‘সুস্বাস্থ্য সকল সুখের মূল’ একথার কোনো বিকল্প নেই! আজকের বিশ্বে মানুষের সবচেয়ে কমন সমস্যা হচ্ছে লাইফ স্টাইল সম্পর্কিত অসুখ!
একদিকে যেমন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি মানুষের জীবনকে সহজ করে দিচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে মানুষকে বাতব্যাধিগ্রস্ত করে তুলছে! এই অতি সহজ জীবন যাপনই মানুষের লাইফস্টাইল অসুখ যেমন ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, ইত্যাদির অন্যতম অনুঘটক!
আগের দিনে ছিল না এত যানবাহন, যন্ত্রপাতি, গৃহস্থালী জিনিসপত্র। দিনে দিনে যতো প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, ততোই মানুষের হাত পায়ের ব্যবহার কমছে! এগুলা আবার মনের জটিলতা/কুটিলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। যা প্রকারন্তরে খাদ্যে ভেজালকে উস্কে দিচ্ছে। আবার বিভিন্ন অসুখের সূত্রপাত ঘটাচ্ছে! যতদিন মনের ভেজাল দূর না হবে ততদিন খাদ্যে ভেজাল দূর করা কঠিন হবে! আগের দিনে তো এতো প্রযুক্তির ব্যবহার ছিলনা। ছিলনা এতো প্রিজারভেটিভ! মানুষ ভেজালমুক্ত খাবার
তৈরি করতো, খেতো এবং শারিরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতো, বিশুদ্ধভাবে বাঁচতো!
এখন আমাদের জীবন গাড়ি খুব একটা হাঁটে না, দৌঁড়ায় না, স্রেফ বসে বসে চলে। কখনো বাইকে বসে বা অন্য কোনো যানবাহনে বসে বা চার চাকার ব্যক্তিগত যানবাহনে বসে জীবন চলে। প্রাকৃতিক বাতাস ও আমরা দূষিত করে ফেলেছি। তাই সবাই বাড়িতে বসে, গাড়িতে বসে কৃত্রিম ঠান্ডা বাতাস নিতে পছন্দ করে। এটা ঠিক বর্তমানে মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়েছে (৭২ বছর)। কিন্তু এই আয়ুষ্কাল কাটাতে গিয়ে মানুষের শরীর এক একটা ওষুধের দোকান হয়ে ওঠে। মানুষকে মুড়ি মুড়কির মতো ট্যাবলেট খেতে হয়। অতি প্রক্রিয়াজাত কেমিক্যাল সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে খেয়ে আমাদের শরীরে অপ্রয়োজনীয় অপ্রত্যাশিত আবর্জনা বেশি হয়ে যাচ্ছে! শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত সুরক্ষা দিতে পারছে না! শরীরের সৈন্য বাহিনীর ক্ষমতার তুলনায় বাইরের অপ্রয়োজনীয় জিনিস বেশি শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। গলায় উন্নত মানের ফিল্টার থাকলে মনে হয় একটু ভালো হতো।
যাই হোক, আমাদের এই অলস আবর্জনাময় শরীরের গল্পের মাঝেও কিছু অনুকরণীয় দীর্ঘ জীবনের গল্প আছে। কুষ্টিয়া জেলার আব্দালপুর ইউপির ইসাহক আলী মাস্টারের বয়স ১০০ বছরের বেশি। বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা ছাড়া তার তেমন কোনো অসুখ নেই। তার সাদা চকচকে দাঁত দেখলে যে কোনো টুথপেষ্ট কোম্পানি ছুটে আসবে তাকে তাদের বিজ্ঞাপনের মডেল বানাতে। শতোর্ধ বয়সেও মাংসের হাড্ডি পছন্দ করেন তিনি। গরুর মাংস সাধারণত এড়িয়ে চলেন। প্রতিদিন ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে নিমের ডালের মেসওয়াক দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করেন। তারপর একটু সিদ্ধ ছোলা, একটি সিদ্ধ ডিম, সাথে কালো জিরা মধু। এগুলো তার প্রতিদিন সকালের খাদ্যাভাস।
সর্বোপরি তার দৈনন্দিন খাদ্যাভাস খুবই বুদ্ধিদীপ্ত। মুখ তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। মুখে এমন কিছু দেন না যেটা তার শরীর গাড়িকে বিগডে দিয়ে বিকল করতে পারে। শরীরের বিনোদনের জন্য খেয়েছেন তো মরেছেন! খাওয়া হতে হবে শরীর ফিট রাখার জন্য। সাধারণত তিনি বাইরের খাবার এড়িয়ে চলেন। তার নেই কোন চা, বিড়ি, সিগারেট, পান বা গুলের নেশা! তবে খাবারের পরে জোয়ান খেতে তার ভুল হয় না। এই সব পরিমিত খাদ্যাভাস এবং জীবনাভ্যাসই তার এই দীর্ঘ জীবনের মন্ত্র।
পাশাপাশি আমি মনে করি তার এই শতোর্ধ আয়ুর আরেকটি অন্যতম অনুঘটক হলো তার বন্ধু-বাইসাইকেল। কয়েক বছর আগেও বাইসাইকেল-ই ছিল তার একমাত্র বাহন। সারাজীবন মানুষের সেবায় কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে, জেলা আওয়ামীলগের উপদেষ্টা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, স্কুল ও কলেজের সাবেক সভাপতি।
যদিও এখন পায়ের বল কমতে শুরু করেছে। তবুও গাড়ি থামিয়ে রাখতে নারাজ তিনি ! এখনও স্কুলের মিটিং, দলীয় মিছিল মিটিংয়ের সামনে থাকতে ভালবাসেন। এই বয়সেও সবার বিপদে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেন। আসলে গতি কমলেও মনের বল কমেনি।
আমরা ভুলে যাই নিজের শরীর গাড়িটা ফিট না থাকলে অন্য যত বিলাসবহুল গাড়িই থাকুক না কেন, লাভ নেই। বিছানায় পড়ে থাকতে হবে গাড়িতে আর চড়া হবে না। আসলে সুস্থ থাকার জন্য, শরীর গাড়ি ঠিক মতো চালানের জন্য সবারই এবিসি অব হেল্থ অ্যান্ড নিউট্রশন এডুকেশন থাকা দরকার। যাই হোক, এই বয়সেও ইসাহক আলী মাস্টারের গাড়ি এখন পর্যন্ত ঠিক ঠাক চলছে। এখনো কোনো পার্টস বদলাতে হয়নি। কোনো দুর্ঘটনাও ঘটেনি। তার ইচ্ছা সবাই যেন আমরা নিজের নিজের গাড়ির প্রতি যত্নশীল হই এবং ভালো থাকি।
লেখক: , সহকারী অধ্যাপক, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
বিবার্তা/শাম্মী/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]