শিরোনাম
কৃষির ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যতের কৃষি
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৭:২৫
কৃষির ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যতের কৃষি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দু'টো কারণে ভারতের আকোলা জেলার নাম সুপরিচিত - একটি তুলা চাষ, অন্যটি কৃষকের আত্মহত্যা। ঋণের বোঝা, দারিদ্রের দুষ্টচক্র, খরা ও স্বল্প ফলন - এসবই এ এলাকার কৃষকদের প্রায়ই ঠেলে দেয় আত্মহত্যার দিকে।


২৯ বছর বয়সি নাসারি চাভান এ এলাকার একজন আদিবাসী কৃষক। নাসারি যখন চাষের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন, এ এলাকার অন্যদের মতো তাঁদের পরিবারও ধুঁকছিল ঋণের চাপে।


এসএআরজি বিকাশ সমিতি নামের একটি বেসরকারি সংস্থা, যারা ভারতে বায়োডায়নামিক চাষাবাদ প্রবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে, তাদের একটি ওয়ার্কশপে সাত বছর আগে প্রশিক্ষণ নেন নাসারি। এরপরই কীটনাশক ও ক্ষতিকর সার ব্যবহার বন্ধ করে দেন তিনি। এর ফলও পান হাতে হাতে। বছরের পর বছর ধরে কীটনাশক ও ক্ষতিকারক সারের অপরিকল্পিত ব্যবহার জমির যে ক্ষতি করেছিল, জৈব সার ব্যবহারের ফলে তা পুষিয়ে নিয়ে আবারো উর্বর হয়ে উঠতে শুরু করে জমি। আর এতেই পরিবারকে ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত করে লাভের মুখ দেখেন নাসারি। এখন ওই এলাকায় তিনি আর একা নন, আরো প্রায় ৫০০ জন চাষী এখন জমিতে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।


২৯ বছর বয়সি এই চাষী সেই অভিজ্ঞতার কথায় শোনালেন অরগ্যানিক ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে। এ বছরের নভেম্বরে নতুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয় অরগ্যানিক ফার্মিংয়ের উপর আন্তর্জাতিক এ সম্মেলন। সম্মেলনে আসা বায়োডায়নামিক ও অরগ্যানিক কৃষক ও গবেষকদের উদ্দেশে নাসাতি বলেন, ‘‘বায়োডায়নামিক চাষাবাদ আমাদের খরচ বাঁচায়। কারণ, এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য বাইরে থেকে আমাদের কিছুই কিনতে হয় না। সেই সঙ্গে এতে করে স্বাস্থ্যকর খাবারও খেতে পারি আমরা।''


বায়োডায়নামিক চাষপদ্ধতি আলাদা করে সার দেয়ার ওপর নির্ভর না করে জমির নিজস্ব বাস্তুসংস্থানের ওপরই নির্ভর করে। ফলে বাড়তি কিছু কেনার প্রয়োজন হয় না। ঋণের দায়ে জর্জরিত কৃষকদের জন্য এটা এক অনন্য সমাধান।


নিউজিল্যান্ডের বায়োডায়নামিক পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষাবাদ করতেন পিটার প্রোক্টর। তাঁর হাত ধরে বিনিতা শাহ ১৯৯০ সালে ভারতে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানের অধীনে সারা ভারতে ৫ হাজারেরও বেশি কৃষক এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন।


কৃষিবিদ সার্ভদামান পাটেল বলেন, ‘‘ভারতে চাঁদ-তারার ওপর ভিত্তি করে আগেকার দিনে যে চাষাবাদ হতো, বায়োডায়নামিক চাষাবাদ তার চেয়ে খুব বেশি আলাদা কিছু নয়। কেবল একে আরেকটু যথাযথ ও সময়ের সঙ্গে উপযুক্ত করা হয়েছে।''


প্রাচীন ভারতের চাষাবাদপদ্ধতির সাথে এর বেশ মিল রয়েছে। যেমন, এ পদ্ধতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে গরু। গরুর বর্জ্য ব্যবহার করেই ভারতে বায়োডায়নামিক চাষপদ্ধতি দেখেছে সফলতার মুখ। তবে কিছু নতুন জিনিসও রয়েছে। যেমন শীতের সময় গরুর বর্জ্য ব্যবহার করে যে সার হয়, সেটাই গরুর শিংয়ের সাহায্যে মাটিতে পুঁতে দিলে জমি পুনরুজ্জীবন লাভ করে।


যদিও কেবল এ পদ্ধতি ব্যবহার করেই কৃষি সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, তবুও এর মাধ্যমে ক্ষতিকর কীটনাশকের অতিব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব। সূত্র : ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com