শিরোনাম
ইমরান খানের দোস্ত-দুশমন
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০১৮, ২০:৪৫
ইমরান খানের দোস্ত-দুশমন
হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী
প্রিন্ট অ-অ+

পাকিস্তানের মসনদ বেজায় কঠিন জায়গা। ওখানে কেউ টিকতে পারে না। দেশটির ৭০ বছরের ইতিহাসে ১৭ জন প্রধানমন্ত্রী ওই পদে নিজেদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। সর্বশেষ ওই বিপদসঙ্কুল পথে পায়ে-পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন নামজাদা ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খান।


গত মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইমরান খান এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে। তবে যেহেতু তাঁর দল পিটিআই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, তাই তাকে জোট বাঁধতে হচ্ছে।


রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের জন্য জোট বাঁধা নতুন কোনো ব্যাপার নয়। তবে এখানে ইমরান খানের ক্ষেত্রে ''ভাগ্যের নির্মম পরিহাস''টি এতোই লক্ষ্যণীয় যে, পাঠক না-হেসে পারবেন না।


কারণটি হলো, কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ইমরান খানকে এমনসব দলের কাছে যেতে হয়েছে ও হচ্ছে, যেসব দলকে তিনি এতদিন কষে গালাগাল করে এসেছেন। বলা চলে, এসব দল ছিল ইমরান খানের জানি দুশমন।


উদাহরণ হিসেবে এমকিউএম দলের কথাই ধরা যায়। ভারত থেকে ১৯৪৭ সালে বিতাড়িত হয়ে আসা বিহারীদের এ দলটি আঞ্চলিক একটি দল। এর সবকিছুই করাচিকেন্দ্রিক। দলটি কেন্দ্রের ক্ষমতার ভাগ পেতে ইমরান খানের জোটে ভিড়েছে। আর এ নিয়ে মতবিরোধ ইতিমধ্যেই স্পষ্ট দেখা গেছে ইমরান খানের দলে। দলের করাচি শাখার প্রধান ফেরদৌস শামীম নাক্বভীর কথায় তা স্পষ্ট। তিনি কোনো রাখঢাক না-করেই বলেন, এমকিউএমের সাথে আমরা জোট করতে চাইনি। কিন্তু কেন্দ্রে সরকার গড়তে হলে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগে। এ জন্যই বাধ্য হয়ে ওদের সাথে জোট গড়া। তবে জোটে নিয়েছি বলে ওই দলটি সম্বন্ধে আমাদের মনোভাব একটুও বদলায়নি। এ দলটিই তো করাচি নগরীকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। তাদের দলীয় করাচির মেয়রের ব্যর্থতার কারণে জাতীয় নির্বাচনেও তারা ভালো করেনি।


নাক্বভীর এ কথায় এমকিউএম দলে ধুন্ধুমার লেগে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বয়ং ইমরান খানকে নিজ দলের নেতা নাক্বভীর বক্তব্যের নিন্দা করতে হয়। তাতেও এমকিউএম দলের অনেক নেতার ফোঁসফোঁসানি কমেনি। কমবেই বা কি করে, ইমরান খান নিজেই তো মাত্র ক'বছর আগেও তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের হুমকি দান, এমনকি হত্যার অভিযোগ এনেছিলেন এমকিউএম নেতাদের বিরুদ্ধে। এমকিউএম নেতারা তা কি ভুলে গেছেন? এ দলকে নিয়ে জোট গড়ে ক্ষমতায় গিয়ে কেমন সুখে থাকবেন ইমরান খান, তা সহজেই অনুমেয়।


এবার আসা যাক পিএমএল (কিউ) দলের কথায়। এ দলটির সাথেও পিটিআই'র ঝামেলা অনেক পুরনো। ইমরান খানই একসময় এ দলের নেতা-কর্মীদের ''খুনী'' এবং দলটিকে ''পাঞ্জাবের সবচাইতে বড় ডাকাতদল"' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। সেই দলটিকেও এখন জোটে নিতে হয়েছে ইমরান খানকে।


রজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করার অভ্যাস ইমরান খানের একেবারেই গোড়া থেকে। ধীরে ধীরে তার দলের অন্যদের মধ্যেও সেটা সংক্রমিত হয়েছে এবং দলীয়প্রধানের উৎসাহ পেয়েছে। আজ তারই ফল পেতে যাচ্ছেন তিনি। একদিন যাদের অকারণে অপমান করেছিলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আজ তাদেরই হাতে-পায়ে ধরতে হচ্ছে। কিছুদিন আগের এ দুশমনের দল ক্ষমতার ভাগ পেতে ইমরান খানের সাথে জোট গড়বে, কিন্তু মনে-প্রাণে তার দোস্ত হবে কী?


এরপর আছে সেনাবাহিনী। ইমরান খানের দলকে জয়ী করে আনতে এরা ব্যাপক কলকাঠি নেড়েছে বলে দেশে-বিদেশে ধারণা রয়েছে। আরো ধারণা রয়েছে, এরাই নিকটভবিষ্যতে ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রতি সবচাইতে বড় হুমকি হয়ে দেখা দেবে।


অনেকেই মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী হয়েই ইমরান খান প্রশাসনে আপন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবেন আর তখনই মিলিটারি এস্টাবলিশমেন্টের সাথে লাগবে তার সংঘাত। আর মিলিটারি এস্টাবলিশমেন্টের সাথে সংঘাত লাগলে পাকিস্তান নামের দেশটিতে প্রধানমন্ত্রীদের যে পরিণতি হয়, এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম কিছু হবে না। সেনাবাহিনীর পক্ষে সেটা এমন কঠিনও কিছু হবে না। তাদের ইশারায় এমকিউএম অথবা পিএমএল-কিউ - যে কোনো একটি দল কোয়ালিশন ছাড়লেই সরকারের পতন ঘটবে। অথবা এমনও হতে পারে যে, অসততা ও দুর্নীতির সত্য বা মিথ্যা অভিযোগ এনে ইমরান খানকেই প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করানো হলো। দূর ও নিকট অতীত সাক্ষী, পাকিস্তানে এর সবই সম্ভব।


মিলিটারি এস্টাবলিশমেন্টের কথা মেনে চললেও যে ইমরান খানের গদি নিরাপদ - এমন ভাবারও অবকাশ নেই। তারা যে-কোনো মুহূর্তে তাঁকে কোনো কারণ ছাড়াই গদিছাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসতে পারে। পাকিস্তানে এটাও সম্ভব। সম্ভব বলেই সেদেশের ১৭ জন প্রধানমন্ত্রী তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। এমনকি জাফরউল্লাহ খান জামালী ও মুহাম্মদ খান জুনেজো'র মতো নম্রস্বভাব প্রধানমন্ত্রীকেও তাদের শিকারে পরিণত হতে হয়েছে।


কাজেই পাকিস্তানে পিটিআই-মিলিটারি মধুচন্দ্রিমা কতদিন স্থায়ী হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com