আলোচিত বিলাসবহুল জাহাজ টাইটানিক ধ্বংস হয়েছিল হিমশৈলের ধাক্কায়। এমনি তত্ত্ব এতদিন জেনে এসেছে মানুষ। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা দাবি করা হয়েছে, এই হিমশৈলের ধাক্কায় জাহাজটির ধ্বংসের আসল কারণ নয়।
গবেষকদের দাবি, আগুন লাগার কারণে টাইটানিক ডুবেছিল।
১৫ এপ্রিল ১৯১২। ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্ক যাওয়ার পথে আটলান্টিক মহসাগরে ডুবে যায় টাইটানিক। মারা যায় দেড়হাজারেরও বেশি যাত্রী। পূর্বের গবেষণায় টাইটানিকে আগুন লাগার তত্ত্ব স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল, তবে আগুনকে প্রাথমিক বা প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়নি।
সম্প্রতি আইরিশ সাংবাদিক, লেখক ও টাইটানিক গবেষক সেনান মলোনি জানিয়েছেন, হিমশৈলের ধাক্কায় নয়, টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পেছনে রয়েছে অগ্নিকাণ্ড।
তিনি ৩০ বছর ধরে টাইটানিক নিয়ে গবেষণা করেছেন।
সম্প্রতি সেই গবেষণালব্ধ ফল থেকে তিনি টাইটানিক : দা নিউ এভিডেন্স (Titanic: The New Evidence) নামে একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছেন।
তথ্যচিত্রে তিনি জানান, উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট ছাড়ার পর আগুন ধরেছিল টাইটনিকের একটি বয়লারে। সেই ছবিও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, হিমশৈলটি যেখানে ধাক্কা মেরেছিল, সেই জায়গাটি তিনি দেখেছেন। আগুন লাগার জেরে সেই জায়গাটি আগে থেকেই দুর্বল ছিল। ফলে হিমশৈলের ধাক্কায় সহজেই তা ভেঙে পড়ে।
টাইটানিকের ডুবে যাওয়া নিয়ে গবেষণায় বিস্তারিত ব্যাখা করেছেন সেনান মলোনি।
গবেষকের ভাষ্যমতে, অ্যাক্ট অফ গড বা প্রাকৃতিক কারণকে এতদিন পর্যন্ত জাহাজ ডুবে যাওয়ার প্রকৃত কারণ বলা হয়েছে। কিন্তু এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে আগুন, বরফ ও অবহেলা। বেলফাস্ট থেকে সাউদাম্পটন বন্দরে জাহাজ পৌঁছনোর পরেও যে বয়লারে আগুন লেগেছিল তা নেভানো হয়নি। কারণ তাতে অনেক সময় লেগে যেত। কর্তৃপক্ষ চায়নি সময় ব্যয় হোক। জাহাজের ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথও জানতেন আগুন লাগার বিষয়ে। কিন্তু, ম্যানেজিং ডিরেক্টর জে ব্রুশ ইশমের নির্দেশে তিনি মুখ খোলেননি। ফলে আগুন লাগা অবস্থাতেই জাহাজটি নিউইয়র্কের উদ্দেশে যেতে শুরু করে। আবার দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে বাড়ানো হয়েছিল জাহাজের গতি। ৫ থেকে ৬ দিন ধরে জ্বলছিল বয়লারটি।
এদিকে গতি বাড়ানোর ফলে সেই আগুন বয়লারে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বয়লারের গা ঘেঁষে থাকা জাহাজের দেওয়াল আনুমানিক ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পায়। ফলে তা নরম হয়ে যায়, গলতে শুরু করে। সেকারণে হিমশৈলের ধাক্কা লেগে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তার আরো ব্যাখ্যা, এই গবেষণা আগে হলেও আগুন লাগার বিষয়টি নিয়ে কেউ বিস্তারিত অনুসন্ধান করেনি। কিন্তু, এই গবেষণা এতদিনের ধারণাকে বদলে দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেছেন, স্টিলের পাতে দিনের পর দিন তাপ লাগলে সে তার স্বাভাবিক শক্তি হারিয়ে দুর্বল হতে বাধ্য। আর টাইটানিকের সঙ্গেও এটাই হয়েছে।
বিবার্তা/আকবর
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]