শিরোনাম
চাইলেই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা যায়
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০১৮, ১৭:২৬
চাইলেই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা যায়
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
প্রিন্ট অ-অ+

আজকাল সব পত্রপত্রিকারই একটা নেট সংস্করণ থাকে, সেই সংস্করণে সব লেখার ওপর পাঠকদের মন্তব্য লেখার সুযোগ থাকে। আমি অবশ্য জীবনে কখনোই আমার লেখালেখি নিয়ে করা মন্তব্যগুলো পড়ে দেখিনি। আমার ধারণা, আমি তাহলে নিজের অজান্তেই এমনভাবে লেখালেখি শুরু করব যেন পাঠকদের কাছ থেকে ভালো ভালো মন্তব্য পেতে পারি!
গত সপ্তাহে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ‘জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার’ নামে আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছে। আমার পরিচিত একজন বলেছেন, এই লেখাটির পর অনেক পাঠক অনেক ধরনের প্রশ্ন ও মন্তব্য করেছেন, আমার সেই প্রশ্ন ও মন্তব্যের উত্তর দেয়া উচিত। তিনি সেই প্রশ্ন ও মন্তব্যগুলো আমাকে লিখে দিয়েছেন, আমি যেন যেগুলো পারি সেগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি।


প্রশ্ন : সব পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়। পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস কিভাবে ঠেকানো হবে?


উত্তর : প্রশ্ন ফাঁস হতে দেয়া হয় বলে প্রশ্ন ফাঁস হয়—সেই সুযোগ তৈরি করে দিতে হয় না। আমি আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক প্রশ্ন ছাপিয়ে বিতরণ করেছি, কখনো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও আমরা কোনো সমস্যা ছাড়া প্রক্রিয়া করেছি। মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ হওয়ার পর তারা আমাদের কয়েকজনকে পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব দিয়েছিল। তারা অসাধারণ নৈপুণ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে ও বিতরণ করেছে এবং প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। কারণ সেখানে ফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।


উদাহরণ দেয়ার জন্য বলা যায়, প্রশ্ন ছাপানোর জন্য যাদের প্রেসে ঢোকানো হয় তারা পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ছাপাখানা থেকে বের হয়। এর আগে সেখানেই খাওয়া ও ঘুম। শুধু তা-ই নয়, জ্যামার দিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক পর্যন্ত বন্ধ করে রাখা হয়; প্রশ্নটা ফাঁস হবে কিভাবে? এ ছাড়া যে ট্রাংকে করে প্রশ্ন বিভিন্ন সেন্টারে পাঠানো হয় সেগুলো কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটর করা হয় এবং সেই ট্রাংক খোলা হলেই তার সিগন্যাল কন্ট্রোল রুমে চলে আসে।


এককথায় বলা যায়, চাইলেই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা যায়। যদি দেখা যায় যে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, ধরে নিতে হবে তারা প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিশ্রমটুকু করতে রাজি নয়।


প্রশ্ন : হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরীক্ষা দিতে না-পারলে ছাত্র বা ছাত্রীটির জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন কী হবে?


উত্তর : ব্যাপারটি তো এখনো ঘটছে, এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার বেলায়ও তো হঠাৎ অসুস্থ হওয়া বা কোনো একটি দুর্ঘটনায় পড়ে পরীক্ষা দিতে না পারার ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা তো সেটা মেনে নিয়েছি। ধরে নিয়েছি, ছাত্র বা ছাত্রীটির একটি বছর নষ্ট হয়েছে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বেলায়ও তা-ই ঘটবে। ছাত্র বা ছাত্রীটি পরের বছর পরীক্ষা দেবে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই পর পর দুই বছর ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিতে পড়ার সুযোগ তো আছেই।


এ ছাড়া যাঁরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বে থাকবেন, তাঁরা চাইলেই একটি পরীক্ষার বদলে দুটি পরীক্ষাও নিতে পারবেন। যেখানে ৩০টি থেকে বেশি ভর্তি পরীক্ষা হতো সেখানে দুটি পরীক্ষা নেওয়া এমন কিছু কঠিন ব্যাপার নয়।


প্রশ্ন : ‘অভিজাত’ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি তাদের আভিজাত্য বজায় রেখে এই ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে?


উত্তর : অবশ্যই পারবে। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি নির্দেশিকার সব নিয়মকানুন মেনে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করতে পারবে। তারা শুধু ভর্তি পরীক্ষার নম্বরটি ব্যবহার করবে, অন্য সব কিছু তারা আগের মতোই মেনে চলবে।


প্রশ্ন : সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা যদি একটি মিনি এইচএসসি পরীক্ষাই হবে তাহলে সরাসরি এইচএসসি পরীক্ষার ফল ব্যবহার করে ভর্তি করা হয় না কেন?


উত্তর : কারণ মনে করা হয় যে এইচএসসি পরীক্ষা এখনো যথেষ্ট মানসম্পন্ন হয়নি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আরো ভালোভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের যাচাই করা হয়।


মূল কারণ হচ্ছে, যেহেতু সব পরীক্ষায় গ্রেড দেওয়া হয়, তাই এই পরীক্ষার ফল দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা করা যায় না। সবাই যেহেতু গোল্ডেন ফাইভ পাচ্ছে—আমরা তাদের পার্থক্য করব কেমন করে?


এখানে আরেকটি বিষয় সবাইকে মনে করিয়ে দেয়া যায়। গ্রেড পদ্ধতিটি শুরু করা হয়েছিল, কারণ পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরটি কখনো সঠিক পরিমাপ নয়, কাছাকাছি নম্বর। এটি কারো জানার কথা নয়, শুধু গ্রেডটি জানার কথা। কিন্তু আমি একসময় জানতে পারলাম, ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন করার জন্য মূল নম্বরটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে একই গ্রেড পাওয়া একজন বৃত্তি পাচ্ছে অন্যজন পাচ্ছে না। কারণ একজনের নম্বর বেশি, অন্যজনের কম। যেহেতু এর মাঝে স্বচ্ছতা নেই তাই হাইকোর্ট থেকে সবাইকেই তার নম্বর জানার অধিকার দিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ এখন এই দেশে গ্রেড পদ্ধতি একটি রসিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। মজার কথা হলো, এই রসিকতাটুকু কেউ এখনো ধরতে পারছেন বলে মনে হয় না!


ওপরের প্রশ্নগুলো ছাড়াও আরো অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। যাঁরা এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাটি পরিচালনা করবেন তাঁরা সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর আরো ভালোভাবে দিতে পারবেন। আমরা এখনো জানি না, সে রকম সমস্যাও হঠাৎ করে চলে আসতে পারে, আমি নিশ্চিত তার সমাধানও বের হয়ে যাবে। একটি সমস্যার সমাধান যে মাত্র একটি, তাও তো নয়। অনেক ভিন্ন ভিন্ন সমাধান হতে পারে।


পুরো জাতির সাথে আমিও এই অতি চমৎকার উদ্যোগটির শুরুটি দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে আছি।


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com