শিরোনাম
ড্রাগনের দেশে মশার খামার
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০১৭, ০০:৩২
ড্রাগনের দেশে মশার খামার
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ড্রাগনের দেশে মশার চাষ করছে৷ ধোঁয়া, তেল, কয়েলে নিধনের রাস্তায় না গিয়ে মশাকে নির্বংশ করার কৌশল নিয়ে গবেষণা চলছে চীনে।ল্যাবরেটরিতে মশা তৈরি হচ্ছে। মশা কমলে কমবে জিকা, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব, সেই লক্ষ্যেই চলছে গবেষণা।


গুয়াংঝৌয়ে সান ইয়াত্সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ক্যাম্পাসে প্রতি সন্তাহে তৈরি হচ্ছে ৫০ লক্ষ এডিস মশা।



প্রকল্প প্রধান পতঙ্গবিদ জাই ঝিয়ং বলেন, ভালো মশা তৈরি করছি৷ লক্ষ্য খারাপ মশার সঙ্গে লড়াই করা। সেই লক্ষ্যে সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের ল্যাবরেটরিতে হচ্ছে মশার চাষ।


বিশ্ব জিকা ভাইরাস আতঙ্কে রয়েছে। ৬০টি দেশে এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। সন্তানসম্ভবা নারীদের জিকা থেকে সবচেয়ে বেশি বিপদ৷ ডেঙ্গিতে প্রতি বছর আক্রান্ত হয় ৩৯ কোটি মানুষ। ডেঙ্গি প্রতিরোধের জন্য প্রতিষেধক তৈরি হয়েছে, জিকার জন্য গবেষণা চলছে৷ প্রতিষেধক তৈরির পথে না গিয়ে তাই ভালো মশা তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় সান ইয়াত্ -সেন বিশ্ববিদ্যালয়।


ওলবাচিয়া নামের ব্যাকটেরিয়া মশার ডিমে প্রবেশ করিয়ে ভালো মশার জন্ম দেয়া হয়৷ এই ডিম থেকে জন্মানো পুরুষ মশার প্রজননক্ষমতা থাকে না৷ বড় হওয়ার পর এই পুরুষ মশা ঝাঁকে ঝাঁকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ এই পুরুষ মশার সঙ্গে স্ত্রী মশা মিলিত হলেও ডিম তৈরি হয় না৷ ডিম তৈরি হলেও তা থেকে লার্ভা জন্ম নেয় না।


প্রক্রিয়াটি হচ্ছে, ডিমের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ভরে দেয়ার পর সেগুলোকে পানি ভর্তি ট্রে-তে রাখা হয়। সেগুলো থেকে লার্ভা তৈরি হয়। লার্ভা যখন মশার আকার নেয় তখন বিশেষ পদ্ধতিতে পুরুষ ও স্ত্রী -কে আলাদা করা হয়। মোটা স্ত্রী মশাকে বিশেষ পদ্ধতিতে ধরা হয়, ছিপছিপে পুরুষ মশা পড়ে থাকে। প্রতি দিন চার ঘণ্টা লাগে এই প্রক্রিয়ার জন্য। পুরুষ মশা প্লাস্টিকের পাত্রে ভরে দেয়া হয়। মেরে ফেলা হয় স্ত্রী মশা৷ পুরুষ মশা বড় হলে ছেড়ে দেয়া হয়। শুধু স্ত্রী মশাই প্রাণীর দেহ থেকে রক্ত টেনে নেয়। ওই রক্ত ডিমের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন -পুষ্টি সরবরাহ করে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষণাগারটির ভিতরে অদ্ভুত নীরবতা চারপাশে। এখানে কাজ করেন চেন চুনপিং। তাঁর আপাদমস্তক পোশাকে মোড়া, আঁটোসাঁটো মুখোশের ফাঁক দিয়ে শুধু তার চোখটুকু দেখা যায়।


কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে চেনের প্রতিক্রিয়া, প্রথম যে দিন এখানে এলাম , সে দিন মনে হল, স্বপ্ন দেখছি না এমন জায়গা বাস্তবেই আছে! সায়েন্স ফিকশনে এ ধরনের জায়গার কথা পড়েছি৷ মশাকে আদর -যত্ন করে বড় করছে একদল মানুষ। আস্তে আস্তে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। ভালো মশা খারাপ মশার জন্ম কতটা রোধ করতে পারে তা পরীক্ষা করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে শাজাই আইল্যান্ডকে। মশা তৈরির কারখানা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম। হাজার দুয়েক মানুষের বাস। প্রতি সপ্তাহে সেখানে তিন বার যান গবেষকরা। পরীক্ষণাগারে তৈরি পুরুষ এডিস মশা ঝাঁকে ঝাঁকে ছেড়ে আসেন৷।



জাইয়ের দাবি, এর ফলে শাজাইয়ে মশার সংখ্যা অনেক কমেছে। সেখানকার স্ত্রী মশাদের সঙ্গে প্রজনন -অক্ষম মশাদের মিলনেও ডিম তৈরি হচ্ছে না।


গবেষকদের দাবি, এই গ্রামে মশার প্রজনন ৯৬ শতাংশ কমিয়ে ফেলা গেছে। তবে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন এই পদ্ধতি নিয়ে।


আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা(ডব্লিউএইচও) -র সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ রামন ভেলায়ুধানের মতে, একটা ছোট জায়গায় এই পদ্ধতি সফল হতে পারে। কিন্তু বড় জায়গায় কতটা সফল হবে, তা পরীক্ষিত নয়। জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ মশার সংখ্যার উপর সবসময় নির্ভর করে না। সংখ্যায় কম হলেও মশার মাধ্যমে জিকা ছড়াতে পারে।


ছোট ক্ষেত্রে পরীক্ষা হলেও জাই ঝিয়ংয়ের গবেষণা সম্পর্কে কৌতূহল অন্য দেশেও।


মেক্সিকোর বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে ঘুরে দেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মশা খামার।


জাই এবার তার নিরীক্ষার ক্ষেত্র বিস্তৃত করতে চান। বড় শহরে পরীক্ষা করে দেখতে চান তার ভালো মশার প্রভাব কতটা। বড় এলাকায় মশা ছাড়ার জন্য হেলিকপ্টার বা ড্রোন ব্যবহার করা হবে। শাইজার ধাঁচে সেখানেও নিয়মিত গিয়ে মশা ছেড়ে আসবেন প্রতিষ্ঠানের কর্মী -গবেষকরা।


বিবার্তা/আকবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com