রোজার প্রথম দিনই জমে উঠেছে রাজধানীর ইফতার বাজার। ফুটপাত থেকে অভিজাত রেস্টুরেন্ট - সবখানে ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। আর মজাদার ইফতারের খোঁজে দোকানগুলোতে ভিড় করছেন রোজাদাররা।

শুক্রবার বিকালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

শুক্রবার জুমার পর বিভিন্ন ইফতারির দোকান ঘুরে দেখা যায়, নানা স্বাদের ইফতারসামগ্রীতে দোকানগুলো ভরে গেছে। ক্রেতারাও বিভিন্ন দোকান ঘুরে নিজেদের পছন্দমতো ইফতারি কিনছেন।

ইফতারির দোকানগুলোতে মুড়ি, ছোলা, আলুর চপ, ডিম চপ, বেগুনি, আখনি, ছানা, পেঁয়াজু, খিচুড়ি, হালিম, কাবাব, বাখরখানি, ফিরনি, দই, বিভিন্ন ধরনের ভাজি-বড়া, বিরিয়ানিসহ নানা ধরনের ইফতারী চোখে পড়ার মতো। ক্রেতা আকর্ষণের জন্য দোকানিরা খোলা রাস্তায় স্তরে স্তরে ইফতারি সাজিয়ে রাখছেন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের হোটেল সুপার স্টারে গিয়ে দেখা গেছে, রেস্টুরেন্টের বাইরে ইফতারসামগ্রী সাজানো হয়েছে। ক্রেতারা লাইনে দাঁড়িয়ে ইফতারসামগ্রী কিনছে।

দোকান কর্মচারিরা জানান, এবার তাদের রেস্টুরেন্টে ৪২ পদের ইফতারি পাওয়া যাচ্ছে। তার মধ্যে খাসির গ্রীল চাপ প্রতি কেজি ৭৬০ টাকা, খাসির লেগ কাবাব প্রতি পিস ৩৮০ টাকা, খাসির রোস্ট প্রতি পিস ৩৭০ টাকা, চিকেন ফুল রোস্ট বড় প্রতি পিস ৩৪০ টাকা, ছোট ২৭০ টাকা, জালি কাবাব ২৫ টাকা, সামী কাবাব ২০ টাকা, চিকেন ফ্রাই ৬০ টাকা, চিকেন কাটলেট ৪০ টাকা, চিকেন টোস্টার ১৫ টাকা, চিকেন উইংস ২০ টাকা, চিকেন সাসলিক ৪০ টাকা, চিকেন রোল ২০ টাকা, চাইনিজ রোল ১৫ টাকা, স্প্রিং রোল ১৫ টাকা, ভেজিটেবিল রোল ১৫ টাকা, চিকেন অনথন ২০ টাকা, নরগীস কাবাব ৪০ টাকা, ডিম চপ ১৫ টাকা, চিকেন কেরাম কাটলেট ৯০ টাকা, জিলাপি কেজি ১৫০ টাকা, আবার প্রতি পিস ১০ টাকা, চানাবুট প্রতি কেজি ১৫০ টাকা, খাসির হালিম ৭০ টাকা, গুমনি প্রতি কেজি ১০০ টাকা, নিমকপারা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, বুন্দিয়া প্রতি কেজি ১২০ টাকা, পিয়াজু, বেগুনি, ফুলরী, নারকেলী, কচুরি, আলুচপ প্রতি পিস ৫ টাকা, নিমকি প্রতি কেজি ১০০ টাকা, সিঙ্গারা, মাটন সমুচা প্রতি পিস ৮ টাকা, চিকেন সমুচা প্রতি পিস ১৫ টাকা, দই বড়া ২০ টাকা, ফালুদা ৬০ টাকা, ফালুদা পার্সেল ৬৫ টাকা, ফিরনি ২০ টাকা, লাচ্ছি প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, প্রতি গ্লাস ৩০ টাকা, লাবাং প্রতি কেজি ১৪০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, কলাবাগান, পান্থপথ, মগবাজার, বাংলামটর, তেজকুনিপাড়া, হাতিরপুল, গ্রিন রোড, বসুন্ধরার পিছনের গলি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ইফতারির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আর্কষণ করতে দোকানের বাইরে সাজানো হয়েছে ইফতারির পসরা। আবার কিছু দোকান ইফতারের মেন্যুসম্বলিত লিফলেট পথচারিদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। এতে এক পাশে সেহরী ও ইফতারের সময়সূচি, অন্যপাশে রেস্টুরেন্টের ইফতার সামগ্রীর তালিকা।

তবে কিছু কিছু রেস্টুরেন্টে ইফতারের সেট মেন্যুও প্রস্তুত করেছে। এ ধরনের সেট ৪০০ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ ধরনের মেন্যুতে ১০ থেকে ১৫ ধরনের আইটেম দেয়া হচ্ছে। এগুলোও ক্রেতাদের কিনতে দেখা গেছে।

এ ছাড়াও আখের গুড়, মুড়ি, লেবু, কলা, চিড়া, আম, খেজু্, নানা রকমের শরবত ও আপেল কিনতে ক্রেতাদের ভিড়ও দেখা গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, দুপুর থেকেই ইফতার সামগ্রী বিক্রি শুরু হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার ভালো বিকিকিনি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন ইফতারী বিক্রেতারা।

বসুন্ধরা মার্কেটের পিছনের গলিতে ইফতারী বিক্রি করেন কামাল মিয়া। তিনি প্রতি রমজানেই সেখানে ইফতারি বিক্রি করে থাকেন। তিনি বিবার্তাকে জানান, গত কয়েক বছর থেকে তিনি ওই গলিতে ইফতারী বিক্রি করে আসছেন। ওই গলিতে ইফতারসামগ্রী ভালোই বিক্রি হয়।

কথা হয় ইফতারি কিনতে আসা তুহিন ও মনির নামের ‍দুই রোজাদারের সাথে। তারা বিবার্তাকে বলেন, রমজানে দোকান থেকে ইফতারী কেনার মজাটাই আলাদা। দোকানগুলোতে অনেক সুস্বাদু ইফতারী বিক্রি হয়।

আরিফ নামের এক যুবক কারওয়ান বাজার এলাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। রমজানে তাদের অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। তাই তিনি ইফতারি কিনতে রেস্টুরেন্ট গিয়েছেন। পছন্দের ইফতারি কিনলেও অন্যবারের থেকে এবার ইফতার আইটেমে দাম বেশি বলে জানান তিনি।

এছাড়া রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি ফুটপাত ও অলিগলিতে ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। ওই দোকানগুলোতে পিয়াজু, বেগুনি, ফুলুরী, নারিকেল, কচুরী, আলুচপ, নিমকী, ডিমচপ, সিঙ্গারা, মাটন সমুচা, চিকেন সমুচা, খেজুর, মুড়ি, শাকের বড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ইফতারি পাওয়া যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষদের ওই দোকানগুলো থেকে ইফতারী ক্রয় করতে দেখা গেছে।

বিবার্তা/খলিল/হুমায়ুন/সোহান