শিরোনাম
হাওরে মেঘ-মেঘাদের বিশাল বাড়ি
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০১৭, ২০:২২
হাওরে মেঘ-মেঘাদের বিশাল বাড়ি
শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ
প্রিন্ট অ-অ+

একদম বরাবরের মতো নয়, নিশিদলের কোনো ভ্রমণই বরাবরের মতো হয় না। এক ট্রিপের সঙ্গে অন্য ট্রিপকে মেলানো শুধু অসম্ভবই নয়, দুরুহ।


৪৬তম ট্রিপ ছিলো হাওরে, গত ২১ জুলাই। আগাম ঢলের দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারেনি হাওর। এরমধ্যেই নিশিদল!


অনেকেই নিশিদলের ভ্রমণকে প্রমোদ ভ্রমণ ভেবে ভুল করতে পারেন। দুর্গত এলাকায় প্রমোদ ভ্রমণ করাটা এক ধরণের ভারসাম্যহীনতার পরিচয়। কিন্তু নিশিদল এমন দুর্গত এলাকায় বহুবারই ভ্রমণ করেছে। লোকের জন্য কিছু করতে পারুক আর না-ই পারুক, অন্তত তাদের দিন-রাতের চালচিত্র দেখে আসতে পেরেছে।


এবারের ভ্রমণ ছিল কিশোরগঞ্জকেন্দ্রিক। কিশোরগঞ্জের হাওরে যেতে হলে অনেকেই ভৈরব থেকে লঞ্চে করে সোজা চলে যান অষ্টগ্রাম। আমরা সেটি করিনি, ঢাকা থেকে সোজা কিশোরগঞ্জ গিয়েছি। ওখান থেকে মরিচখালি বাজার। এরপর ভালো স্বাস্থ্য দেখে একটি ইঞ্জিন-নৌকায় করে হাওরযাত্রা। পুরো নিশিআয়োজনটি ছিলো এই নৌকাতেই। রাতের অন্ধকার দেখা, নৌকায় করেই। অমাবস্যায় চাঁদ দেখার চেষ্টাও হয়েছে নৌকায় করেই। ঢেউ যখন এই নৌকাবাড়িটাকে দোলায়, তখন মনে হয়েছে পৃথিবীটাই দুলছে।


শুধু ঢেউ নয়, মেঘ-মেঘাদেরও বিশাল এক বাড়ি আছে হাওরে। ওরা মাথার ওপর, যোজন যোজন ওপরে মাচাঙ বেঁধে থাকে। ইচ্ছে হলেই টুপটাপ নেমে আসে। নিশিদলের রাতে অনেকবারই নেমেছে।


হাওরের পানি এতটা ক্ষ্যাপাটে ছিল না। নীরবে এসে কৃষকের ফসল তলিয়ে দিয়েছে। এরপর চুপ মেরে আছে। স্থানীয়রা বলছেন, বিটকেলে এই পানি এবার যেমন এসেছে আগে, যাবেও একটু দেরি করে। দেরি করে গেলে কৃষকের খুব একটা সমস্যা নেই। কিন্তু আগাম চলে এলো, এতে সারাবছর না খেয়ে থাকার দশা।


হাওরের লোকেরা তাদের খোলা হাওরের মতোই উদার। পেটে ভাত না থাকলেও অতিথি আপ্যায়নে নামডাক আছে। সবসময় গোলাভরা ধান থাকে, গোয়ালভরা গরু থাকে। এ বছর গোয়ালভরা গরু আছে, কিন্তু গোলা খালি। মানুষের মধ্যে হাহাকার আছে, তারপরও মুখে হাসি।


নিশিদল এই হাসিটাই দেখতে গিয়েছিল। আর দেখে এসেছে হাওরের রাত।


মিঠামইনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির গ্রামের বাড়ি। একেবারে সাধারণ ঘর থেকে উঠে এসেছেন তিনি। রাজনীতি শুরু করেছিলেন তৃণমূল থেকে। এলাকার লোকজন ‘হামিদ সাব’ বলতে অজ্ঞান। এখন তাকে ‘রাষ্ট্রপতি’ বলেই সম্বোধন করেন। রাষ্ট্রপতি কখনো পুরো খাবার একা খেতে পারেন না, এ নিয়ে মিঠামইনের লোকজনের আফসোসের শেষ নেই। একজন মানুষ এক টুকরো রুটি খাবেন তাও ভাগ বসান তার নিরাপত্তাকর্মীরা, এরচেয়ে “নির্যাতন” আর কী হতে পারে! এমনটাই জানাচ্ছিলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কয়েকজন প্রতিবেশি।


মিঠামইন থেকে নিশিদল গেলো গোরাদিঘা গ্রামে। ওখানেই রাতটা কাটলো। যখন বর্ষার পানি উঠতে শুরু করে তখন গোরাদিঘা গ্রামটি সমুদ্রসৈকতের মতো হয়। ২১ তারিখ রাতে পানি ছিল বাড়ির ঘায়েল পর্যন্ত। তাই দীর্ঘ সৈকত পাওয়া যায়নি। কিন্তু ঢেউয়ের গর্জন ছিলো সাঙ্ঘাতিক। অন্ধকারে সাদা ফেনার মতো ঢেউবাতি এগিয়ে আসছিল। গোরাদিঘা বাজারের সামনে এক কাপ চায়ের সঙ্গে তিমি মাছের মতো বড় বড় ঢেউয়ের শব্দ মিশিয়ে খাওয়ার অনুভূতিটাই ছিল অন্যরকম। মধ্যরাতে নৌকা ভাসানো হলো খোলা হাওরে। আকাশে চাঁদ ছিলো না। মেঘ আর মেঘারা ছিলো। পানির নিচে ছিলো মাছ। এদের সঙ্গেই নিশিদল আবিষ্কার করলো ৪৬তম রাত।


পরদিন সকালে অষ্টগ্রাম। ওই এলাকার কাস্তুল গ্রামে স্থানীয় ঘোষের তৈরি মিষ্টি। পরে অষ্টগ্রামের মূল ভূখণ্ডে। ওখানে ঐতিহাসিক কুতুব মসজিদ দেখা। মসজিদটি খুঁজতে গিয়ে আরো এক অত্যাধুনিক কুতুব মসজিদের সন্ধান পাওয়া গেল। মূল কুতুব মসজিদের পাশে আতর, গোলাপ আর মোমবাতির ব্যবসা করেন এমন একজন জানালেন, এই মসজিদটি আল্লাহর অলি কুতুব ইয়েমনির নামে, তিনি ধর্মপ্রচারের জন্য এখানে এসেছিলেন। আর টাইলস করা অত্যাধুনিক কুতুব মসজিদটি কুতুব নামে এক পীরের স্মরণে করা হয়েছে। তবে ওই কুতুব আল্লাহর ওলি ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন ‘মানুষ’!


বিবার্তা/হুমায়ুন/পলাশ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com