শিরোনাম
ঘুরে এলাম ঢাকার অদূরে ‘মিনি কক্সবাজার’
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০১৭, ১২:৩৬
ঘুরে এলাম ঢাকার অদূরে ‘মিনি কক্সবাজার’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম কয়েকজন বন্ধু মিলে কোথাও ডে ট্যুরে যাবো। কিন্তু কোথায় যাবো ঠিক করে উঠতে পারছিলাম না। এমন অবস্থায় কাছের একটা বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারলাম দোহারে অবস্থিত ‘মৈনট ঘাট’ -এর কথা। জায়গাটা নাকি খুবই সুন্দর। দেখতে অনেকটা কক্সবাজারের মতই। তাই জায়গাটাকে ‘মিনি কক্সবাজার’ নামেও ডাকা হয়।


ব্যস, মন স্থির করে ফেললাম এই জায়গাতেই যাবো। আর যেই ভাবা সেই কাজ! আমরা আটজন সদস্যের একটা গ্রুপ শুক্রবার দুপুর একটার মধ্যে গুলিস্তান পৌঁছে গেলাম। গোলাপ শাহের মাজারের সামনে থেকে সরাসরি মৈনট ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া যমুনা পরিবহনের বাসে উঠে পড়লাম। বাস ছাড়লো দুপুর দেড়টার দিকে। আর আমরা মৈনট ঘাটে পৌঁছালাম বিকেল সাড়ে ৩টায়।


সত্যিই খুব সুন্দর জায়গা বলা যায়। যেন আমার সামনে সমুদ্র। আর পেছনে সরু রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে সবুজ মাঠ। যেখানে গেলে আপনি মুগ্ধ হবেন, বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকবেন পদ্মা নদীর অপরূপ জলরাশির দিকে। এই বিশাল জলরাশি, পদ্মায় হেলেদুলে ভেসে বেড়ানো জেলেদের নৌকা দেখা আর পদ্মার তীরে হেঁটে বেড়ানো, সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে আপনি এখন ঢাকার দোহারে নয়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আছেন। মূলত এই কারণেই অনেকে মৈনট ঘাটকে বলে থাকেন মিনি কক্সবাজার।



কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি আর কিছু ছবি তোলার পর একটা ট্রলার রিজার্ভ করলাম বালুর চরে যাওয়ার জন্য। পদ্মার মাঝে চলতে শুরু করলো ট্রলার। মনে হলো যেন সমুদ্রের মাঝে আছি। চারিদিকে বিশাল জলরাশি। অস্থির একটা জার্নি। আমরা ট্রলারের ছাদে বসে গান গাচ্ছিলাম। স্পিডবোট পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সেই মাপের দুলুনি দিয়ে যাচ্ছিল। সব মিলিয়ে সত্যিই অসাধারণ।


কিছুক্ষণ পরই বালুর চরে পৌঁছালাম। ট্রলার থেকেই লক্ষ্য করলাম এখানে প্রচুর বালু। তাছাড়া শুধু আমরাই নয়, আরও অনেকেই এসেছেন চরটিতে। অনেকে আবার গোসল করছেন। কেউ পানিতে নেমে খেলছেন। কেউ এসেছেন ফ্যামিলি নিয়ে।


এই চর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া দেখতে পারবেন খুব সুন্দরভাবে। তবে তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখানকার পানি খুবই স্বচ্ছ। এই পানিতে গোসল না করলে যাওয়াটাকে এক প্রকার বৃথাই বলা চলে। তবে এ জন্য প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হয়। তবে আমাদের কারোরই গোসল করার সৌভাগ্য হয়নি। শুধু হাটু সমান পানিতে নেমেই মনকে শান্ত করলাম। এক ঘণ্টা সময় কাটানো পর এবার ফেরার পালা শুরু।



ট্রলারে উঠে পড়লাম। ২০ মিনিট পর পৌঁছে গেলাম যেখান থেকে ট্রলারে উঠেছিলাম সেখানে। তখন বাজে বিকেল সাড়ে ৫টা। এবার মনে পড়লো দুপুরে তো খাওয়াই হয়নি। হোটেল খুঁজতে শুরু করলাম। হোটেলগুলো অবশ্য তেমন উন্নত না। তারপরও ঢুকে পড়লাম একটা হোটেলে। দুপুরের খাবার খেলাম সন্ধ্যায়। খাওয়া শেষে বাসায় ফেরার উদ্দেশে আবার উঠে পড়লাম সেই যমুনা পরিবহনের বাসে।


যেভাবে যাবেন এবং খরচ
ঢাকা থেকে মৈনট ঘাটে আসার সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায়টি হচ্ছে গুলিস্তানের গোলাপ শাহের মাজারের সামনে থেকে সরাসরি মৈনট ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা যমুনা পরিবহনে বাস। ৯০ টাকা করে ভাড়া নেবে। আর সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। বাসটি একেবারে মৈনট ঘাটে পৌঁছে দেবে আপনাকে। ফেরার সময় একই বাসে আবার ঢাকা চলে আসবেন। আর হ্যাঁ, যারা প্রাইভেট কার অথবা বাইক নিয়ে যেতে চান, তারা এই বাসের রুটটাকে ব্যবহার করতে পারেন। আসতে সুবিধা হবে।



‘চর’-এ যাওয়ার জন্য
স্পীডবোটে মৈনট ঘাট থেকে ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন যেতে হলে ১৬০ টাকা করে গুনতে হবে জনপ্রতি। ১০ থেকে ১২ জন নিয়ে চলতে পারবে। স্পীডবোটে মৈনট ঘাট থেকে চর ভদ্রাসন যেতে সাধারণত সময় লাগে ১৬ থেকে ১৭ মিনিট। ট্রলার রিজার্ভ করে পদ্মায় ঘুরতে চাইলে ১ ঘন্টার জন্য ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা গুনতে হবে। অবশ্যই দামাদামি করে নেবেন। চর -এ যেতে চাইলেও ঘন্টা প্রতি ৬০০ টাকা।


যেখানে থাকবেন
ট্যুরিস্টদের থাকার জন্য মৈনট ঘাটের আশপাশে কোনো হোটেল, রিসোর্ট, বোর্ডিং এখনও তৈরি করা হয়নি। স্থানীয় কোনো বাসিন্দার বাড়ি ম্যানেজ করতে না পারলে দিনে এসে দিনেই ফিরে যেতে হবে।


যেখানে খাবেন
বেশির ভাগ মানুষেরই ইচ্ছা থাকে পদ্মার তীরে বসে পদ্মার ইলিশ খাওয়ার। মৈনট ঘাটে দুটি ভাতের হোটেল আছে। একটি আতাহার চৌধুরীর হোটেল অপরটি জুলহাস ভূঁইয়ার আর কার্তিকপুর বাজারে শিকদার ফাস্টফুড নামক একটা খাবারের দোকান। কার্তিকপুরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি অনেকে বিদেশেও পাঠায়। নিরঞ্জন মিষ্টান্নভাণ্ডার, মুসলিম সুইটস, রণজিৎ মিষ্টান্নভাণ্ডারসহ আরও কিছু মিষ্টির দোকান আছে।


বিবার্তা/জাকিয়া/যুথি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com