শিরোনাম
ঘুষের ঘটনা এখানেই যেন শেষ না হয়
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৫:৪৫
ঘুষের ঘটনা এখানেই যেন শেষ না হয়
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশের যোগাযোগ সচিবকে ঘুষ দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না হারবারকে কালো তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। টিআইবি মনে করে, এর সঙ্গে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা দেখা প্রয়োজন।


অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাংবাদিকদের জানান, ‘‘কম্পানিটি (চায়না হারাবার ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি) যোগাযোগ সচিবকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছিল। সচিব বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। এজন্য কোম্পানিটিকে ব্ল্যাক লিস্টেড করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশে আরকোনো কাজ করতে পারবে না।''


ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি সার্ভিস লেনসহ ২২৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করতে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর এই কম্পানির সাথে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি হয়। তারা নতুন আরো কাজ পেতে যোগাযোগ সচিবকে ঘুষ দিতে চেয়েছিল কিনা - এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘না, তারা তো কাজে আছেই। আমার মনে হয়, খুশি রাখার জন্য চেয়েছিল, কাজে চুরি করার উদ্দেশ্য ছিল।’’


এ ঘটনার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজটি সরকার নিজস্ব অর্থেই বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করছে। চীন সরকারের অর্থায়নে এ কাজ হওয়ার কথা ছিল। ২২৬ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে কত টাকা লাগবে, তা নিয়ে দর-কষাকষি চলছিল। তবে প্রকল্প সইয়ের সময় বলা হয়েছিল, ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি প্রকল্পটি ২০১৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন করে দেবে।


১৫ অক্টোবর নজরুল ইসলাম সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে সচিব হিসেবে যোগ দেন। এরপর নভেম্বর মাসে তাঁর কাছে উপঢৌকনের একটি প্যাকেট পাঠায় চায়না হারবার। ওই প্যাকেটেই ছিল ৫০ লাখ টাকা। সচিব বিষয়টি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। এ ঘটনার পর মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি লিখে বিস্তারিত বর্ণনাসহ সেই অর্থ ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসে পাঠিয়ে দেয়া হয়।


চায়না হারবার বাংলাদেশে আরো চারটি অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে নিযুক্ত রয়েছে। সেসব কাজ থেকেও তাদের বাদ দেয়া হবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। অর্থমন্ত্রী এর আগে জানিয়েছিলেন, চায়না হারবার বাংলাদেশে আর কেনো কাজ করতে পারবে না। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঢাকায় উন্নয়ন ফোরামের সমাপনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জবাব এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘‘এ নিয়ে এখন কথা নয়, পরে কথা বলব।’’


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘চায়না হারাবারকে কালো তালিকাভুক্ত করা একটি খুবই ভালো উদাহরণ। এতে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একটি অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু এটাই যেন শেষ না হয়।


তিনি বলেন, ‘‘চায়না হারবারের বিষয়টি তদন্ত করা উচিত। এই প্রক্রিয়ায় কারা কারা জড়িত তা জানা দরকার। তাহলে অনেক কিছু স্পষ্ট হবে। আর চীন এখন বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বড় অংশীদার। তাই চীনের একটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিভুক্ত করে বাংলাদেশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাহসের পরিচয় দিয়েছে।’’


তিনি বলেন, ‘‘ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সেবাখাতসহ আরো কিছু খাতে দুর্নীতি কমিয়ে আনা সম্ভব। বাংলাদেশে তার উদাহরণও সৃষ্টি হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে। কিন্তু চায়না হারবারের মতো ঘটনায় দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে সরকার ও প্রশাসনকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। কারণ, এই ধরনের ঘটনায় দুর্নীতি হয় নীতিনির্ধারকদের মাধ্যমে।’’


চায়না হারবার বিশ্বের শীর্ষ নির্মাণ কম্পানিগুলোর একটি। প্রায় ৮০টি দেশে তারা কাজ করছে। বাংলাদেশ চীন সরকারকে জানিয়েছে ঘুষ দেয়ার এই তৎপরতার কথা। জানা গেছে, বাংলাদেশ এখন অপেক্ষায় আছে তারা কী ব্যবস্থা নেয় তা দেখার জন্য। তার আগে আর কোনো পদক্ষেপ নেবে না বাংলাদেশ। সূত্র : ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com