শিরোনাম
ধারাবাহিক উপন্যাস
হঠাৎ খলিল পর্ব-১
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৪৫
হঠাৎ খলিল পর্ব-১
পলাশ মাহবুব
প্রিন্ট অ-অ+

প্রতিদিনই একই ঘটনা।অফিস রিসিপশানের ঘড়ি দেখে খলিল।

১১ টা।

অফিস শুরু হয়ে গেছে সকাল নয়টায়।

দুই ঘন্টা লেট।

এটা অবশ্য খুব বেশি দেরি না খলিলের জন্য।

সপ্তাহে অফিস হয় ছয়দিন।

কম হলেও তিনদিন দেরি করে সে।

আট ঘন্টা অফিস টাইমের ছয় ঘন্টা পার করে আসার ইতিহাসও আছে তার।

আজকের ইতিহাস অবশ্য ভিন্ন।

রাত থেকে ধরেছে সর্দি আর কাশিতে।

কাশিটা খলিলের জন্য পার্মানেন্ট।

বারো মাস তার কাশি থাকে।

মাঝে মাঝে তার সাথে যুক্ত হয় জ্বর-সর্দি।

দুটো যখন এক হয় তখন অবস্থা হয় কাহিল।

খলিল যাকে নিয়ে মেসে থাকে সেই মনির হচ্ছে ডাক্তারের বড় ভাই।

ডায়রিয়া থেকে ডিপথেরিয়া সব রোগের চিকিৎসা তার জানা।

তবে বেশির ভাগ রোগের ওষুধ গিয়ে ঠেকে ঘুমের ওষুধে।

খলিল প্রথম দিকে মনে করত ছেলেটা নেশা-টেশা করে। না হলে ঘুমের ট্যাবলেটের দিকে ঝোঁক কেন এত।

ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি।

মনির ঘুম থেকে ওঠে খুব ভোরে।

তারপর মুক্ত হস্ত ব্যায়াম করে আধা ঘন্টা।

বুকডন দেয় গোটা পঞ্চাশেক।

খলিল মাঝে মাঝে তাকে বুকডন গোনায় সহযোগিতা করে।

খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা আর নেশা-ভাংয়ের সাপ-বেজি সম্পর্ক। পরস্পর এক হওয়ার সুযোগ নেই।

নেশাখোরদের রাত আর সকাল দুটোই হয় দেরিতে।

তাদের সূর্যাতংক রোগ আছে।

সূর্যের আলো ভয় পায়।

সর্দি-কাশির কথা শুনে খলিলকে একটা ঘুমের ওষুধ ধরিয়ে দিয়েছে মনির।

ভাই এক ঢোকে এইটা খাইয়া ফালান।

সর্দি-কাশির জন্য ঘুমের ওষুধ?

হ ভাই। সর্দি কেশে ঘুমটা হইলো আসল। টানা ঘুম হইলে সর্দি দেখবেন নাকের গর্তে ঢুকছে। দেখেন না সর্দি-কাশির সিরাপ খাইলে ঘুম ঘুম লাগে। কাশির সিরাপ হইলো ঘুমের ট্যাবলেট গুড়া কইরা বানানো মিষ্টি শরবত। মাল-মসল্লা দুইটায় একই। ট্যাবলেটটা সুগার ফ্রি এই আরকি।

মনিরের ব্যাখা খলিলের কাছে পরিষ্কার হয় না।

তারপরও ওষুধটা সে খায়।

ছেলেটা শখ করে একটা ওষুধ দিয়েছে।

 

খলিল অন্যদের মতো না।

অন্যরা অসুস্থ হওয়ার আগেই ওষুধ খাওয়া শুরু করে।

খলিল প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকে কিন্তু ওষুধ খায় না।

সুফলের চেয়ে তার কাছে ওষুধের কুফলই বেশি।

এই যেমন আজ।

ঘুমের ওষুধ খেয়ে টানা ঘুম দিয়েছে।

এখন চাকরি নিয়েই টানাটানি।

ঘুম ভালো হয়েছে ঠিকই।

কিন্ত সর্দি যায়নি।

কাশি আগের চেয়ে বেড়েছে।

কাশি দলা পাকিয়ে ওপরে উঠে আসে।

শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো দু’হাতে মুখ চেপে আওয়াজ নামানোর চেষ্টা করে খলিল।

কারণ কাশির শব্দ শুনলেই সে যে এসেছে সেটা ম্যানেজার স্যার টের পেয়ে যাবেন।

অফিসে খলিলের কাঁশি আর আতাহার সাহেবের হাঁচি সুপরিচিত।

আওয়াজেই পরিচয়।

ম্যানেজার সাহেব টের পাওয়া মানে ঘটনাস্থলেই ঘটনা শুরু হয়ে যাবে।

খলিল চাচ্ছে না সবার সামনে ঘটনাটা ঘটুক।

অপমান সহ্য করতে হয় নির্জনে।

প্রশংসা প্রকাশ্যে।

 

খলিল দাঁড়িয়ে আছে রিসিপশানের সামনে।

আবহাওয়া বোঝার চেষ্টা করছে।

এই মুহুর্তে ঢুকবে কি ঢুকবে না।

তার ডেস্কে যেতে হয় ম্যানেজার স্যারের রুমের সামনে দিয়ে।

ব্রিজের টোল প্লাজার মতো হা করে আছে স্যারের রুম।

ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই।

এখন ম্যানেজার স্যারের সামনে পড়া মানে দাওয়াত কার্ড পাঠিয়ে বিপদ আনা।

উদ্ধারকারি জাহাজ হামজার অপেক্ষায় আছে খলিল।

কেউ ভেতরে ঢুকলে তাকে ঢাল বানিয়ে সেও ঢুকে পড়বে।

বেশিক্ষন অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়না তাকে।

এমডি সাহেবের রুম থেকে ম্যানেজারের সাহেবের ডাক পড়ায় তিনি বেরিয়ে যান।

খলিলও সেই ফাঁকে ম্যানেজার স্যারের রুম পেরিয়ে যায়।

বিড়াল পায়ে নিজের ডেস্কের সামনে এসে দাঁড়ায়।

ম্যানেজার স্যার না দেখলেও তার হয়ে দেখার অনেকে আছে অফিসে।

চোখ এড়াতে যতটা সম্ভব শব্দ ছাড়াই কাজটা করতে চেয়েছিল খলিল।

কিন্তু হয় না।

কাঁশি হচ্ছে একটি সুযোগ সন্ধানি রোগ।

যখন শব্দ করতে চাইবেন না তখনই খুঁক করে ডাক দিয়ে উঠবে।

খলিলের কাঁশির শব্দে আশপাশের সবাই তাকায়।

দু-একজন তাকে আপাদমস্তক দেখে।

ও! এখন তবে আসার সময় হলো!

তাদের চোখ দেখে মনে হয় খলিলকে আজ প্রথম দেখলো।

কারো চোখকে পাত্তা না দিয়ে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে খলিল।

খলিলের টেবিলের উল্টো দিকে বসে নুপূর।

কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে সে।

সবসময় এই নিয়েই আছে।

হয় হেডফোন নাইলে মোবাইল ফোন। আর বাকি সময় হিন্দি সিরিয়াল। এই করে অফিস টাইম শেষ।

নুপূর মেয়েটা বেশ সুন্দরি।

পৃথিবীতে খুব কম সুন্দরি মেয়ে আছে যারা নিজেদের সৌন্দর্যের খবর রাখে না। তারা যে কি পরিমাণ সুন্দরি সেই খবর তাদের কাছে নাই।

নুপুর হলো সেই দলের।

খলিল মনে মনে নুপূরকে পছন্দ করে।

কিন্তু সাহস করে তাকে সে কথা বলতে পারে না।

চেষ্টা যে দু-একবার করেনি তা না।

কি বলবে সেটা কাগজে লিখে আয়নার সামনে মহড়াও দিয়েছে।

কিন্তু বুকে সাহস জমার আগেই কফ জমে যায়।

খুক করে কেঁশে ওঠে খলিল।

কাঁচের বন্ধনির ওপার থেকে খলিলের দিকে তাকায় নুপূর।

নুপূরের চাহনিতে বিরক্তি।

হয়তো হিন্দি গানের মাঝে শব্দ দূষণ হওয়ায় বিরক্ত সে।

খলিলও তাকায়।

কানে হেডফোন থাকায় নুপূর মুখ খোলে না।

সে হাতের ঘড়ির দিকে ইঙ্গিত করে।

কি বিষয়?

কয়টা বাজে?

আসছেন তো দেরি করে। এদিক সেদিক না তাকিয়ে কাজে শুরু করেন।

ইশারা ভাষায় নুপূর যা বলে তার মানে এরকমই দাঁড়ায়।

খলিলও হাত তুলে ইশারায় জবাব দিতে চেয়েছিল।

কিন্তু কাঁশি চলে আসায় হাত দিয়ে দ্রুত মুখ চেপে ধরে।

কাঁশির শব্দ তাতে খুব একটা ঢাকা পরে না।...চলবে

 

বিবার্তা/পলাশ/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com