যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারী লর্ড কার্লাইলকে বেগম খালেদা জিয়ার মামলার আইন উপদেষ্টা নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সংগঠন গৌরব ’৭১।
শুক্রবার বিকেলে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী, কবি অসীম সাহা, সাংবাদিক আনিস আহমেদ, সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, কবি আসলাম সানী, স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন, ব্লগার অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের সভাপতি অনিমেষ রহমান বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন গৌরব ’৭১ এর সভাপতি এস এম মনিরুল ইসলাম মনি এবং সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন।
এছাড়া ও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিবার্তা সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসিসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে বরেণ্য চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কোনো দলের বিরুদ্ধে নই, লর্ড কার্লাইল নামে যে আইনজীবী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী তাকে আমরা এ মুক্তিযুদ্ধের দেশে ঢুকতে দেবো না।
বিএনপির উদ্দেশে কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, সুবিচারের কথা বলে আপনারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী লর্ড কার্লাইলকে আপনাদের দলনেতার মুক্তির জন্য আইন উপদেষ্টা নিয়োগ করলেন। আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, পৃথিবীতে আর কোনো ভালো আইনজীবী আপনারা খুঁজে পাননি? এ রকম বিতর্কিত লোককে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিতে আপনাদের লজ্জা করলো না?
কামাল পাশা বলেন, আমরা চোর-পুলিশ খেলতে চাই না। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কাজ করবে তাদের এদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। এ বিশ্বাসে আঘাত হানলে তার সমুচিত জবাব দেয়া হবে।
কবি অসীম সাহা বলেন, লর্ড কার্লাইলকে জলে, স্থলে কিংবা আকাশ কোনো পথেই এদেশে আসতে দেয়া হবে না। আমরা বাঙালিরা অতিথিপরায়ণ হলেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাতকারীদের সহ্য করতে পারি না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব আন্দোলনে কবিরা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল। কবিদের কলম যখন আগুন হয়ে ওঠে তখন তা অস্ত্রের চেয়ে শক্তিশালী রূপ ধারণ করে।
সাংবাদিক আনিস আহমেদ বলেন, আমরা আজ অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন দিয়ে এ মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো ইস্যুতে কেন যুদ্ধাপরাধী বিচারের বিরোধিতাকারী আইনজীবীকে নিয়োগ দেয়া হবে? এটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক বড় লজ্জার, অপমানের।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে আনিস আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়ার রায়ের কয়েকদিন আগে আপনারা আপনাদের এক কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধীর দণ্ডপ্রাপ্ত সাকা চৌধুরীর জন্য শোক পালন করলেন। এটা করতে আপনাদের লজ্জা করলো না? নিজেরা মুক্তিযোদ্ধার দল হিসেবে দাবি করেন আবার যুদ্ধাপরাধীদের সাফাই গান, ব্যাপারটা কী!
সাংবাদিক আনিস বলেন, আমাদের দেহে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত লর্ড কার্লাইলকে এদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না।
সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, লর্ড কার্লাইলের ওকালত ফি ১ কোটি টাকা। বিএনপি এতো টাকা দিয়ে একজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীকে নিয়োগ করলো। কিন্তু কেন? আর কি কোনো ভালো আইনজীবী এ পৃথিবীতে ছিল না। আইনজীবী নিয়োগ করা তাদের মৌলিক অধিকার। তাই বলে এমন বিতর্কিত মানুষকে তারা নিয়োগ করবে?
বিএনপিকে উদ্দেশ করে গোলাম কুদ্দুস বলেন, আপনারা খালেদা জিয়ার মুক্তি নাকি এদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিতর্কিত আইনজীবী লর্ড কার্লাইলকে রাখলেন?
গৌরব ’৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন বলেন, জামায়াতের চেতনাধারণকারী লর্ড কার্লাইলকে এ মুক্তিযুদ্ধের দেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। ২০১৩ সালে যখন আমরা কাদের মোল্লার বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টি করলাম, তখন এ আইনজীবী কাদের মোল্লার পক্ষে সাফাই গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিতর্কিত করেছেন। আমাদের আন্দোলনে কবি, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্রসমাজসহ আপামর জনসাধারণের ঢল নেমেছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। কিন্তু এ আইনজীবী আমাদের গণজাগরণ মঞ্চকে বিতর্কিত করলেন, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিবৃতি দিতে লাগলেন।
এফ এম শাহীন বলেন, গৌরব’৭১ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোনো কাজ করলে এ সংগঠন বরদাস্ত করবে না। সাথে সাথে সমুচিত জবাব দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, লর্ড কার্লাইল ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছিলেন। এছাড়াও এদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ করতে সরব ছিলেন এই ব্রিটিশ আইনজীবী।
বিবার্তা/রাসেল/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]