে যাবে পাহাড়ের চূড়ায়। খুব কাছে থেকে দেখা যাবে মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালিকে। সেই ১৮০০ ফুট উচ্চতা থেকে মেঘ ছোঁয়ার অনুভূতি পেতে প্রতি বছরের মতো এবছরেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (বাকৃবিসাস) সদস্যরা পাড়ি জমায় সাজেক ভ্যালিতে।


বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা বেরিয়ে পড়লাম সাজেক ভ্যালির উদ্দেশে। যাত্রার শুরুটা হয় ময়মনসিংহ থেকে। গত ২ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যা ৬ টায় আমাদের বাস ছেড়ে দেয়। রোমাঞ্চকর বাস যাত্রার পরে ভোরে আমরা পৌঁছে গেলাম খাগড়াছড়িতে। আমাদের জন্য চান্দের গাড়ি আগেই রেডি ছিল।



সকালের নাস্তা করে সেখানকার হাজাছড়া ঝরনা দেখতে গেলাম। বিশাল উঁচু থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঝরনা দেখতে দারুন লাগছিল। তারপর ১১টার দিকে চান্দের গাড়িতে করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আমরা সাজেক ভ্যালির পথে চলতে শুরু করি। শ্বাসরুদ্ধকর যাত্রা বলতে যা বোঝায় সাজেক ভ্যালিতে যাত্রা করা ঠিক সেরকমটাই। এক লেনের রাস্তার পাশ দিয়ে কখনো উঁচু উঁচু পাহাড় কখনো গভীর খাদ। রাস্তাগুলোতে বাঁকের পরে বাঁক, ইউটার্নের পর ইউটার্ন। কখনো বা খাড়া নীচু কখনো বা খাড়া উঁচু। পুরোটা সময় ধরে অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভেঞ্চার অনভুতি হচ্ছিল।



রুইলুই পাড়ায় আমরা একটা কটেজ ভাড়া করি। তারপর একাটা ক্যান্টিনে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ি রুইলুইপাড়ার পার্ক, গার্ডেন, একান্তে বসে পাহাড় দেখার জন্য ছোট ছোট খোলা ছাউনি, দোলনা আর সূর্য ঘড়ি। নয়নাভিরাম এ রুইলুইপাড়া পর্যটন এলাকা। বিকেলে রুইলুইপাড়ার হ্যালিপ্যাডে পাহাড়ের সাথে নিজেদের ছবি তুললাম আর পাহাড়ের কোলে সূর্যাস্ত দেখলাম। রাতের খাবার খেয়ে হ্যালিপ্যাডে গিয়ে সবাই গোল হয়ে বসলাম। মনে হচ্ছিল যেনো পায়ের নিচে সারি সারি পাহাড় আর মাথার উপরে গোলাকার আকাশ। আকাশের মাঝে তারা গুলো ঝুলে ঝুলে আছে। এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে আমরা সবাই মিলে গলা ছেড়ে গান গাইলাম। তারপর কটেজে ফিরে রাতটা কাটিয়ে একদম ভোরে বেরিয়ে পড়লাম সূর্যোদয় দেখবার জন্য। হ্যালিপ্যাড থেকে দেখলাম পাহাড়ের কোলে সূর্যোদয়।


এরপর চললাম সাজেকের কংলাক পাড়াতে। ১৮০০ ফুট উচ্চতা থেকে পাহাড়ের কোলের তুলার মতো জমাট বাঁধা মেঘ দেখা যে কতটা রোমাঞ্চকর, তা বলে বোঝানো যাবে না। রুইলুইপাড়া ছেড়ে যাবার সময় দেখলাম কোত্থেকে যেনো কুয়াশার মতো মেঘ এসে আমাদের শরীর ছুঁয়ে গেলো। কটেজের ব্যালকনি থেকে পাহাড়ের ওপর মেঘেদের মিলন দেখলাম। ১০টার দিকে রুইলুইপাড়াকে বিদায় জানাতে হলো আমাদের। পরে গিয়েছিলাম আলুটিলা গুহায় ও রিছাং ঝরনায়। সবচেয়ে বিপদজনক ও মজার ছিল এ দুটি স্থান। সত্যিকার অ্যাডভেঞ্চার বলতে যা বোঝায়।



একদিনেই যেনো পাহাড়গুলো আমাদের বড় আপন করে নিয়েছিল। যেনো পাহাড়ের মায়ায় আটকে গেছি আমরা। স্মৃতির পাতায় চিরদিন অমলিন হয়ে থাকবে এই পাহাড়গুলো আর সমিতির সদস্যদের সাথে কাটানো সময়গুলো।


ময়মনসিংহ থেকে যেভাবে যাবেন: ময়মনসিংহ শহর থেকে আপনাকে শান্তি পরিবহনে যেতে হবে। শান্তি পরিবহনের বাস আপনাকে নামিয়ে দিবে খাগড়াছড়িতে। আগে থেকে আপনাকে ঠিক করে রাখতে চান্দের গাড়ি। খাগড়াছড়িতে নামার পর চান্দের গাড়ি আপনকে নিয়ে যাবে রাঙামাটি। বাকি কাজটা গাড়ির চালকই করবেন। তিনি গাইড হিসেবে আপনাকে ঘুরাবে সব জায়গায়। শুধু খেয়াল রাখতে হবে নেটওয়ার্কের বিষয়ে। রবি ও টেলিটক ছাড়া অন্য অপারেটরের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। আর পারলে নিয়ে যেতে হবে চার্জের জন্য পাওয়ার ব্যাংক। নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য শুধু জেনারেটর পাওয়া যায়।


বিবার্তা/শাহীন/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com