শিরোনাম
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় আহ্‌ছানিয়া মিশন শিশুনগরী
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০১৭, ২০:৪৫
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় আহ্‌ছানিয়া মিশন শিশুনগরী
এম. জাহাংগীর হোসেন
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের বড় শহরগুলোর বস্তি, পার্ক, ফুটপাত, বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন এবং লঞ্চ ঘাটসমূহে অসংখ্য ছিন্নমূল মানুষের বসবাস। এদের একটি বড় অংশ শিশু। এরা ফুটপাথে বেড়ে ওঠে। এসব পথশিশু আমাদের দেশের একটি বড় সামাজিক সমস্যা। বর্তমানে এদের সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ।


ঢাকা আহ্‌ছানিয়া মিশন এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। তাদের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক বিকাশ, শিক্ষার ব্যবস্থা, ভরণ-পোষণ এবং স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার মানসে গড়ে উঠেছে “শিশুনগরী”। পথশিশুদের সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের জন্য খান বাহাদুর আহ্‌ছানউল্ল্যা (র.)-এর আদর্শে ঢাকা আহ্‌ছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলমের চিন্তা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আহ্‌ছানিয়া মিশন শিশুনগরী’।


শিশুনগরীর বাস্তবায়নের কাজ প্রথম শুরু হয় পঞ্চগড় সদর উপজেলায় জলাপাড়া গ্রামে। বর্তমানে এখানে রয়েছে ২৫৯ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু। কেএনএইচ জার্মানি ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আর্থিক সহায়তা দিয়ে এই শিশুনগরী প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছে।


শিশু নগরীতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা; তাদের সামর্থ্য ও মেধা বিকাশের জন্য শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ; সুষম খাদ্য, নিরাপদ আবাসন, পোশাক, স্বাস্থ্যসেবা, মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তোলা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করাসহ শিশুদের মনোভাব ও আচরণ পরিবর্তন, নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি, জীবনধারার ইতিবাচক পরিবর্তন এবং দায়িত্ববান ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। আর প্রতিটি শিশুর সামর্থ্য বিবেচনায় এমনভাবে গড়ে তোলা হবে যাতে প্রতিটি শিশু পেশাগতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে জাতীয় পর্যায়ে নিজ অবস্থানে অবদান রাখতে সক্ষম হয়। সর্বোপরি প্রতিটি শিশুকে উপযুক্ত করে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে।


আহ্‌ছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে ৬-৮ বছর বয়সি শিশুদের ভর্তি করা হয় এবং ১৮ বছর পর্যন্ত তারা নিরাপদ আবাসন; আধুনিক সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা; সকল ধর্মের ধর্মীয় চর্চা; ইনডোর ও আউটডোর গেইম; গান, নাচ, অভিনয়, আবৃত্তি শেখা; ছবি আঁকা ও হাতের কাজ; ক্রীড়া ও সৃজনশীল কাজের উচ্চতর প্রশিক্ষণ; বই পড়া; উচ্চতর শিক্ষা; শিক্ষামূলক বিনোদন; বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ; নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা; মনোসামাজিক সহায়তা; আইনগত সহায়তা; কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে।


শিশুদের সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য রয়েছে আবাসিক কর্মী, শিক্ষক, ক্রীড়া ও মিউজিক্যাল শিক্ষক এবং মনোসামাজিক সহায়তার জন্য ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচর্যার জন্য প্যারামেডিক ও প্রশিক্ষিত মেডিক্যাল অফিসার। এদের হাতে-কলমে নিয়মিত কৃষিকাজ, হাঁস-মুরগি ও গরু ছাগল পালন করার বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা অতিক্রম করলে প্রতিটি শিশুকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক একাধিক ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে যাতে প্রতিটি শিশু বাস্তব জীবনে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।


প্রতিবছর শিশুনগরীতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন, শিক্ষামেলা, বার্ষিক বনভোজন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতায় শিশুরা অংকন, হাতের কাজ, আবৃত্তি, নাচ, গান, অভিনয়, বিতর্ক, বক্তব্য, গল্পবলা, সৃজনশীল লেখা ও ইনডোর গেইম-এর বিভিন্ন ইভেন্টে তাদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা প্রদর্শন করে থাকে।


ট্যালেন্ট হান্ট হলো শিশুনগরীর শিশুদের মধ্য থেকে বিশেষ বিশেষ বিষয়ে প্রতিভাবান শিশু খুঁজে বের করা। প্রত্যেক শিশুর মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় প্রতিভা থাকে। উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি ও বিভিন্ন প্রকার সহায়তার মাধ্যমে উক্ত সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে তাদের পিয়ার এডুকেটর ও জীবনদক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় নিয়মিতভাবে। প্রতিমাসের ২৯ তারিখে শিশুরা পালন করে থাকে শিশু দিবস। ঐদিন শিশুগ্রামের সকল দায়িত্ব তারা বুঝে নেয় এবং সে মতো দায়িত্ব পালন করে। শিশুদের মতপ্রকাশ নিশ্চিত করতে শিশু নগরীর প্রতিটি কমিটিতে রয়েছে শিশু প্রতিনিধি। গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য প্রতিবছর শিশুরা ৭টি পৃথক বিভাগের জন্য সরাসরি ভোট দিয়ে শিশু কাউন্সেলর নির্বাচন করে। শিশু নগরীতে এই শিশু বিভাগগুলো হলো, পরিবেশ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক, বৃক্ষরোপন ও বাগান তৈরি, পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য, পুস্তক ও শিখন সামগ্রী, অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন কাউন্সিলর।


প্রতিটি শিশুনগরীতে প্রতিবছর একশত করে দশ বছরে ১০০০ শিশু নিয়ে পর্যায়ক্রমে মোট ১০টি শিশু নগরী মোট ১০ হাজার শিশু সমন্বিত সেবার আওতায় আসবে। পরবর্তীতে এই শিশু নগরীর অনুরূপ মডেল সরকারি বেসরকারি ও ব্যক্তিগত অনুদানে সারাদেশের প্রতিটি জেলায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য শিশুনগরী প্রতিষ্ঠা করা হবে, যাতে কোনো শিশুকে আর রাস্তায় মানবেতর জীবন যাপন করতে দেখা না যায়। আহ্‌ছানিয়া মিশন শিশুনগরী সবাইকে সাথে নিয়ে সে লক্ষ্যেই নিরন্তর কাজ করে যাবে।


লেখক : প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ঢাকা আহ্‌ছানিয়া মিশন


বিবার্তা/হুমায়ুন/পলাশ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com