পাহাড়ে উঠতে উঠতে ঘিরে ধরবে মেঘ, কখনো আবার বৃষ্টি, কিছুক্ষণ পরেই খটখটে রোদ! আস্তে আস্তে বিকেল। উপরে উঠতে উঠতে পেছনে দেখবেন অপূর্ব পাহাড়ের নীল সারি। ঠিক যেন ছবির মতো। পথের দুই পাশে লাল-সবুজ রঙের বাড়ি। দৃষ্টি যত দূর যায় পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘ জমে আছে। মনে হবে হাত বাড়ালেই যদি তুলো ছেঁড়া মেঘ ধরা যায়!
মনে হবে পৃথিবীতে না আপনি একেবারে স্বর্গে বিচরণ করছেন। হ্যাঁ, এই স্বর্গ খুব দূরে নয়, বলা হচ্ছে খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালির কথা।
সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। রাঙ্গামাটির একেবারে উত্তরে এর অবস্থান হলেও সড়কপথে গেলে যেতে হয় খাগড়াছড়ি হয়ে। তবে রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখা যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের সাজেকের পুরোটাই পাহাড়ে মোড়ানো পথ। সাজেক কিন্তু কোনো গ্রাম বা লোকালয় নয়, তিন পার্বত্য জেলার সর্ব উত্তরের সর্বশেষ বিডিআর বিওপি এবং আর্মি ক্যাম্প। এটাই সাজেক পয়েন্ট। সাজেকের পাহাড়ে মেঘেদের মেলা বসে। পাহাড়ের মেঘের স্পর্শে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে। মেঘে ঢাকা সাজেকের অপরূপ প্রকৃতি সবার মন জয় করে নেয়।
অসংখ্য পাহাড়ের বন্ধনে সবুজে ঢাকা অপরূপ সাজেকের রাস্তা! ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে প্রায়শ। বৃষ্টিতে সবুজে ঢাকা এই পথ আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কালো মেঘ বারবার হাতছানি দেয় বৃষ্টি। দারুণ বৃষ্টিমুখরে খুঁজে পাবেন সাজেকের প্রকৃত সৌন্দর্যরূপ।
সবুজ পাহাড়ের চূড়া ঘিরে রয়েছে সাদা মেঘের আবরণ। দিগন্ত বিস্তৃত উপত্যকা মিশে গেছে মিজোরামের নীল পাহাড়ে (ব্লু ম্যাউনন্টেইন)। সাদা তুলোর মতো ছোট ছোট মেঘের স্তুপ ভেসে বেড়ায় পাহাড়ের বুকে। উপত্যকার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হবে এই কি অপার্থিব সৌন্দর্য!
সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের হাঁটা পথে কংলাক চূড়া। সাজেকের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম কংলাক পাড়া। পাড়া থেকে পাখির চোখের মতন দেখা যাবে পুরোটা মেঘের রাজ্য।
যেভাবে যাবেন :
প্রথমে যেতে হবে খাগড়াছড়ি অথবা দিঘীনালা। রাজধানী থেকে শান্তি পরিবহন, বিআরটিসি (এসি বাস), সেন্ট মার্টিন (এসি বাস), শ্যামলী, সৌদিয়া, ঈগল, এস আলম পরিবহনে খাগড়াছড়ি এবং দিঘীনালায় সরাসরি যাওয়া যায়। ভাড়া ৫৮০ টাকা (খাগড়াছড়ি), ৬০০ টাকা (দিঘীনালা)। চট্টগ্রাম থেকে প্রতি এক ঘণ্টা পরপর শান্তি পরিবহনের গাড়ি ছাড়ে, ভাড়া ১৯০ টাকা। তাছাড়া চট্টগ্রামের লোকাল বাসেও যাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি অথবা দিঘীনালা থেকে ভাড়ায় চাঁদের গাড়ি, ৩,৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা, সিএনজি ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা অথবা মোটরবাইক ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রিজার্ভ করে সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন।
যেখানে থাকবেন
সাজেক এলাকায় থাকার জায়গা নেই। তাই রাতে থাকার জায়গা আগে থেকেই ঠিক করতে হবে। দল বড় হলে প্রস্তুতি নিতে হবে আগে থেকেই। থাকার জন্য আছে রূনময় রিসোর্ট (বিজিবি পরিচালিত), সাজেক রিসোর্ট (সেনাবাহিনী পরিচালিত), আলোর রিসোর্ট এবং ক্লাব হাউস।
প্রয়োজনীয় তথ্য
সাজেক অনেক দুর্গম জায়গা। এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। যাও আছে তা মূলত সৌরবিদ্যুিনর্ভর। উঁচু জায়গা বলে এখানে পানীয় জলের বেশ সংকট। তাই খাওয়ার পানি সঙ্গে নেওয়া উচিত। আর হ্যাঁ, সাজেকের প্রকৃতি একটু ঠাণ্ডা বলে হালকা গরম কাপড় রাখা ভালো।
বিবার্তা/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]