প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত উঁচুনিচু পাহাড়, লেকের স্বচ্ছ পানি, বনাঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরের বিস্তৃত তটরেখা নিয়ে গঠিত হয়েছে বাঁশখালী ইকোপার্ক। প্রকৃতি এখানে বিছিয়ে দিয়েছে তার সৌন্দর্যের চাদর। কোলাহলমুক্ত পরিবেশে বন্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলার অপূর্ব স্থান বাঁশখালী ইকোপার্ক।
এ যেন প্রকৃতির একখন্ড স্বর্গভূমি। চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার সাথে এ পার্কের যাতায়াতের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না উঠলেও মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকদের ঢল নেমেছে বাঁশখালী ইকোপার্কে। এখানে মিলবে সবুজ ঘনবন আর নানারকম পশুপাখি ও বন্য প্রাণীর রোমাঞ্চকর সব দৃশ্য। যেন সে এক রহস্যময় জগৎ। পার্কে এখন শোভা পাচ্ছে ৮৫ প্রজাতির পাখি, ৪৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৭ প্রজাতির উভচর প্রাণী।
চিড়িয়াখানার মত কোন খাঁচা নয়, একেকটি অরণ্য এলাকাকে তৈরি করা হয়েছে পশুপাখির অভয়াশ্রম হিসেবে। পার্কে কর্মরত কর্মকর্তারা জানালেন, সেখানে বেশকিছু বিরল প্রজাতির প্রাণী ছাড়াও মায়া হরিণ, হাতি, কালো ভাল্লুক, উড়ন্ত কাঠ বিড়ালী, বন্য শূকর, খরগোশ, বন বিড়াল, মার্বেল বিড়াল, চিতা বিড়াল, সজারু, বনগরু, প্যারা হরিণ, চিতা বিড়াল, ভুবন চিল, সাত ভাই, কালো বুলবুলি, মাথুরা, ভূতুম পেঁচা, লজ্জাবতী বানর, নেংটি ইঁদুর, লক্ষ্মী পেঁচা, ডুবুরী, ময়না, বক, সিপাহী বুলবুলি, ঈগল, হিরামনসহ প্রায় সহস্রাধিক পশুপাখি।
সে সঙ্গে রয়েছে গগনচুম্বী গর্জন, বৈলাম, তেলসুর, সিভিট, চাপালিশ, গুটগুটিয়া, চাকুয়া, শিমুল, বহেরা, বট, পিটালী, পিতরাম, ঢাকিজাম, ডুমুর, বর্তা, ধারামারা, গামারী, হারগাজা, আসাম লতা, জঙ্গী আদা, লতাবাবুল, গিলা গাছসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ। দর্শনার্থীরা পার্কে প্রবেশের সাথে সাথেই দেখা মিলবে জীবন্ত প্রাণীকূলের।
সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ, চিরসবুজ বনাঞ্চল ও প্রাণীকূলের এসব অপরূপ সৌন্দর্য পূর্ণমাত্রায় উপভোগ করার সুবিধার্থে দর্শনার্থীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দুটি সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। টাওয়ারের চূড়ায় উঠলে অনায়াসে দেখতে পাবেন কুতুবদিয়া চ্যানেল, বঙ্গোপসাগর ও চুনতি অভয়ারণ্যের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল। পার্ক ও লেক পরিদর্শনের জন্য তৈরি করা হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ ঝুলন্ত সেতু।
বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত: চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে কালীপুর অতঃপর ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে বাঁশখালী উপজেলার প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত আছে। এ সমুদ্র সৈকত খানখানাবাদ, বাহারছড়া, সরল, গন্ডামারা ও ছনুয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। এর মধ্যে খানখানাবাদ ও বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত নান্দনিক হওয়ায় প্রায়ই বিশেষ করে ছুটির দিনে অসংখ্য ভ্রমণ পিপাসু এ দুই সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ করে।
দেশের অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন অঞ্চল চট্টগ্রামের বাঁশখালী। যার উত্তরে শঙ্খনদী, দক্ষিণে পেকুয়া, এবং পশ্চিম সীমান্ত বঙ্গোপসাগর সীমারেখায় অবস্থিত। পাহাড় থেকে শুরু করে প্যারাবন ও ঝাউবনে ছেয়ে থাকা সমুদ্র, ৩৯২ কিলোমিটারের এই অঞ্চলে কী নেই! নীরবে নিভৃতে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে অনেক ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে আসেন এখানে। এই উত্তর-দক্ষিণ অংশ জুড়ে বালুকাবেলা, রয়েছে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত। অনেকের দেখা না মিললেও বাহারছড়ার এই সমুদ্র সৈকতে কেউ কেউ আসেন, তীর ভাঙ্গা ঢেউ আর সাগর জলে ভাসা জেলে নৌকায় দীপ জ্বলা সন্ধ্যার সুধা পান করতে।
দর্শনার্থীদের পাশাপাশি এখানে বেড়াতে আসেন স্থানীয়রাও। পর্যটকদের মতে, অন্যান্য সমুদ্র সৈকতের তুলনায় এই সৈকত অনেকটাই নীরব। একই আঙ্গিনায় পাশাপাশি দেখা মিলবে পাহাড়ি অঞ্চল, উপকূল ঘেঁষা উর্বর সমতল।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি বাংলাদেশ। যার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে হাজারও দর্শনীয় স্থান এবং অদেখা জায়গা। ঠিক তেমনি একটি জায়গা হচ্ছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়ার এ সমুদ্র সৈকত। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং পর্যটন করপোরেশনের সহযোগিতা পেলে এই জায়গাটিও হয়ে উঠতে পারে অন্যান্য স্থানগুলোর মতোই একটি দর্শনীয় স্থান।
বিবার্তা/জিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]