শিরোনাম
সুযোগ পেলেই ঢুঁ মারুন পাটুয়ার টেকে
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০১৭, ০৯:৩৮
সুযোগ পেলেই ঢুঁ মারুন পাটুয়ার টেকে
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

যান্ত্রিক জীবনে মিলেছে দুই দিনের ছুটি, ব্যাস আর পায় কে? তবে এবার বন্ধুদের সাথে নয়। সঙ্গি জীবনসঙ্গিনী আর তিন কন্যা। রাতের গাড়িতে চড়ে সকাল দশটায় গিয়ে নামি কক্সবাজার। আগে থেকেই কটেজ ছিল রেডি। কলাতলী নেমে সোজা হোটেল লবি, খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে ছুটি সৈকত মুখি। বালিয়াড়ি আর সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে করি মিতালি। বীচ বাইকে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট হতে কলাতলী ছুটে বেড়াই মহাআনন্দে। আমার তিন কন্যা কনিতা, রবিতা, বসিতাহ বলতেই আমি যে অজ্ঞান, তাদের আনন্দ উচ্ছাসে আমিও হই উচ্ছাসিত।


এবার শুরু হয় উত্তাল ঢেউয়ের সাথে জলকেলি, তিন কন্যার প্রতি তীক্ষ্মদৃষ্টি রাখতে গিয়ে আমি তখন মহাব্যস্ত। এ যে সন্তানের প্রতি পিতার অকৃত্রিম ভালবাসারই অংশ। দীর্ঘক্ষণ সমুদ্রের নোনা জলের ঢেউয়ের সঙ্গে মাতামাতি, অতপর ঘোড়ার পিঠে সওয়ার, ফটো স্যুট অবশেষে হোটেল মুখি। ফ্রেস হয়ে বার্ড রেস্তোরাঁয় কয়েক পদের ভর্তা, ভাত, রূপ চাঁদা ফ্রাই দিয়ে পেট পুজারী। চেটে পুটে খেয়ে দেয়ে সময়িক বিশ্রাম নিয়ে ঘুরে বেড়াই শহরজুড়ে, আচার কিনে ব্যাগ ভরি, শামুক ঝিনুকের হরেক পসরা কিনে লই চোরের বোঝা, কলাতলী বীচ লাগোয়া এক দোকানে মজাদার সব বার্গার আর সি-ফুড গ্রোগ্রাস করে চলে যাই ঘুমাতে। ওঠতে হবে সকাল সকাল, যেতে হবে সৌন্দর্যের আধার,নয়ন জুড়ানো প্রকৃতির রাজ্য উখিয়ার পাটুয়ার টেক।


দুরন্ত-ছুটন্ত প্রাণবন্ত মেয়েদের জন্য কি আর চাইলেই ঘুমাতে পারি, কটেজে ছুটাছুটি করে বিছানায় শুই রাত ১২টারও পরে। এক ঘুমে রাত পার। সকালে নাশতা সেরে শফিউলের সিএনজিতে চড়ে যাই ওখিয়ার পথে, মেরীন ড্রাইভে পিচ করা সড়কে সিএনজি ছুটছে। সড়কের এক পাশে সাগর, আরেক পাশে পাহাড়। সারি সারি ঝাউ গাছের ছায়া ঘেরা সুনসান নিরিবিলি সড়ক পথে জার্নি করার মজাই আলাদা।


মাঝে ইনানী ব্রেক, ঘণ্টা তিনেক বিশাল বালিয়াড়ী আর ঢেউয়ের সঙ্গে চলে খুনসুটি, কষ্ট পাই- যখন দেখি অগনিত চিপ্সের প্যাকেট, কলার খোসা সিগারেটের প্যাকেট, ফিল্টারসহ আরো অনেক প্রকারের আবর্জনা সুন্দর একটি সৈকত জুড়ে- যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পড়ে। উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ, সচেতনতার অভাব আর অবহেলা- সমানতালে চলতে থাকলে, খুব শীঘ্রই সুন্দর একটি সৈকতের অপমৃত্যু হবে।


পেট বাবাজীর ডাক পড়ে- যাই সৈকত লাগোয়া নাম ডাকওয়ালা এক রেস্টুরেন্টে, চলে দুপুরের আহার। দূরদূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের টাকা খসাতে জুড়ি মেলা ভার কিন্তু একটি ড্রেসিং রুমের জন্য সামান্য ব্যয় করতে রয়েছে যত কার্পণ্য। টয়লেটের ভিতরেই সারতে হয় ভ্রমণপিপাসুদের ভেজাঁ কাপড় বদলানোর কাজ। আশ্চর্য! বাইরে কত সুন্দর সাজনো-গুছানো অথচ বাতির নিচে অন্ধকার। দেখা হয় ঢাকা থেকে যাওয়া নানান দেশে ঘুরে বেড়ানো হুমায়ুন সাহেবের সাথে। তিনিও এমন একটি রেস্টুরেন্টে ড্রেসিং রুম না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করলেন।


এসব কারণেই আমাদের দেশে পর্যটন শিল্প বিকাশে, যা এক বিশাল অন্তরায়। খাবার পর্ব চুকিয়ে আবারো ছুটি। ইনানী হতে মাত্র সাত কিলো মিটার। পাটুয়ারটেক যাবার পথের সৌন্দর্য যেন আরো হৃদয় গ্রাহি আরো বেশি কোমল। উদার করা প্রকৃতির মোহে মনের অজান্তেই গেয়ে উঠি- ইচ্ছে করে যাই চলে যাই অচিনপুর / যেখানে দুঃখ নেই কষ্ট নেই।


সিএনজির ব্রেকে চেতনা ফিরে এল। একেবারে পাটুয়ারটেক বীচে লাগোয়া থেমেছে। ততক্ষণে ভাটা শুরু, পুরোপুরি মোক্ষম সময়। ওয়াও! এ যেন প্রবাল পাথরের স্বর্গ রাজ্য। সৈকত জুড়ে শামুক ঝিনুকের ছড়াছড়ি, নেই কোন উটকো হকার কিংবা অসচেতন মানুষের উদ্ভট কোলাহল, বর্জ্যমুক্ত চিকচিক করা সাদা বালির সৈকত। ঝিনুক কুড়ানো শিশুদের সঙ্গে আমার তিন কন্যাও মিলে মিশে করেছিল সৌহার্দ্যের মেলাবন্ধন, আজ নেই কোন ধনি গরীবের ভেদাভেদ। সবাই এখানে প্রকৃতির মেহেমান। উচ্ছল উদ্যম প্রাণ চঞ্চল্য ছুটোছুটি। সারিবদ্ব নারিকেল গাছের ছায়া। সৈকতের পাশেই মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে সবুজের গালিচায় মোড়ানো পাহাড়,রয়েছে জেলে পরিবারের জীবন মানের চিত্র। হাত বাড়ালেই মিলবে হরেক পদের সদ্য ধরে আনা সামুদ্রিক মাছ।


তৃপ্তি পাবেন, যখন দেখবেন আপনি ও আপনার শিশুরা কলাতলী বা লাবণী পয়েন্টে বীচে বিচরণ করা মানুষ রুপি দু-পায়া জন্তুগুলোর নোংরামি দেখে বিব্রত না হচ্ছেন। শিশুরা প্রাণ খুলে, পুরো একটা বিকেল ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি- আম কুড়াতে সুখ থুক্কু পড়ন্ত বিকালে সাগর পাড়ে- ঝিনুক কুড়াতে সুখ। সুখস্মৃতি সঙ্গে নিয়ে- পশ্চিমা অথৈ জলে সূর্য লুকানোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও উত্তরে ফেরার পথ ধরি।


যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের গাড়িতে কক্সবাজার কলাতলী। সেখান থেকে সিএনজি/ মাইক্রোতে ওখিয়ার পাটুয়ারটেক। ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস রয়েছে। ভাড়া জন প্রতি ৯০০/-টাকা হতে ২০০০/= টাকা পর্যন্ত।


যেখানে থাকবেন: কক্সবাজারে প্রচুর হোটেল / মোটেল / কটেজ রয়েছে। ভাড়া রুম প্রতি ১২০০/= টাকা হতে ৩২০০০/= টাকা পর্যন্ত। আরো বেশি জানতে নেটে সার্চ দিন, পেয়ে যাবেন আপনার সাধ্যের মধ্যে থাকার জন্য হোটেল-মোটেলের ঠিকানা।


তথ্য: প্রথম দিন কক্সবাজার রাত্রি থেকে পরের দিন খুব ভোরে রওনা হলে যাবার পথে দরিয়ানগর ও ইনানী বীচে ঘুরে পাটুয়ারটেকের সৌন্দর্য মন ভরে উপভোগ করা যাবে, ভ্রমণসূচিতে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পাটুয়ারটেক বীচে ঘোরার উপযুক্ত সময় হল ভাটা। খরচপাতি তিন দিনের ভ্রমণে জন প্রতি চার হাজার টাকা হলেই যথেষ্ট।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com