শিরোনাম
পর্যটকদের নজর কাড়ছে ‘এক্সেলসিয়র সিলেট’
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০১৭, ১০:১৮
পর্যটকদের নজর কাড়ছে ‘এক্সেলসিয়র সিলেট’
সিলেট ব্যুারো
প্রিন্ট অ-অ+

সিলেট দেশের দ্বিতীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত। এছাড়া শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরান (রহ.)-এর মাজার থাকায় সিলেটকে আধ্যাত্মিক রাজাধানীও বলা হয়ে থাকে। আর আধ্যাত্মিক এ রাজধানীতে রয়েছে ছোটবড় হাজারো পাহাড়টিলা। টিলাগুলোতে রয়েছে নানা প্রকৃতির বৃক্ষরাজি।

 

মনোরম ওই পরিবেশকে আরো সুন্দর করতে এগিয়ে এসেছেন প্রবাসীরা। প্রবাসীদের উদ্যোগে সিলেটের খাদিমপাড়া এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘এক্সেলসিয়র সিলেট’। ইতিমধ্যে দেশেবিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের বিনোদনের অন্যতম স্থান হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে এটি। প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠছে রিসোর্টটি।

 

এক্সেলসিয়রের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাঈদ চৌধুরী জানান, সিলেটের খাদিমপাড়া এলাকায় বাংলাদেশের প্রথম ইকো পার্ক জাকারিয়া সিটির অবস্থান। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জাকারিয়া সিটি ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন  হয়। ১৭ একর জায়গা জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে এক্সেলসিয়র সিলেট। প্রায় ৫০ হাজার বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে দুটি হোটেল। একটির নাম ক্যামেলিয়া ও অপরটি মধুমালতি। নিজস্ব ছয়টি হরিণসহ বহু জাতের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত ছায়াঘেরা এই হোটেলের বিজনেস ও ফ্যামিলি স্যুটগুলো সত্যিই চিত্তাকর্ষক। এর সাথে যোগ হবে প্রেসিডেন্সিয়াল ও হানিমুন স্যুটসহ আরো দেড় শতাধিক অত্যাধুনিক কক্ষ।

 

কনফারেন্স ও ব্যাঙ্কুইটিং হল

বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী, সম্মেলন ইত্যাদি ইভেন্ট আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ এক্সেলসিয়র কনফারেন্স অ্যান্ড ব্যাঙ্কুইটিং হল। বর্তমানে এখানে রয়েছে ৫০০ ও ২৫০ আসনের দুটি কনফারেন্স ও ব্যাঙ্কুইটিং হল। এছাড়া সম্প্রতি অত্যাধুনিক সুযোগসুবিধা সম্বলিত এক হাজার আসনের আরেকটি হল নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক বসার ব্যবস্থা রয়েছে।

 

রূফটপ ডাইনিং ও ফুডকোর্ট

এক্সেলসিয়রের দুটি ফ্লোর জুড়ে রয়েছে কন্টিনেন্টাল ক্যুজিন। রয়েছে বুফে খাওয়ার ব্যবস্থাও। উচু টিলার সুরম্য ছাদে রূফটপ ডাইনিং। সেখান থেকে দেখা যাবে- ৪০০ প্রকারের ৫০ হাজার বৃক্ষের নয়নাভিরাম দৃশ্য, ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহ, মনোহরা চায়ের উদ্যান, অসংখ্য বৃক্ষরাজিতে ছেয়ে থাকা জনপদ ও লোকালয়।

 

উপমহাদেশীয় ম্যেনু বৈচিত্রে ভরপুর আভিজাত রেস্টুরেন্টে থাকবে ফিউশন খাবার, বাংলাদেশী, চাইনিজ, থাই-সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের মজাদার খাবার। রয়েছে প্রাইভেট বুকিং সুবিধা এবং পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-বন্ধু কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক ভোজ সভায় মিলিত হওয়ার অনন্য সুযোগ। এক্সেলসিয়র সিলেটের ফুডকোর্ট হবে ভোজনপ্রিয় মানুষের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। বৈচিত্র আর মানসম্পন্ন খাদ্য সমাহার নিয়ে শিশু-কিশোরদের সার্বক্ষণিক মাতিয়ে রাখবে এই ফুডকোর্ট। পৃথক আউটলেটে থাকবে ব্লেনডেড হেলথ বেভারেজ, হালকা স্ন্যাক্স, বাহারি আইসক্রিম, তাজা ফলের রস ও রকমারি খাবার। পরিবেশবান্ধব ডাইনিং ব্যবস্থাপনা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন।

 

স্পোর্টস অ্যান্ড লেজার

এক্সেলসিয়রের আগতরা কেবল স্বাচ্ছন্দ্যময় রাত্রি যাপন কিংবা স্বাস্থ্যপ্রদ রকমারি খাদ্য উপভোগের মধ্যেই সীমিত থাকবেন না। খেলাধুলা, শরীরচর্চা এবং বিনোদনের ক্ষেত্রেও চমৎকার পরিবেশ উপভোগ করবেন। কারণ এখানে রয়েছে বিশ্বমানের ক্রীড়া সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি দিয়ে সাজানো একটি স্পোর্টস ও লেজার সেন্টার। এতে থাকছে হেলথ ক্লাব, ফিটনেস জিম, বিউটি পার্লার, সুইমিংপুল, স্পা, জ্যাকুজি ও ছওনা। স্পোর্টস সেন্টারে অতিথিরা স্কোয়াস, বলিং, টেনিস, ফুটবল ও ক্রিকেটসহ বিভিন্ন রকম খেলাধুলার সুযোগ পাবেন। সর্বাধুনিক ফিটনেস সামগ্রী ব্যবহারে সহায়তার জন্য নিয়োজিত থাকবেন সুদক্ষ ইন্সট্রাক্টর।

 

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড

সত্যিকার অর্থে উইমেন্স ওয়ার্ল্ড হবে নারীদের একটি আপন ভুবন। এতে কেবল নারীদের জন্য পণ্য বিপণন ও অন্যান্য সেবা প্রদান করা হবে। এখানে এলিগেন্ট বিউটি পার্লারে সৌন্দর্য চর্চা ও থেরাপি সকলকেই আকর্ষণ করবে। সম্পূর্ণ নারী কর্তৃক পরিচালিত একান্ত পরিবেশে তারা ফ্যাশন সামগ্রী ক্রয়, হালকা স্ন্যাক্স ও পানীয় সুবিধা উপভোগ করবেন। উইমেন্স ওয়ার্ল্ডে শিশুদের পরিচর্যার ব্যবস্থাও থাকবে।

 

 

কিডস ওয়ান্ডার

শিশুদের চিত্ত বিনোদন এবং খেলাধুলার জন্য থাকবে বিশ্বমানের কিডস ওয়ান্ডার। প্লে-স্টেশন, এক্সবক্স, নিনটেন্ডো, লেজার গান, কম্পিউটার গেমসহ নতুন নতুন খেলনা সামগ্রী দিয়ে সাজানো হবে এটি। শিশুরা মেতে উঠবে হৈ-হুল্লোরে। টয় শপ থেকে পছন্দমতো খেলনাও ক্রয় করা যাবে। শিশুদের জন্য আরো থাকবে কম্পিউটার ও লাইব্রেরি। যেখানে তারা মজার মজার গল্প ও ফিকশন পড়তে পারবে।

 

বিশ্বমানের সুযোগ সুবিধা

সর্বোচ্চ সেবাপ্রদানের প্রত্যয় নিয়েই যাত্রা শুরু করছে এক্সেলসিয়র। এতে বিশ্বমানের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে।

 

স্থানীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সিলেট থেকে আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরামসহ সেভেন সিস্টার্সের অন্যান্য স্থানে ভ্রমণ খুবই সহজ। নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আচ্ছাদিত গারো, খাসিয়া, জৈন্তা ও কাছাড়সহ প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচু শিলং পাহাড়। ইতিমধ্যে এসব এলাকা পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

 

এ অঞ্চলে আন্তর্জাতিক মানের কোনো হোটেল না থাকায় এক্সেলসিয়র এই চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে। এছাড়া ইউরোপ থেকে এশিয়া বিস্তৃত সড়কপথ এশিয়ান হাইওয়ে ভারত হয়ে সিলেটে মিশেছে। এটিই মিয়ানমার, চায়নাসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। এতে সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক হাব হিসেবে সিলেটের বিস্তৃতি ঘটছে বিশ্বময়। বিদেশি পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত বেড়ে চলেছে।

 

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড মেম্বার ও পর্যটন গবেষক জামিউল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটন শিল্পে সংশ্লিষ্ট সকলে যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি তাহলে সরকার আমাদের সঙ্গে থাকবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ মিলে আমরা এখানে পর্যটনের জন্য একটা নতুন দ্বার খুলতে পারব। এক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে এক্সেলসিয়র সিলেট।’

 

ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কিল কাউন্সিল সভাপতি এ কে এম বারী বলেন, কেবল বাংলাদেশি পর্যটকদের নিয়ে চিন্তা করলে হবে না। বিদেশি পর্যটকদেরও নিয়ে আসতে হবে। সরকার নিকটবর্তী দেশসমূহ, বিশেষ করে ভারতের পর্যটকদের বাংলাদেশে আসার সহজ সুযোগ করে দিতে হবে।

 

বিশ্বের সেরা ১০ জনের অন্যতম সেলিব্রেটি সেফ টনি খান বলেন, পর্যটনের জন্য সিলেটকে যদি আমরা পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে গ্রহণ করি, তাহলে এটা হবে প্রথমে রিজিওনাল, পরে ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে পর্যটকদের সেইফটি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হবে।

 

বিবার্তা/খলিল/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com