হুড়মুড় করে ম্যানেজার সাহেবের রুমে ঢোকেন কাউছার সাহেব, অংক মিলতেছে। দুই দুইয়ে হয় চাইর। পোনে চাইর পর্যন্ত মিলাই ফেলছি।
ম্যানেজার সাহেব অফিসের জরুরি ফাইল দেখছিলেন। চোখ তুলে তাকান তিনি, হিসাবের ফাইল দেখছি আমি, আর অংক মেলাচ্ছেন আপনি? বুঝলাম না।
হাসতে হাসতে ম্যানেজার সাহেব জানতে চান।
আরে ভাই, আমি তো আর অফিসের ক্যাশিয়ার না যে টাকার অংক করবো। এখন আমার একটাই অংক। জমি বেচার অংক।
তাই নাকি! কাস্টমার পেয়েছেন কোনও?
একটা না। কাস্টমার পাইছি দুইটা। তার মধ্যে একজন তো বিরাট দেশপ্রেমিক মানুষ। সবাই দেশের জমি বেইচা বিদেশ যায়, আর উনি বিদেশ থেকে দেশে আসছেন। এখন ডলার ভাঙ্গাইয়া জমি ক্রয় করবেন। এমন লোক লাখে একটা।
তো আপনার ওই লাখের এক বিদেশে কি করতেন?
বিদেশে তো মনে করেন সবাই এসি-ডিসি। হয় হোটেলের বাসন মাজে নয়তো রাস্তার ফ্লোর মাজে। এই লোক অবশ্য মাজামাজির ধারে-কাছে ছিলেন না। উন্নত জব করতেন। এখন দেশের মাটিতে কিছু করতে চান। সেজন্য মাটি খুঁজতেছেন।
আরে ভাই, বিস্তারিত বলেন। কথা জমিয়ে রাখা আপনার একটা বদভ্যাস। আগ্রহ তৈরি করে তারপর একটু একটু করে তথ্য ছাড়েন।
ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা . . . ভুড়ি নাচিয়ে হাসেন কাউছার সাহেব, আরে ভাই, জমি কেনা-বেচার আলাপ-আলোচনা হইলো গিয়া এক ধরনের শিল্প। কথার খেলা। একপক্ষ গিট্টু দেবে তো আরেক পক্ষ গিট্টু ছুটিয়ে নতুন গিট্টু লাগাবে। এইসব আলোচনায় একটা ওঠা-নামা আছে।
তা উঠলো না নামলো?
কাস্টমার মনে করেন আমার পকেটে।
নিজের পকেটে হাত ঢুকিয়ে পকেট থেকে কাস্টমার বের করার ভঙ্গি করেন কাউছার সাহেব।
কাস্টমার পকেটে রেখে তো কোনও লাভ নাই ভাই। বরং কাস্টমারের পকেটে ঢুকতে হবে। টাকা-পয়সা কেমন আছে বুঝতে হবে।
টাকা কেমন আছে ওই নিয়া একদমই চিন্তা করবেন না। আপনি আলাপ করবেন টাকায়। আর উনি কথা বলবেন ডলারে। এক ডলার সমান আশি টাকা। বিষয়ডা মাথায় আছে তো?
ম্যানেজার সাহেব ডলারের বিষয়টি মাথায় নেয়ার আগে ইদ্রিস মাথা ঢোকায়।
তার হাতে পুরি আর চা। ট্রে থেকে একটা পুরি হাতে নেন কাউছার সাহেব।
স্বপ্ন আর পুরির মইধ্যে মিলটা কি জানেন সোলেমান ভাই?
কিসের সাথে যে আপনি মেলান। আমি ওসব বুঝি না।
স্বপ্ন আর পুরির মধ্যে মিল হলো দুটোর মধ্যেই বাতাস থাকে। ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা . . .
গরম পুরির পেটের ওপর একটা চাপ দেন কাউছার সাহেব। পুরি থেকে গরম ধোঁয়া বের হয়।
শোনেন সোলেমান ভাই, আপনি নাকে তেল দিয়ে বসে থাকেন। কাস্টমারের সাথে আমি বাহাস চালাচ্ছি। কাস্টমারের ছোট খালু যদিও একটু বেশি কথা বলে, ইদ্রিস মার্কা লোক। বয়সের আগে পাকছে। তার ওপরে পুলিশ। খালি জেরা করার অভ্যাস। তবে এই কাউছার চৌকিদারের সাথে কুলাইতে হইলে তারে আরেকবার বিএসএস দিতে হবে। ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা।
বলক ওঠা পানির মতো ভুড়ি নাচান কাউছার সাহেব।
আপনারা কি চৌকিদার বংশ নাকি?
কাউছার সাহেবের বংশ যে চৌকিদার, ম্যানেজার সাহেব আজ প্রথম জানলেন।
রাইট। বৃক্ষের পরিচয় হলো ফলে। এই যে এই অফিসে আমি পইড়া আছি। ক্যান আছি? এই অফিসের মালিক আমার আত্মীয়। আত্মীয়ের সম্পদ পাহারা দেয়ার মানসিকতা নিয়ে এখানে আছি। পূর্বপুরুষ যা করছেন, আমিও তার বাইরে যাইতে পারি না। ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা . . .
কাউছার ভাই, আমার জমি পাহারা দেয়ার দরকার নাই। দয়া করে ওটা বিক্রির ব্যবস্থা করেন।
কাউছার সাহেবের হাসি দেখে সোলায়মান সাহেবও হাসেন, আপনি টেনশন নিয়েন না একদম। এই কাউছার যখন ছাইহস্ত লাগাইছে তখন একটা কিছু হবে। বড়শি যখন পাতছি মাছ তখন ধরবোই। ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা . . .
আইচ্ছা, আমি এখন যাই। অফিসে একটা সার্কেল খাইয়া আসি।
মোতালেব সাহেব হাত তুলে বিদায় নেন। ম্যানেজার সাহেবের রুম থেকে বের হওয়ার পথে ইদ্রিস তার সামনে পড়ে।ইদ্রিস সরে পড়তে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি।
এই ব্যাটা ওভারডোজ ইদ্রিস, এদিকে আয়!
ইদ্রিস কাছে আসে। তবে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ায়।
বয়সের আগে বুড়া হইছোস ঠিকই, কিন্তু মাথা পাকে নাই। তোরে না একশবার বলছি ঠাণ্ডা চা দিবি না। কথা কানে যায় না?
ফ্লাস্কের প্যাঁচ খুইল্লা গেছে স্যার। দোকান থেইকা আনতে আনতে দুধ চা তাই ঠাণ্ডা হইয়া যায়। আমি কি করুম!
প্যাঁচ খুইল্লা গেছে স্যার। প্যাঁচ খুইল্লা গেছে তো কি হইছে? তোর মাথায় তো অনেক প্যাঁচ। সেখান থিকা একটা প্যাঁচ ফ্ল্যাস্কে লাগাই নিলেই তো পারস।
হাত দিয়ে ইদ্রিসের মাথায় গুতা দেন তিনি, নামেও বুড়া কামেও বুড়া। খবরদার, যদি আমারে আবার ঠাণ্ডা চা খাওয়াস তো তোর মাথার প্যাঁচও খুইল্লা দিমু। মানুষ চরানো হচ্ছে আমার কাজ। আমার সাথে প্যাঁচের দোহাই। গরম আলোচনার মধ্যে ঠাণ্ডা চা। আহাম্মকের চূড়ান্ত কোথাকার! (চলবে)
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]