শিরোনাম
ঘুরে আসুন বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০১৭, ১০:৪৪
ঘুরে আসুন বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

একদিন সুফীসাধক বায়েজিদ বোস্তামীর মা গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে পানি খেতে চাইলেন। বালক বায়েজিদ পানি আনতে গিয়ে দেখলেন কলসিতে পানি নেই। অগত্যা তিনি রাত দুপুরে বহু দূরের ঝরনা থেকে পানি নিয়ে এসে দেখলেন মা আবারো ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু তিনি মায়ের ঘুম না ভাঙিয়ে সারারাত পানির গ্লাস হাতে মায়ের শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে প্রতীক্ষায় রইলেন। মায়ের দোয়ার বরকতে হজরত বায়েজিদ বড় হয়ে বিশ্ববিখ্যাত আউলিয়াদের একজন হয়ে গেলেন।


হজরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.) ৮০৪ সালে ইরানের বোস্তাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন এক ধার্মিক পরিবারে। আগেকার দিনে কিছু কিছু দেশে নামের শেষে জন্মগ্রহণকারী অঞ্চলের নাম জুড়ে দেয়ার রীতি বেশ প্রচলিত ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় তার নামের শেষে বসে যায় বোস্তামী শব্দটি। বোস্তামী মানে বোস্তাম শহরের বাসিন্দা। পিতামাতার দেয়া তার নাম ছিল আবু ইয়াজিদ বিস্তামী। তার পিতার নাম ছিল তয়ফুর। বাবার নামানুসারে আবার কেউ কেউ তাকে ডাকেন তায়ফুর আবু ইয়াজিদ আল বোস্তামী নামে।


বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। সমাধি পাহাড়ের পাদদেশে একটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট মোগল রীতির আয়তাকার মসজিদ এবং একটি বিশালাকার দীঘি আছে। মিথ প্রচলিত আছে বায়েজিদ বোস্তামী নিজে এসব কচ্ছপ চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছিলেন। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন বায়েজিদ দুষ্টু জীনদের কচ্ছপ বানিয়ে বন্দি করে রেখেছেন। স্থাপত্যশৈলী থেকে ধারণা করা হয় মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে মসজিদটি নির্মিত। হজরত বায়েজিদের দাদা একজন ফার্সি ধর্মাবলম্বী ছিলেন। যিনি পরবর্তীকালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।



সুফি সাধক ও আউলিয়ারা চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের সময় সচরাচর পাহাড়ের উপর কিংবা জঙ্গলঘেরা অঞ্চলে আবাস স্থাপন করেন এবং এসব জায়গায় মাজার কিংবা এই ধরনের বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেন। বেশিভাগ সময়ই তিনি নিজ বাড়ির নিভৃতে অথবা মসজিতে কাটিয়েছেন। নিভৃতচারী হওয়া সত্ত্বেও সুফি জগৎ থেকে তিনি কখনোই আলাদা থাকেননি। সুফিবাদের আলোচনা করার জন্য তিনি লোকজনকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ করতেন। তার বাবা ছিলেন একজন সুফি সাধক, মাও ছিলেন ধর্মপ্রাণ মহিলা।


বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের পাদদেশে একটি সুবিশাল দীঘি অবস্থিত। শত বছর ধরে ধারণা ছিল, ‘বোস্তামী কাছিম’ শুধু চট্টগ্রামে বায়েজিদ বোস্তামী (রহ)-এর মাজারের পুকুরে পাওয়া যায়। মাজার দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মাজার তত্ত্বাবধায়ক কমিটির লোকদের দিয়েই এদের প্রতিপালন করা হয়। বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গণ সংলগ্ন এই দীঘিতে দেড়শ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ কচ্ছপের আবাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ কচ্ছপের বৈজ্ঞানিক নাম হলো অ্যাসপিডেরিটিস নাইগ্রিক্যান্স।


প্রাণিবিজ্ঞানী অ্যান্ডারসন ১৮৭৫ সালে সর্বপ্রথম ভারতের জাদুঘরে রক্ষিত দুটি নমুনা থেকে বোস্তামীর কচ্ছপের প্রজাতিটির সন্ধান পান। রক্ষিত নমুনা দুটি ছিল চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী পুকুর থেকে সংগৃহীত। ১৯১২ সালে প্রাণিবিজ্ঞানী এন এনানডেলের মতে, বোস্তামীর কচ্ছপ এক সময় ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকা থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে বিচরণ করত। এই পুকুরে কচ্ছপগুলো কীভাবে এলো এতদিন পরে তা জানার কোনো উপায় নেই আজ।


তবে যেভাবে আসুক না কেন মাজারের এই পুকুরে শত শত বছর ধরে বাস করা কাচ্ছপগুলো বিশ্বে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রজাতির, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।


এই প্রজাতির কচ্ছপ এতই দুর্লভ ১৯১৪ সালে প্রাণিবিজ্ঞানী এন এনানডেলের ও অন্য প্রাণিবিজ্ঞানী এম শাস্ত্রী এক গবেষণায় উল্লেখ করেন, বোস্তামীর কচ্ছপ বর্তমানে শুধু চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী মাজার সংলগ্ন পুকুরেই টিকে আছে। পৃথিবীর কোথাও এই প্রজাতির কচ্ছপ আর দেখা যায় না।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com