শিরোনাম
ইরানের রাশত শহরে
প্রকাশ : ০২ মে ২০১৮, ১৭:০৭
ইরানের রাশত শহরে
নাসির মাহমুদ
প্রিন্ট অ-অ+

ইরানের গিলান হচ্ছে বৃষ্টি-বাদলের প্রদেশ, গাছগাছালি আর বন-জঙ্গলময় প্রদেশ, ধান আর রেশমের প্রদেশ, বহতা নদী আর বাসন্তী রঙের বুনোফুল, নীল শাপলা ফুল, হাঁস এবং হাসজাতীয় পাখিদের প্রদেশ।


বলাই যায়, ইরান দেশে বেশ বিচিত্র এই প্রদেশটি। তবে প্রকৃতির এই অনিন্দ্যসুন্দর লীলাবৈচিত্রের বাইরেও এখানে রয়েছে শহরকেন্দ্রিক সৌন্দর্যের অনেক নিদর্শন।
গিলান প্রদেশে আনুমানিক ৩০টি শহর আছে। প্রশস্ততা, জনসংখ্যা এবং এলাকাগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এখানকার শহরগুলোর আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।


প্রথমেই আমরা গিলান প্রদেশের রাশ্‌ত শহরে যাবো। রাশত উপশহরটি কাস্পিয়ান সাগর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিতে অবস্থিত। অন্যদিক থেকে আলবোর্য পর্বতমালার উত্তরে পড়েছে শহরটি। বন্দর আনযালি উপশহরের দক্ষিণে পলিময় ভূমিতে এই রাশত শহরটির অবস্থান। রাশত শহরের পূর্বদিকে রয়েছে সিয়হ রুদবর নদী আর পশ্চিম দিকে রয়েছে গওহর রুদ নদী। তবে শহরের উত্তরাঞ্চলে গিয়ে এই দুটি নদী পরস্পরে মিলে গেছে এবং আনযালি জলাভূমিতে গিয়ে পড়েছে। রাশতের মাটি উর্বর, আবহাওয়া উপভোগ্য এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ উন্নত। শহরটি ধান চাষ, তামাক চাষ, রেশম পোকার চাষ এবং চা বাগানের জন্যে বিখ্যাত। এই শহরটি প্রাচীনকালে ছিল ইউরোপের সাথে ইরানের যোগাযোগের একমাত্র পথ - এমনটাই মনে করা হয়।



বৃষ্টি


রাশত শহরে বৃষ্টিপাতের মাত্রা একটু বেশি। এর কারণ হলো শহরটি সমুদ্রের কাছে অবস্থিত এবং কাস্পিয়ান সাগরীয় বাতাসের প্রবাহ। এখানকার বাতাস রাশতের উত্তরপূর্ব দিক থেকে দক্ষিণপশ্চিম দিকে ব্যাপক মাত্রায় বয়ে যায়। এ কারণেই এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি। সমগ্র ইরানে এই এলাকাটিকে সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল এলাকা বলে গণ্য করা হয়।


রাশত শহরের মূল অধিবাসীরা ছিল ‘গিল’ নামের স্থানীয় একটি গোত্রের লোকজন। এই গোত্র খ্রিষ্টপূর্ব কাল থেকে বছর আগে এ অঞ্চলেই বসবাস করতো। ঐতিহাসিক তথ্যপঞ্জিতে এসেছে, খুব সম্ভবত ইসলামপূর্বকালেও এ শহরটির অস্তিত্ব ছিল।


রাশত শহরে রয়েছে দর্শনীয় বহু নিদর্শন। স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে এখানকার বিল্ডিংগুলোর দিকে তাকালে বুঝতে পারা যাবে কতো বিচিত্র পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে এসব স্থাপনা নির্মাণে। রাশতের প্রধান অঙ্গন সিটি কর্পোরেশন স্কোয়ার, যা এখন শোহাদা স্কোয়ার নামে পরিচিত, সেখানে গেলে এরকম বিচিত্র স্থাপত্যরীতির সাথে পরিচয় ঘটবে। মাঠের চারপাশজুড়ে গায়ে গা লাগানো এরকম ভবনের পর ভবন দেখতে পাওয়া যাবে। রাশতের অনেক পুরনো ভবনও স্থাপত্যরীতির দিক থেকে, নকশার দিক থেকে এবং চকের কারুকাজের দিক থেকে অনেক মূল্যবান। এগুলোর শৈল্পিক মূল্যও প্রচুর। এসব বিচিত্র গুণের কারণেই প্রাচীন এই ভবনগুলো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়েছে।



সিটি করপোরেশন পার্ক


যেসব পর্যটক গিলান পরিদর্শন করেছেন, তাদের অনেকেই গিলান নিয়ে লেখালেখি করেছেন। জার্মান পর্যটক ট্রেযেল উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে গিলান সফর করেন। তিনি রাশত সফর করে সেখানকার বাড়িঘর সম্পর্কে লিখেছেন, রাশত শহরের আরো অনেক দর্শনীয় দিকের পাশাপাশি সিটি কপোরএরশন পার্ক কিংবা মুহতাশেম বাগানের কথা উল্লেখ করা যায়। এই বাগানটির বয়স ১৩০ বছর। পার্কটির বিশাল উঁচু গাছগাছালি বিশেষ করে চেনর বৃক্ষ এই পার্কটিকে আলাদা মর্যাদায় ভূষিত করেছে। এ কারণেই যিনিই এই পার্কটি পরিদর্শন করবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা এখানকার বড়ো বড়ো গাছের পর গাছের ছায়ায় সময় না কাটিয়ে পারেন না।


বাগে মুহতাশিমের একটি অনন্য আকর্ষণ হলো এখান চমৎকার একটি দ্বিতল ভবন। ভবনটির প্রত্যেক তলায় দুটি করে রুম রয়েছে। এই ভবনটির আয়তন প্রায় ২৪০ বর্গমিটার। ভবনটির আকৃতি বহু কোণবিশিষ্ট। নীল রঙের পিলার, লাল রঙের মৃৎশিল্পের সজ্জায় এর ছাদ অলংকৃত। এরকম অনন্য কারুকাজের জন্যে সমগ্র রাশতের মধ্যেই এই ভবনটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। আগেকার দিনে এই ভবনটির বিশাল একটি আঙিনা ছিল যার আয়তন ছিল সাত হাজার মিটারের মতো। এখানে তখনকার দিনে বাস করতেন গিলানের শাসকরা।



মুহতাশেম বাগান


রাশতের অপর একটি দর্শনীয় স্থাপনা হলো এখানকার বাজারটি। প্রাচীন নির্মাণশৈলীর জন্যে এই বাজারটির শৈল্পিক মূল্য ব্যাপক। দৈনিক হাজার হাজার মানুষ এই শহর এবং এর আশেপাশের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম থেকে এই বাজারটি দেখতে আসে। দেখতে এসে কেনাকাটাও করে প্রচুর। বিচিত্র কৃষিপণ্যের বাইরেও এখানে পাওয়া যায় দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী। তাছাড়া এখানে আছে প্রাচীন অনেক সরাইখানা। এইসব সরাইখানা রাশত বাজারের অন্যতম আকর্ষণ, বিশেষত পর্যটকদের জন্যে। কাজারি ও পাহলাভি শাসনামলের শুরুর দিকে এগুলো নির্মাণ করা হয়েছে বলে বর্ণনায় এসেছে।


রাশত মিউজিয়ামও এখানকার আরেকটি দর্শনীয় স্থাপনা। এটি আসলে মির্যা হোসাইন খান কাসময়ি নামক বিখ্যাত কবি-সাংবাদিকের বাড়ি ছিল। ১৩৪৯ সালে এই বাড়িটিকে যাদুঘরে পরিণত করা হয়। এখন এই মিউজিয়ামটি জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। সূত্র : পার্স টুডে


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com